মহান আল্লাহ, ফেরেশতা, নবী-রাসুল, আসমানি কিতাব এবং শেষ দিবসের প্রতি একজন মুমিনের দৃঢ় বিশ্বাস রাখার পাশাপাশি জীবন চলার পথে বেশ কিছু বিষয় ও বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা মুমিন বান্দাকে অর্জন করে নিতে হয়। তবেই একজন সাধারণ মুমিন প্রকৃত ঈমানদার ও আল্লাহর প্রিয় হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করতে পারে। হাদিসের আলোকে নিম্নে আল্লাহর প্রিয় মুমিনের ১০টি বৈশিষ্ট্য তুলে ধরা হলো।
পারস্পরিক আন্তরিকতা ও হৃদ্যতা
শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য পরস্পর ভালোবাসা ও অন্তরঙ্গতার সম্পর্ক তৈরি করা মুমিনের অনন্য বৈশিষ্ট্য। নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘মুমিন সবার আপন হয়, অন্তরঙ্গ হয়। যে অন্তরঙ্গ হয় না এবং যার সঙ্গে অন্তরঙ্গ হওয়া যায় না, তার মাঝে কোনো কল্যাণ নেই।’ (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ৯১৯৮)
সৌজন্যমূলক আচরণ
মানুষ সামাজিক জীব। সমাজে নানা রকম মানুষের সঙ্গে চলতে হয়। মানুষের সঙ্গে কেমন আচরণ হবে? এক হাদিসে এসেছে, ‘যে মুসলিম মানুষের সঙ্গে মেলামেশা করে এবং তাদের দেওয়া যন্ত্রণায় ধৈর্য ধারণ করে সে এমন মুসলিমের চেয়ে উত্তম যে মানুষের সঙ্গে মেলামেশাও করে না এবং তাদের দেওয়া যন্ত্রণায় ধৈর্যও ধরে না।’ (তিরমিজি, হাদিস : ২৫০৭)
মুমিনের মানসিক শক্তি
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘শক্তিধর ঈমানদার দুর্বল ঈমানদারের তুলনায় আল্লাহর কাছে উত্তম ও অতীব পছন্দনীয়। তবে প্রত্যেকের মধ্যেই কল্যাণ নিহিত আছে, যাতে তোমার উপকার রয়েছে তা অর্জনে তুমি আগ্রহী হও এবং আল্লাহর কাছে সাহায্য কামনা করো। তুমি অক্ষম হয়ে যেয়ো না…।’ (মুসলিম, হাদিস : ৬৬৬৭)
মুমিন সহজ-সরল
এক হাদিসে আল্লাহর রাসুল (সা.) মুমিনের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য এভাবে তুলে ধরেছেন, ‘মুমিন ব্যক্তি চিন্তাশীল, গম্ভীর ও ভদ্র হয়ে থাকে। আর পাপিষ্ঠ ব্যক্তি প্রতারক, ধোঁকাবাজ, কৃপণ, নীচ ও অসভ্য হয়ে থাকে।’ (তিরমিজি, হাদিস : ১৯৬৪)
মুমিনের দাম্পত্য জীবন
স্বামী-স্ত্রীর পরস্পর আন্তরিকতা ও ভালোবাসা আল্লাহর দেওয়া এক অপূর্ব নিয়ামত। তাই কোনো মুমিন দম্পতি একে অপরের প্রতি ঘৃণার আচরণ করতে পারে না; বরং কারো ভুল হলে পরস্পর সমাধানে এগিয়ে আসে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহর রাসুল (সা.) এক হাদিসে বলেছেন, ‘কোনো মুমিন পুরুষ কোনো মুমিন নারীর প্রতি বিদ্বেষ-ঘৃণা পোষণ করবে না; কেননা তার কোনো চরিত্র-অভ্যাসকে অপছন্দ করলে তার অন্য কোনো চরিত্র-অভ্যাস সে পছন্দ করবে।’ (মুসলিম, হাদিস : ৩৫৪০)
মুমিনের ধৈর্য ও কৃতজ্ঞতা
পৃথিবীর জীবনে সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনা সবার জীবনেই আসে। কিন্তু এই দুঃখ-সুখের মাধ্যমেও যে আল্লাহর নৈকট্য ও সন্তুষ্টি অর্জন করা সম্ভব। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘মুমিনের অবস্থা বিস্ময়কর। সব কাজই তার জন্য কল্যাণকর। মুমিন ছাড়া অন্য কেউ এ বৈশিষ্ট্য লাভ করতে পারে না। তারা সুখ-শান্তি লাভ করলে শোকর গুজার করে আর অসচ্ছলতা বা দুঃখ-মুসিবতে আক্রান্ত হলে ধৈর্য ধারণ করে, প্রত্যেকটাই তার জন্য কল্যাণকর।’ (মুসলিম, হাদিস : ৭৩৯০)
মুমিনের কোরআন তিলাওয়াত
নবী (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কোরআন তিলাওয়াত করে, তার দৃষ্টান্ত এমন লেবুর মতো, যা সুস্বাদু ও সুগন্ধযুক্ত। আর যে ব্যক্তি (মুমিন) কোরআন পাঠ করে না, তার দৃষ্টান্ত এমন খেজুরের মতো, যা সুগন্ধহীন কিন্তু খেতে সুস্বাদু। আর এমন পাপী ব্যক্তি যে কোরআন পাঠ করে, তার দৃষ্টান্ত হচ্ছে রায়হান জাতীয় লতার মতো, যার সুগন্ধ আছে কিন্তু খেতে বিস্বাদ। আর যে পাপী কোরআন একেবারেই পাঠ করে না, তার দৃষ্টান্ত হচ্ছে ওই মাকাল ফলের মতো, যা খেতেও বিস্বাদ এবং যার কোনো সুগন্ধও নেই।’ (বুখারি, হাদিস : ৫০২০)
মুমিন অন্যায়ের প্রতিবাদ করে
মুমিনরা কখনো অন্যায়ের কাছে মাথা নত করে না। মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ যখন কোনো অন্যায় হতে দেখে, সে যেন সম্ভব হলে তা হাত দ্বারা রুখে দেয়। আর এটা সম্ভব না হলে প্রতিবাদী ভাষা দিয়ে তা প্রতিহত করে। আর তা-ও না পারলে সে যেন ওই অপকর্মকে হৃদয় দ্বারা বন্ধ করার পরিকল্পনা করে (মনে মনে ঘৃণা করে), এটি দুর্বল ঈমানের পরিচায়ক।’ (তিরমিজি, হাদিস : ২১৭২)
মুমিন যা ইচ্ছা তা-ই করে না
আল্লাহর প্রিয় মুমিনের গুরুত্বপূর্ণ একটি বৈশিষ্ট্য হলো তারা দুনিয়াকে আপন মনে করে না; বরং সামান্য সময়ের অবস্থানই মনে করে। হাদিস শরিফে বর্ণিত হয়েছে, ‘দুনিয়া মুমিনের কারাগার আর কাফিরের জান্নাত।’ (মুসলিম, হাদিস : ২৯৫৬)
মুমিন আল্লাহর সাক্ষাৎ পেতে উদগ্রীব থাকে
রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর সাক্ষাৎ পছন্দ করে, আল্লাহও তার সাক্ষাৎ পছন্দ করেন। আর যে আল্লাহর সাক্ষাৎ অপছন্দ করে, আল্লাহও তার সাক্ষাৎ অপছন্দ করেন। এ কথা শুনে আমি জিজ্ঞাসা করলাম, হে আল্লাহর নবী! মৃত্যুকে অপছন্দের কথা বলছেন? আমরা প্রত্যেকেই মৃত্যুকে অপছন্দ করি।
রাসুল (সা.) বললেন, সেটা নয়, বরং (মৃত্যুর সময়) যখন মুমিনকে আল্লাহর রহমত, সন্তুষ্টি ও জান্নাতের খোশখবর দেওয়া হয় তখন সে আল্লাহর সাক্ষাৎ পছন্দ করে, আল্লাহও তার সাক্ষাৎ পছন্দ করেন। আর কাফিরকে যখন (মৃত্যুর সময়) আল্লাহর আজাব ও গজবের সুখবর দেওয়া হয় তখন সে আল্লাহর সাক্ষাৎ অপছন্দ করে। আল্লাহও তার সাক্ষাৎ অপছন্দ করেন।’ (মুসলিম, হাদিস : ২৬৮৫)
সূত্র: কালের কণ্ঠ