যুক্তরাষ্ট্রের ভার্মন্টে শনিবার তিন ফিলিস্তিনি ছাত্রের গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনাকে ‘ ঘৃণা-বিদ্বেষমূলক হামলা’ বর্ণনা করে তাদের পরিবার পুলিশকে তদন্ত করার আহ্বান জানিয়েছে।
বার্লিংটন পুলিশ জানিয়েছে, ইউনিভার্সিটি অফ ভার্মন্ট ক্যাম্পাসের কাছে হিশাম আওয়ারতানি, তাহসিন আহমেদ এবং কিন্নান আবদালহামিদকে লক্ষ্য করে এক ব্যক্তি গুলি ছোড়েন।
কর্মকর্তারা এর সম্ভাব্য কারণ বের করতে তদন্ত করছে। তারা জানিয়েছে, যে ওই তিন ছাত্র হামলার সময়, কেফিয়েহ পরা ছিলেন -যা সাদাকালো ডিজাইনের আরবদের ঐতিহ্যবাহী স্কার্ফ। আক্রমণের সময় হামলাকারী আরবি ভাষায় কথা বলছিলেন বলেও জানায় পুলিশ।
সন্দেহভাজন ওই ব্যক্তিকে এখনও ধরতে পারেনি পুলিশ। তার খোঁজ চলছে।
সিবিএস নিউজ অনুসারে, সন্দেহভাজন ব্যক্তি পায়ে হেঁটে পালিয়ে গেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বার্লিংটনের পুলিশ প্রধান জন মুরা বলেছেন, নিহত দুইজনের অবস্থা স্থিতিশীল রয়েছে; তৃতীয় জন বেশ গুরুতর আহত হয়েছেন।
পরিবারের সদস্যদের মতে, নিহত তিনজনই রামাল্লা ফ্রেন্ডস স্কুলে পড়তেন। যেটা কিনা রামাল্লার একটি কোয়েকার পরিচালিত বেসরকারি অলাভজনক স্কুল।
হ্যাভারফোর্ড কলেজের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে গুলিবিদ্ধ ছাত্রদের মধ্যে একজন মি. আবদালহামিদ, তাদের ছাত্র। অন্য দুজন হিশাম আওয়ারতানি এবং তাহসিন আহমেদ ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, যারা কানেকটিকাটের ট্রিনিটি কলেজে পড়তেন।
এদিকে ফিলিস্তিনপন্থী অলাভজনক সংস্থা মিডল ইস্ট আন্ডারস্ট্যান্ডিং-এর মাধ্যমে তিন ভুক্তভোগী পরিবারের পক্ষ থেকে একটি বিবৃতি প্রকাশ করেছে রয়টার্স।
বিবৃতিতে পরিবার জানায়: “আমরা আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে বলেছি তারা যেন একে ঘৃণামূলক অপরাধ হিসাবে বিবেচনা করে পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত করে।”
“হামলাকারীকে বিচারের আওতায় আনা না হওয়া পর্যন্ত আমরা স্বস্তি পাব না।”
গত ৭ই অক্টোবর থেকে ইসরায়েল-হামাস সংঘাত শুরু হওয়ার পর থেকে হিংসাত্মক হামলা এবং অনলাইন হয়রানিসহ ইসলামোফোবিক এবং ইহুদি-বিদ্বেষের ঘটনা ক্রমেই বাড়ছে।
এমন পরিস্থিতির মধ্যেই এই গোলাগুলির ঘটনা ঘটল।
ভার্মন্টের সিনেটর এবং সাবেক ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট প্রার্থী বার্নি স্যান্ডার্স সর্বশেষ সহিংসতার ব্যাপারে নিন্দা জানিয়ে পোস্ট করেছেন।
এক্স বা সাবেক টুইটার বার্তায় মি. স্যান্ডার্স বলেছেন: “এই ঘটনা মর্মান্তিক এবং এ নিয়ে আমি ভীষণ বিচলিত যে এখানে বার্লিংটন, ভার্মন্টে তিনজন তরুণ ফিলিস্তিনিকে গুলি করা হয়েছে। এখানে বা কোথাও ঘৃণার কোনো স্থান নেই।”
যুক্তরাজ্যে ফিলিস্তিনি মিশনের প্রধান রাষ্ট্রদূত হুসাম জোমলট সোশ্যাল মিডিয়ায় তিনজনের একটি ছবি পোস্ট করেছেন এবং যোগ করেছেন: “ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ঘৃণামূলক অপরাধ বন্ধ করতে হবে।”
এদিক ইসরায়েল এবং হামাসের মধ্যে অস্থায়ী যুদ্ধবিরতি চুক্তি চলমান সংঘাতে নিঃশ্বাস ফেলার জায়গা দিয়েছে। কিন্তু এর মাধ্যমে জিম্মি সংকটের অবসান ঘটবে কিনা সেটা এখনও স্পষ্ট করে বলা যাচ্ছে না।
তবে এই চুক্তির আওতায় সামনের দিনগুলোয় আরও বেশ কয়েকজন বৃদ্ধা, নারী ও শিশুদের মুক্তি দেয়ার কথা রয়েছে।
এখন পর্যন্ত ৩৯ জন ফিলিস্তিনি ইসরায়েলের বিভিন্ন কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছে। এর বিনিময়ে হামাসের হাতে জিম্মি ১৭ জনকেও ছেড়ে দেয়া হয়। যাদের মধ্যে ১৪ জনই ইসরায়েলি।
এর মানে হল হামাসের হাতে এখনও দেড়শ জনের বেশি জিম্মি হয়ে আছে। তাদের আটকে রেখে হামাস সুবিধা আদায় করবে বলে মনে করা হচ্ছে।
অক্টোবরে ইসরায়েলে হামলা চালানোর পর ২৪০ জনের মতো মানুষকে জিম্মি করে করে হামাস। তবে ধারণা করা হচ্ছে, এখন এই মানুষগুলো তাদের জন্য বড় ধরনের বোঝা হয়ে গিয়েছে।
কেননা এই জিম্মিদের ক্রমাগত দেখাশোনা করতে হচ্ছে, পর্যবেক্ষণ করতে হচ্ছে এবং প্রয়োজনে এক স্থান থেকে আরেক স্থানে সরাতে হচ্ছে।
যদি তাদের মধ্যে কেউ কেউ বৃদ্ধ হয়, অসুস্থ হয় বা বিশেষ চিকিৎসার প্রয়োজন হয়, তবে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে ওঠে।
চলমান চারদিনের এই যুদ্ধবিরতির তৃতীয় দিন চলছে আজ। হামাস বলেছে যে তারা ইসরায়েলের সাথে যুদ্ধবিরতি বাড়ানো এবং জিম্মিদের মুক্তির সংখ্যা বাড়াতে চাইছে।
এদিকে ছয় সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে চলা যুদ্ধের কারণে তীব্র জ্বালানি, খাদ্য ও ওষুধের সংকটে রয়েছে গাজাবাসী। সেখানকার মানুষদের প্রয়োজনীয় সরবরাহ পৌঁছে দিতে যুদ্ধবিরতি বাড়ানো প্রয়োজন বলে মনে করা হচ্ছে।
গত ৭ই অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলায় ১২০০ জন নিহত হয়েছেন। সে সময় প্রায় ২৪০ জনকে জিম্মি করে সশস্ত্র গোষ্ঠীটি।
এরপর থেকে, গাজায় একটানা হামলা চালাতে থাকে ইসরায়েল। হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, ইসরায়েলের পাল্টা অভিযানে এ পর্য সাড়ে ১৪ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন।