খাবার, পানি ও জরুরি ওষুধ নিয়ে মিসর থেকে গাজায় ২০টি ট্রাক প্রবেশের পর সেগুলো এখন খান ইউনিস শহরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ট্রাকগুলো খাবারের পাশাপাশি চিকিৎসা সরঞ্জাম থাকলেও জ্বালানি সরবরাহ করা হচ্ছে না।
বহু আলোচনার পর শনিবার রাফাহ ক্রসিং খুলে দেয়া হয়। তবে ২০টি ট্রাক প্রবেশের অনুমতি দিয়েছিল ইসরায়েল।
এসব ট্রাক প্রবেশের পরেই আবার ক্রসিং বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
ট্রাক চলাচল করার জন্য ক্রসিং খুলে দেয়ার সাথে সাথে দুই প্রান্তের মানুষকেই উল্লাস করতে দেখা যায়। গাজার ভেতরে মানবিক সহায়তা পৌঁছানোর জন্য এই ক্রসিং হয়ে ত্রাণ প্রবেশ করা জরুরি ছিল।
জাতিসংঘ বলছে, এই ট্রাকগুলোতে পৌঁছানো মানবিক সহায়তার পরিমাণ গাজার প্রয়োজনের অনুপাতে খুবই সামান্য বা ‘সমুদ্রের এক ফোঁটা জল’ বলে তারা বর্ণনা করেছে।
রাফাহ ক্রসিং থেকে যেসব সাহায্য গাজায় পৌঁছেছে, সেগুলো জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে বিতরণ করা হবে বলে ঘটনাস্থল থেকে জানাচ্ছেন বিবিসির সংবাদদাতা রুশদি আবু আলুফ।
মিশর সীমান্তের রাফাহ ক্রসিং থেকে সাহায্য নিয়ে আসা লরির বহর গাজার দক্ষিণাঞ্চলের খান ইউনিস শহরের দিকে যাচ্ছে বলে তিনি দেখতে পাচ্ছেন।
গাজার স্থানীয় বেলা সাড়ে ১০টার (বাংলাদেশ সময় দুপুর দেড়টা) নাগাদ ট্রাকগুলো রাফাহ ক্রসিং অতিক্রম করতে শুরু করে।
মিশর থেকে সাহায্য নিয়ে ট্রাকগুলো রাফাহ ক্রসিং পার হওয়ার পর সেগুলো আবার ছোট আকারের ফিলিস্তিনি ট্রাকে তোলা হয়েছে। এরপর সেসব ট্রাকে করে গাজার খান ইউনিস শহরের দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
এই কনভয়ের সামনে জাতিসংঘের গাড়ি রয়েছে, যারা ট্রাকগুলোকে পথ দেখিয়ে শহরের দক্ষিণের একটি গুদামে নিয়ে যাবে।
জাতিসংঘের কর্মীরাই সিদ্ধান্ত নেবে এসব সহায়তা কোথায় যাবে বা কাদের দেয়া হবে। ধারণা করা হচ্ছে, জাতিসংঘ পরিচালিত স্কুলগুলোয় বেশি সহায়তা পাঠানো হবে, যেখানে হাজার হাজার ফিলিস্তিনি আশ্রয় নিয়েছে। ওই এলাকার হাসপাতালগুলোতেও সাহায্য যাবে।
এর আগে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, গাজার প্রতিটি হাসপাতালে জরুরি চিকিৎসা সরঞ্জাম পৌঁছানোর জন্য তারা মিশর ও ফিলিস্তিনি রেড ক্রিসেন্ট কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করছে।
যেসব ট্রাক রাফাহ ক্রসিং থেকে গাজায় যাচ্ছে, সেখানে এসব চিকিৎসা সহায়তা রয়েছে বলে জানিয়েছে ডব্লিউএইচও।
কফিনবাহী ট্রাক
গাজার ভেতরে প্রবেশ করতে যাওয়া এই বিশটি ট্রাকের মধ্যে একটি ট্রাক বেশ কিছু কফিন বহন করছে বলে জানিয়েছেন গাজার বিবিসি সংবাদদাতা রুশদি আবু আলুফ।
ইসরায়েলে হামাসের হামলার পর চলা ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর অভিযানে গত দুই সপ্তাহে গাজা উপত্যকায় চার হাজার ১৩৭ জন মারা গেছে বলে বলছে ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
এই সময়ের মধ্যে ইসরায়েলি বাহিনী গাজা অবরুদ্ধ করে রাখে। জ্বালানি সরবরাহ বন্ধ করে দেয়ায় গাজার হাসপাতালগুলো আহতদের চিকিৎসা চালিয়ে যাওয়া ও মরদেহ সংরক্ষণ করার ক্ষেত্রে ব্যাপক ভোগান্তির মধ্যে পড়ে।
কফিনে পরিপূর্ণ ট্রাকটি সেসব মরদেহ সংরক্ষণের জন্য গাজায় পাঠানো হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
রাফাহ ক্রসিং কী এবং কোথায় অবস্থিত?
রাফাহ- মিশরের সিনাই মরুভূমি সংলগ্ন একটি সীমান্ত পথ যেটি গাজার সর্ব দক্ষিণে অবস্থিত। গাজা থেকে বের হবার আরও দুটি সীমান্তপথ রয়েছে, যেগুলো পুরোপুরি ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণে এবং দুটোই এখন বন্ধ।
ফলে মিশরের এই সীমান্ত পথটিই এখন গাজার উদ্বাস্তুদের একমাত্র ভরসা। তবে ইসরায়েল-গাজা যুদ্ধ শুরু হবার পর সীমান্তটি বন্ধ করে দিয়েছে মিশর।
ফাহ সীমান্তটিই এখন বেসামরিক নাগরিকদের জন্য গাজা ত্যাগ করার একমাত্র স্থলপথ। গাজায় মানবিক সহায়তা পাঠানোর ক্ষেত্রেও রাফাহ এখন গুরুত্বপূর্ণ।
পশ্চিমা দেশগুলো গাজায় আটকে পড়া বিদেশি নাগরিক এবং মানবিক সহায়তার কথা বিবেচনা করে রাফাহ সীমান্তের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার চেষ্টায় যুক্ত হয়েছে।
গত সপ্তাহে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের একজন মুখপাত্রের পক্ষ থেকে গাজায় আটকে পড়া যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের রাফাহ অভিমুখে যেতে বলা হয়েছে। কারণ সীমান্তটি “খুব কম সময়ের নোটিশ” খোলা হতে পারে, যেটি আবার অল্প সময়ের মধ্যেই বন্ধ করে দেয়া হবে বলেও জানানো হয়েছে।
অল্প সময়ের জন্য যুদ্ধবিরতি দিয়ে সীমান্তটি খুলে দেয়া হতে পারে- এমন খবর ছড়িয়ে পড়লে গত সোমবার রাফাহ সীমান্তে বিপুল সংখ্যক গাজাবাসী এসে জড়ো হন।
রাফাহ সীমান্ত বন্ধ কেন?
রাফাহ সীমান্ত বন্ধ রাখার একটি কারণ হলো- সীমান্তটি দিয়ে যেন হামাসের কোনো সদস্য গাজা ছেড়ে যেতে না পারে এবং বাইরে থেকে অস্ত্র ও গোলাবারুদ আনতে না পারে, ইসরায়েল সেটি নিশ্চিত করতে চায়।
অন্যদিকে, রাফাহ থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে লাখ লাখ উদ্বাস্তু সীমান্ত পার হবার অপেক্ষায় রয়েছে। ফলে দরজা খুলে দিলেই উদ্বাস্তুদের স্রোতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হতে পারে- এমন আশঙ্কায় সীমানা খুলছে না মিশর।
তবে বিদেশি পাসপোর্টধারী এবং মানবিক সহায়তার জন্য পুনরায় সীমান্তটি খোলার বিষয়ে মিশরের সাথে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য সহ বেশ কয়েকটি দেশ।
গাজায় আটকে পড়া বিদেশি নাগরিকদেরকেও বলা হয়েছে রাফাহ সীমান্তে অবস্থান নিতে, যাতে সীমানা খোলামাত্রই তাদেরকে উদ্ধার করা যায়।
ফিলিস্তিনিরা ইচ্ছা করলেই রাফাহ সীমান্ত পার হতে পারেন না। এজন্য তাদেরকে দুই থেকে চার সপ্তাহ আগে স্থানীয় ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে আবেদন করতে হয়, যেটি ফিলিস্তিন বা মিশর সরকার যে কোনো অজুহাতে প্রত্যাখ্যান করে দিতে পারে।
জাতিসংঘের হিসেবে, ২০২৩ সালের অগাস্টে ১৯ হাজার ৬০৮ জনকে ফিলিস্তিনি নাগরিককে রাফাহ সীমান্ত দিয়ে মিশরে ঢোকার অনুমতি দেয়া হয়েছে। আর প্রবেশের অনুমতি চেয়ে প্রত্যাখ্যাত হয়েছেন ৩১৪ জন।