১৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। বিভিন্ন সূত্রে জানা যায় যে, দুই শত সত্তর সালের চৌদ্দই ফেব্রুয়ারি। তখন রোমের সম্রাট ছিলেন কর্ডিয়াস। সেই সময় ভ্যালেন্টাইন নামে একজন সাধু, তরুণ প্রেমিকদের গোপন পরিণয়-মন্ত্রে দীক্ষা দিত। এ অপরাধে সম্রাট কর্ডিয়াস সাধু ভ্যালেন্টাইনের শিরশ্ছেদ করেন। তার এ ভ্যালেন্টাইন নাম থেকেই এ দিনটির নামকরণ করা হয়।
‘ভ্যালেন্টাইন ডে’ যা আজকের ‘বিশ্ব ভালোবাসা দিবস’। বাংলাদেশে এ দিবসটি পালন করা শুরু হয় ১৯৯৯ সালে। বাংলাদেশে হলদে কিছু মিডিয়া এর আমদানি করত; অপরিণামদর্শী হলদে মিডিয়া কর্মীরা এর ব্যাপক কভারেজ দেয়।
এখন বিশ্বব্যাপী এ দিবসটি ভালোবাসা দিবস হিসেবে উদযাপিত হচ্ছে। এ দিবস এলেই দেখা যায়, দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন স্তরের শিক্ষার্থীরা, বিশেষ করে যুবক-যুবতীরা প্রেমের জোয়ারে বেসামাল হয়ে ওঠে।
নিজেদের রূপ-সৌন্দর্য উজাড় করে প্রদর্শনের জন্য রাস্তায় নেমে আসে। শুধু তাই নয়, অঙ্কন শিল্পীরা উল্কি আঁকার জন্য পসরা সাজিয়ে বসে থাকেন রাস্তার পাশে।
তাদের সামনে তরুণীরা পিঠ, বাহু আর হস্তদ্বয় মেলে ধরে পছন্দের উল্কিটি এঁকে দেয়ার জন্য। তার পর রাত পর্যন্ত নীরবে-নিভৃতে প্রেমিক-প্রেমিকার খোশগল্প, অসামাজিকতা, অনৈতিকতা, অশ্লীলতা, বেহায়াপনা, নগ্নতা, সবশেষে কখনও কখনও অবৈধ শারীরিক সম্পর্ক ও ধর্ষণ। এটিই হলো বিশ্ব ভালোবাসা দিবসের বাস্তব চিত্র! তা হলে বিশ্ব ভালোবাসা দিবসের মর্যাদা রইল কোথায়?
ভালোবাসা শব্দটি পবিত্র। ভালোবাসা এমন এক অনুভূতি, যা মানুষের মনের গহিনে প্রবাহমান থাকে। ভালোবাসা সব মাখলুকাতের মাঝে রয়েছে। পরস্পরের মধ্যে প্রীতি স্থাপনের জন্য আল্লাহ প্রতিটি প্রাণীর মধ্যেই ভালোবাসা তৈরি করে দিয়েছেন।
ভালোবাসার কারণেই শ্রদ্ধাময়ী মা গর্ভে সন্তান ধারণ করেন। পিতা কঠোর পরিশ্রম করে সন্তানকে গড়ে তোলার চেষ্টা করেন। ভালোবাসার কারণেই বনজঙ্গলের হিংস্র প্রাণীগুলোও স্বজাতিদের নিয়ে একসঙ্গে বসবাস করে। ভালোবাসা আল্লাহর মহান দান। সৃষ্টি জগতের প্রতি ভালোবাসার টান হওয়াটই স্বাভাবিক। তবে ভালোবাসার জন্য কোনো ক্ষণ, দিবস-রজনীর প্রয়োজন নেই। নির্দিষ্ট নেই বা প্রয়োজনও হয় না
ভালোবাসার স্রোত সবসময় বহমান। ভালোবাসার মধ্যে যখন দুনিয়াবি কোনো চাওয়া-পাওয়া থাকে না, তখন সে ভালোবাসার মাধ্যমে মানবজীবনের চূড়ান্ত লক্ষ্য অর্থাৎ আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করা যায়।
হজরত মুয়াজ ইবনে জাবাল (রা.) থেকে বর্ণিত– ‘আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, যারা আল্লাহর সন্তুষ্টির আশায় পরস্পরকে ভালোবাসে, আমার রেজামন্দির আশায় পরস্পর বৈঠকে মিলিত হয়, আমার সন্তুষ্টির কামনায় পরস্পর দেখা-সাক্ষাৎ করে এবং আমার ভালোবাসার জন্যই নিজেদের ধন-সম্পদ ব্যয় করে, তাদের ভালোবাসা আমার জন্য ওয়াজিব হয়ে যায়। (মুসলিম)।
হজরত আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত-‘রাসুলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেছেন– আল্লাহতায়ালার বান্দাগণের মধ্যে এমন কিছু লোক রয়েছে, যারা নবীও নয়, আর শহীদও নয়। কিন্তু বিচার দিবসে তাদের মর্যাদা দেখে নবী ও শহীদগণ তাদের ওপর ঈর্ষা করবেন। জিজ্ঞেস করা হলো- হে আল্লাহর রাসুল! তারা কারা? উত্তরে তিনি বললেন– তারা হচ্ছে সেসব লোক, যারা শুধু আল্লাহর মহব্বতে একে অপরকে মহব্বত করেছে। তাদের মধ্যে নেই কোনো রক্তের সম্পর্ক, নেই কোনো বংশের সম্পর্ক। তাদের মুখমণ্ডল হবে জ্যোতির্ময় এবং তারা নূরের মিম্বরের ওপর অবস্থান করবে। কিয়ামতের বিভীষিকাময় অবস্থায় মানুষ যখন ভীত-সন্ত্রস্ত থাকবে, তখন তারা ভীত হবে না। আর মানুষ যখন দুঃখে থাকবে, তখন তাদের কোনো দুঃখ থাকবে না। (তিরমিজি)।
ভালোবাসা দিবসের নামে ইসলামবহির্ভূত নির্লজ্জ দিবস উদযাপন ইসলামে নিষেধ। বিবাহের আগে তরুণ-তরুণীর পরস্পর দেখা-সাক্ষাৎ, কথাবার্তা-মেলামেশা, প্রেম-ভালোবাসা ইসলাম ধর্মে সম্পূর্ণভাবে হারাম। কোরআন-হাদিসের দৃষ্টিতে ভালোবাসা কেবল বিয়ের পরেই।
বিয়ের পর স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে যে ভালোবাসা সৃষ্টি হয়, এর মধ্যে অনেক সওয়াবও কল্যাণ রয়েছে।
অশ্লীলতা-নোংরামিতে ভরপুর বিশ্ব ভালোবাসা দিবস উদযাপনের নামে এমন বেহায়াপনা কর্মকাণ্ড কখনও ইসলাম সমর্থন করে না। শরীয় গর্হিত অশ্লীল বিনোদন উদযাপন করা ইসলামে মহাপাপ। কাজেই এসব অপসংস্কৃতি থেকে আমাদের দূরে থাকতে হবে।
লেখক : সাংবাদিক, কলামিস্ট ও প্রিন্সিপাল, শ্রীমঙ্গল আইডিয়াল স্কুল, মৌলভীবাজার।
সূত্র: যুগান্তর