অটোমান বা উসমানীয় সাম্রাজ্যের প্রভাবশালী শাসক এরতুরুলকে নিয়ে তুরস্কের ধারাবাহিক নাটক বাংলাদেশ, পাকিস্তানসহ বিভিন্ন দেশে নিজস্ব ভাষায় অনূদিত হয়ে প্রচার হয়েছে। এই টিভি সিরিজ বিভিন্ন দেশে এতোটাই জনপ্রিয় হয়েছে যে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্বের মুখেও ফুটেছে এর প্রশংসা।
এরতুরুল সিরিজের ভক্তদের মধ্যে পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান অন্যতম। প্রধানমন্ত্রী পদে থাকাকালীন তিনি ওই ধারাবাহিকে দেখানো ‘ইসলামী সভ্যতার’ প্রশংসা করেছিলেন।
মি. খান বলেছেন, “এরতুরুলের মতো বহুল প্রচারিত সিরিজে কোন অশ্লীলতা নেই। তরুণরা টিভির সামনে বসে ইসলামী নৈতিকতা ও মূল্যবোধ শিখতে পারবে।”
অটোমান ঐতিহ্য অনুসারে এরতুরুল ছিলেন অটোমান সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা প্রথম উসমানের পিতা। এর বাইরে তার সম্পর্কে বাস্তব যেসব তথ্য পাওয়া গেছে তা নগণ্য।
এই সাম্রাজ্য বহু শতাব্দী ধরে বিশ্বের একটি বড় অংশ শাসন করেছে। কিন্তু তাদের সূচনা কীভাবে হয়েছিল সে তথ্য ইতিহাসের পাতা থেকে অনেকটাই ম্লান হয়ে গেছে।
উসমানীয় ঐতিহ্য ছাড়াও, ইতিহাসের বইগুলোতে ওই সময়ের দুটি সুনির্দিষ্ট নিদর্শন পাওয়া গেছে। যার মধ্যে রয়েছে একটি মুদ্রা এবং বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের একজন ইতিহাসবিদের লেখা একটি নিবন্ধ।
সেই সাথে পাওয়া গেছে উসমানের একটি স্বপ্নের ব্যাখ্যা। যা এই নিবন্ধের শেষ অংশে উল্লেখ করা হয়েছে।
যেসব নিশ্চিত তথ্য পাওয়া গেছে তার মধ্যে একটি হল, উসমান বর্তমানে তুরস্কের আনাতোলিয়ায় বসবাসকারী একটি তুর্কি যাযাবর উপজাতির সদস্য ছিলেন।
তার সরকার ছিল ছোট আনাতোলিয়ান সরকারগুলোর মধ্যে একটি, যাদের ক্ষমতায় খুব একটা পার্থক্য ছিল না।
প্রশ্ন জাগে যে, উসমান বা তার পিতা এমন কী করেছিলেন যার কারণে এই পরিবারের শাসন একটি গোত্র থেকে ছোট রাজ্যে ছড়িয়ে পড়েছিল।
আনাতোলিয়ার একটি বড় সাম্রাজ্য তিনটি রাজ্যে ছড়িয়ে পড়ে এবং তারপর একটি খিলাফতে পরিণত হয়।
অটোমান সাম্রাজ্য ১৪শ শতকের প্রথম দিকে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এবং যার পতন ঘটে ২০ শতকে এসে। একই পরিবারের ৩৭ জন সুলতান সিংহাসনে বসেন।
একজন ইতিহাসবিদের মতে, একটি পরিবারের এত দীর্ঘ সময় নিরবচ্ছিন্ন শাসন জারি রাখা অলৌকিক ঘটনার মতো।
ইতিহাসবিদ ক্যারোলাইন ফিঙ্কেল তার ‘অটোমান’স ড্রিম: দ্য স্টোরি অফ দ্য অটোমান এমপায়ার’ বইতে লিখেছেন যে ‘অটোমানদের সাফল্যের কারণ যাই হোক না কেন, আনাতোলিয়ায় (বর্তমান তুরস্কের সীমান্ত ঘেঁষা অঞ্চল) তাদের সাফল্য ছিল।’
দুই শতাব্দী ধরে প্রতিবেশীদের সাথে তাদের বিরোধ তীব্র ছিল।
এরতুরুল সম্পর্কে অটোমান ঐতিহ্য
ইতিহাসবিদ স্ট্যানফোর্ড জে শ’ তার ‘হিস্ট্রি অব দ্য অটোমান এমপায়ার অ্যান্ড মডার্ন টার্কি’ বইতে এই ঐতিহ্যের কথা উল্লেখ করেছেন যে “ইতিহাসের ছাত্রদের জন্য অটোমান সাম্রাজ্যের উত্থানের ইতিহাস সবসময় একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ছিল,”
“তবে সেই সময়ের ইতিহাস সম্পর্কে জানার উৎস ছিল সীমিত। এছাড়া পরবর্তীকালে অটোমান ঐতিহ্য নিয়ে যেসব লেখালেখি হয়েছে সেগুলোর মধ্যে বৈপরীত্য থাকায় সম্পূর্ণ নিশ্চিতভাবে কিছু বলা কঠিন।’
এই বিখ্যাত ঐতিহ্যের বর্ণনা দিয়ে গিয়ে তিনি লিখেছেন, অটোমানদের পূর্বপুরুষ আমজাদ সালমান শাহ, যিনি ছিলেন সেই সময়কার কাই উপজাতির প্রধান। ১২শ শতকের শেষের দিকে উত্তর ইরানের একটি এলাকায় তারা বসতি স্থাপন করেছিলেন।
ঐতিহ্য অনুসারে, এই উপজাতি, অন্যান্য অনেক তুর্কি উপজাতির মতোই, মঙ্গলদের আক্রমণের মুখে দাসত্ব ও ধ্বংস থেকে বাঁচতে নতুন অঞ্চলে পালিয়ে যায়।
জে শ’- এর মতে, এটি বিশ্বাস করা হয় যে সালমান শাহ সিরিয়ায় প্রবেশের সময় ইউফ্রেটিস বা ফোরাত নদীতে ডুবে মারা যান। এরপর তার দুই ছেলেই ফিরে যান।
এরতুরুল যখন পশ্চিম দিকে তার যাত্রা শুরু করেন এবং আনাতোলিয়ান অঞ্চলে প্রবেশ করেন, সেখানকার সেলজুক শাসকরা তখন তাকে তার সাহায্যের বিনিময়ে আনাতোলিয়ার পশ্চিমাঞ্চলে জমি দেন।
জে শ’-এর বইতে লিপিবদ্ধ ঐতিহ্য অনুসারে, এরতুরুল ১২৮০ সালে মারা যান এবং উপজাতির নেতৃত্ব তার পুত্র উসমানের হাতে চলে যায়।
ফিঙ্কেল লিখেছেন যে, অটোমান ঐতিহ্য অনুসারে, এরতুরুল নামে একজন উপজাতি প্রধান (সর্দার) উত্তর-পশ্চিম আনাতোলিয়ায় এসে সেলজুক এবং বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের মধ্যবর্তী অঞ্চলে বসতি স্থাপন করেন।
এই ঐতিহ্য অনুসারে, সেলজুকের সুলতান সেখানকার সুগাতা নামক অঞ্চলে এরতুরুলকে কিছু জায়গা দান করেন। কিন্তু উসমানের সঙ্গে এরতুরুলের সম্পর্ক কী ছিল?
অজানা তারিখের একটি মুদ্রা
ইতিহাসবিদ ফিঙ্কেল লিখেছেন, এটি অটোমান আমলের একটি মাত্র সংগৃহীত মুদ্রা, এটা যদি সত্যি সেই সময়কার মুদ্রা হয়, তাহলে এটি প্রমাণ করে যে এরতুরুল প্রকৃতপক্ষে একজন ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্ব ছিলেন।
ওই মুদ্রায় লেখা আছে ‘এরতুরুলের ছেলে উসমানের জন্য জারিকৃত মুদ্রা’।
ফিঙ্কেল আরও লিখেছেন যে উসমানের নিজের নামে মুদ্রা জারি করা প্রমাণ করে যে তিনি এই সময়ে কেবল একজন উপজাতীয় প্রধান ছিলেন না।
বরং সেলজুক এবং মঙ্গল সাম্রাজ্যের ছায়ার বাইরেও তিনি নিজেকে আনাতোলিয়ায় একজন স্বাধীন আমির বা নেতা হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করতে এসেছিলেন।
ফিঙ্কেল লিখেছেন যে, ইতিহাসে অটোমানদের ব্যাপারে প্রথম উল্লেখ করা হয়েছে ১৩০০ সালের দিকে।
তৎকালীন এক বাইজেন্টাইন ইতিহাসবিদ লিখেছেন যে, ১৩০১ খ্রিস্টাব্দে বাইজেন্টাইন সেনাবাহিনী উসমান নামে এক ব্যক্তির সেনাবাহিনীর মুখোমুখি হয়।
বাফিয়াসের যুদ্ধ নামে পরিচিত এই যুদ্ধটি কনস্টান্টিনোপলের (ইস্তাম্বুল) কাছে সংঘটিত হয়েছিল এবং বাইজেন্টাইন সেনাবাহিনী খুব খারাপভাবে পরাজিত হয়েছিল।
কিন্তু অটোমানদের তখন বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের মতো শক্তিশালী হতে আরও সময়ের প্রয়োজন ছিল।
এবং যখন এমনটা ঘটে অর্থাৎ অটোমানরা প্রবল শক্তিতে আবির্ভূত হয়, তখন কথা ওঠে যে কীভাবে একটি নাম না জানা পরিবার হঠাৎ করে এতদূর এসে এতোটা ক্ষমতাধর হয়ে উঠলো।
ইতিহাসবিদরা বলেছেন যে অটোমানরা ভাগ্যবান যে তাদের অঞ্চলটি কনস্টান্টিনোপলের কাছাকাছি ছিল। যার কারণে কখনও কখনও সফল বিজয় পেলে বড় পুরস্কার পাওয়া সুনিশ্চিত ছিল।
উসমানের স্বপ্ন
ইতিহাসবিদ লেসলি পি. পিয়ার্স তার ‘দ্য ইম্পেরিয়াল হারেম: ওমেন অ্যান্ড সভেরিনটি অফ দ্য অটোমান’, বইয়ে লিখেছেন যে উসমানীয় সাম্রাজ্যের শুরুর দিকে যে গল্পটি সবচেয়ে বেশি শোনা গিয়েছিল, সেই গল্প অনুসারে, উসমান তার প্রাথমিক সাফল্যের পরে একটি স্বপ্ন দেখেছিলেন।
তিনি স্বপ্নে দেখেন, শেখ আদিবালী নামে এক দরবেশের বুক থেকে চাঁদ উঠছে এবং সেই চাঁদ তার বুকে প্রবেশ করছে।
সেইসাথে তিনি আরও দেখেন যে তার পেট থেকে একটি বিশাল গাছ বের হচ্ছে, যার ছায়া গোটা পৃথিবী জুড়ে পড়েছে।
এই গাছের ডালের নিচে ঝরনা প্রবাহিত হচ্ছে। সেখান থেকে মানুষ পানি পান করছে, সেই পানি দিয়ে ক্ষেতে সেচ দেওয়া হচ্ছে।
উসমান পরে শেখ আদিবালীর কাছে তার স্বপ্নের এই ব্যাখ্যা জানতে চাইলে তিনি বলেন যে ‘আল্লাহ উসমান ও তার বংশধরদেরকে বিশ্ব শাসন করার জন্য মনোনীত করেছেন।’
তিনি বলেন, যে চাঁদ তার বুক থেকে বের হয়ে উসমানের বুকে প্রবেশ করছে, এই চাঁদ হল তার (শেখ আদিবালীর) মেয়ে। পরে আদিবালীর ওই মেয়ের সাথে উসমানের বিয়ে হয়।
ইতিহাসবিদ ফিঙ্কেল-এর মতে – প্রথম দিকের উসমানীয় সাম্রাজ্যের শাসনভারে যে সুলতানরা ছিলেন তারা নিজেদের শাসনকালের তারিখ লিপিবদ্ধ করার চাইতে অন্যদের উপর তাদের শাসন করার অধিকার প্রমাণ করতে বেশি আগ্রহী ছিলেন।
তাদের সাম্রাজ্যের সূচনা হয়েছিল একটি স্বপ্নের মধ্যে দিয়ে যা উসমান একজন বয়স্ক দরবেশের বাড়িতে থাকাকালীন দেখেছিলেন।
তিনি আরও লিখেছেন, এই স্বপ্নের গল্পের পক্ষে বাস্তব প্রমাণ ইতিহাসেও পাওয়া গিয়েছে এবং তা হল উসমানীয় সাম্রাজ্যের প্রথম দিকের জমির নথি থেকে জানা যায় যে উসমানের সময়ে আদিবালী নামে একজন সম্ভ্রান্ত ব্যক্তি ছিলেন।
এমন কিছু সাক্ষ্যও পাওয়া যায় যে তার মেয়ে উসমানের দুই স্ত্রীর একজন ছিলেন।
এরতুরুলের আনাতোলিয়া
এরতুরুলের আনাতোলিয়া ছিল ১৩শ শতকের আনাতোলিয়া। ক্যারোলাইন ফিঙ্কেল-এর বর্ণনা মতে – আনাতোলিয়ার যেখানে এই তুর্কি উপজাতিরা এসেছিল, সেখানে বহু জাতি ও ধর্মের মানুষ বাস করত। এদের মধ্যে ইহুদি, আর্মেনীয়, কুর্দি, গ্রীক এবং আরবরাও ছিল।
এই অঞ্চলের পশ্চিমে ছিল খুবই দুর্বল বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্য (যা পুরানো দিনে আনাতোলিয়া থেকে সিরিয়া পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল) এবং পূর্বে সেলজুক ছিল, যারা নিজেদেরকে রোমান সেলজুক বলে অভিহিত করত।
১৩শ শতকের মাঝামাঝি সময়ে মঙ্গলদের কাছে পরাজয় সেলজুকদের দুর্বল করে দেয় এবং তাদের মঙ্গলদের প্রতি আনুগত্য প্রকাশে বাধ্য করে।
সে হিসেবে এই দুটি অঞ্চলে আগে দুটি শক্তিশালী সরকারের কর্তৃত্ব থাকলেও পরবর্তীতে তা অনেকটাই ফিকে হয়ে যায়। এতে সীমান্তের মাঝামাঝি এলাকাটি এক ধরণের অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে যায়।
তবে এই অঞ্চলটি যোদ্ধাদের একমাত্র আবাসস্থল ছিল না। দুঃসাহসিক মানুষ ছাড়াও, এমন লোকেরাও ছিলেন যাদের আর কোথাও যাওয়ার জায়গা ছিল না।
ফিঙ্কেল ‘সীমান্ত’ অঞ্চলের একটি চিত্র তুলে ধরেন যেখানে অটোমান সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।
তিনি বলেছেন – এ অঞ্চলটিতে যাযাবর, আধা-যাযাবর, ডাকাত, দুঃসাহসী সৈনিক, বিভিন্ন অঞ্চলের ক্রীতদাস, দরবেশ, সন্ন্যাসী, বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে বেড়ানো পুরোহিত বা ধর্ম প্রচারক, আশ্রয়প্রার্থী বাস্তুচ্যুত কৃষক, নগরবাসী, শান্তি ও পবিত্রতার সন্ধানে আসা মানুষ, নিরাপদ স্থান চাওয়া মুসলিম শিক্ষক ও ভীতিহীন পরিবেশ চাওয়া ব্যবসায়ী- সবাই এখানে বসবাস করতেন।
ফিঙ্কেল লিখেছেন যে জাতিগত বৈচিত্র্যপূর্ণ এই এলাকার অন্যতম বৈশিষ্ট্য ছিল মুসলিম দরবেশদের উপস্থিতি।
খ্রিস্টান পুরোহিতদের মতো তারা সব সময় এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় ভ্রমণ করতেন বা তাদের অনুসারীদের মধ্যে থাকতেন। তাদের জীবন এই সাম্রাজ্যের ঐতিহ্যের অংশ হয়ে ওঠে।
“ওই অঞ্চলে দরবেশদের দরজা ছিল ইসলামের চিত্রের প্রতীকের মতো। বিষয়টি আনাতোলিয়ার সেলজুক সাম্রাজ্যের সুন্নি ইসলাম অনুসারীদের জন্য সাধারণ বিষয় ছিল।”
স্ট্যানফোর্ড জে শ’ তার বইতে লিখেছেন যে ‘যখন তুর্কিরা (যাযাবর) আনাতোলিয়ায় এসেছিল, তখন তাদের সাথে সুফি সাধকরাও এসেছিলেন।
তাদের আগমনের বিষয়ে শক্তিশালী সেলজুক শাসকদের কোনও আপত্তি ছিল না কারণ তাদের জনগণের মধ্যে এই সুফিদের জনপ্রিয়তা ছিল। সুফি সাধকরা বেশ খুশি মনেই এলাকা ছেড়ে যেতেন।’
জে শ’ আরও লিখেছেন যে ‘এই প্রক্রিয়ায়, কিছু খ্রিস্টানকে হত্যা করা হয়েছিল এবং তাদের এলাকা ছেড়ে যেতে বাধ্য করা হয়েছিল।
কিন্তু তাদের বেশিরভাগই নিজেদের জায়গায় রয়ে গেছেন। কেউ কেউ ইসলামও গ্রহণ করেছেন। সুফি বংশের কিছু তুর্কি, খ্রিস্টানদের ধর্মীয় স্থানেও প্রবেশ করেন। যেখানে খ্রিস্টান এবং মুসলমানদের একই জায়গায় একসঙ্গে উপাসনা করতে দেখা গিয়েছে।
এরতুরুলের সমাধি
গাত এলাকায় এরতুরুলের নামে একটি ছোট মসজিদ রয়েছে এবং এরতুরুলের ছেলে তার জন্য একটি মন্দির তৈরি করেছিলেন বলে জানা যায়। আর তারপর যোগ করেন উসমানের ছেলে আরহান।
ক্যারোলাইন ফিঙ্কেল লিখেছেন যে, মসজিদ এবং সমাধিগুলো এতবার পুনর্নির্মাণ করা হয়েছে যে তাদের মূল নির্মাণের কোনও চিহ্ন অবশিষ্ট নেই। তাই কোন স্থাপনাই অটোমান আমলের সঠিক সময়কালের ব্যাখ্যা দিতে পারবে না।
তিনি আরও লিখেছেন যে, ১৯ শতকের শেষের দিকে, সুলতান দ্বিতীয় আবদ আল-হামিদ তার পূর্বপুরুষের খ্যাতিকে পুঁজি করে দুর্বল হতে থাকা সাম্রাজ্যের সুনাম অক্ষত রাখার জন্য সুগাত অঞ্চলে এরতুরুলের সমাধি এবং “অটোমান শহীদদের” সমাধি পুনর্নির্মাণের চেষ্টা করেন। সেজন্য একটি কবরস্থান তৈরি করা হয়।
এরতুরুল নিয়ে সিরিজ কেন?
মিডল ইস্টার্ন রিভিউ পত্রিকায় প্রকাশিত একটি নিবন্ধে, আমেরিকান ইউনিভার্সিটি অফ বৈরুতের নৃবিজ্ঞানী জশ কার্নি প্রশ্ন তুলেছেন ‘কেন তুর্কি সরকার অনেক বিখ্যাত চরিত্রের পরিবর্তে এরতুরুলকে বেছে নিল?’
জশ কার্নি বলেছেন যে অটোমান সাম্রাজ্যে, সুলতান সুলেমান (১৫৬৬-১৫২০) এবং দ্বিতীয় আব্দুল হামিদ (১৯০৯-১৮৭৬) এরতুরুলের চেয়ে বেশি বিখ্যাত ছিলেন।
তবে একটি বিশেষ কারণেই এরতুরুলকে ঘিরে টিভি সিরিজ কর হয়েছে।
তুর্কি টিভি চ্যানেল টিআরটি ‘দিরিলিশ এরতুরুল’ নামে যে সিরিজ প্রচার করে তা বিশ্বব্যাপী ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করে। এই সিরিজে দেখানো হয় কিভাবে কাই গোত্র বিভিন্ন শত্রুদের বিরুদ্ধে লড়াই করে আনাতোলিয়ায় নিজেদের শক্তি প্রতিষ্ঠা করেছে।
“ফলে, ঐতিহাসিক চরিত্র এরতুরুল সম্পর্কে খুব কম জানা গেলেও, টিআরটি-এর চরিত্রটি তুরস্কে এবং তুরস্কের বাইরে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে।”
সবশেষ ২০১৮ সালে লেখা একটি নিবন্ধে, কার্নি বলেছেন যে, এই সিরিজের অনেক দিক তুরস্কের সাংবিধানিক জনমত সংগ্রহের বিজ্ঞাপনের সাথে মিলে যায়। তাই এতে কোন সন্দেহ নেই যে, সিরিজটিতে ইতিহাস এবং জনপ্রিয় সংস্কৃতিকে রাজনৈতিক লাভের জন্য এক করা হয়েছিল।
কার্নি বলেছেন, মানুষ জানে না এমন একটি চরিত্র সম্পর্কে একটি টিভি সিরিজ তৈরি করার ক্ষেত্রে সুবিধা হল একে যে কোনো ছাঁচে ফেলা যায়, যে কোনো রঙ দেয়া যায়।” (যদিও) সাধারণ মানুষ জনপ্রিয় সেলেব্রিটিদের দোষগুণ সম্পর্কে বেশ খোঁজ-খবর রাখেন।
কার্নি বলেন, এ কারণেই সুলতান সুলেমানকে নিয়ে আগের সিরিজগুলো তেমন সফল হয়নি। “কিন্তু এরতুরুলকে নিয়ে যে সিরিজ তৈরি করা হয়েছে সেটার ফাঁকা অংশগুলো রং দিয়ে পূরণ করা হয়। যার কারণে এটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়।” একে তুরস্কের গেম অব থ্রোনসও বলা হয়।