‘ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ/ তুই আপনাকে আজ বিলিয়ে দে, শোন আসমানী তাগিদ। ’ ৩০ দিনের সিয়াম সাধনার মধ্য দিয়ে শেষ হলো পবিত্র রমজান মাস।
হিংসা-বিদ্বেষ ভুলে সাম্য-সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠার বার্তা নিয়ে বছর ঘুরে আবার এলো খুশির ঈদ। আগামীকাল বৃহস্পতিবার (১১ এপ্রিল) উদযাপিত হবে মুসলিম সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল ফিতর।
ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করার জন্য বৃহস্পতিবার একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে শিশু থেকে বৃদ্ধ, সবাই শামিল হবেন ঈদগাহ ময়দানে। দুই রাকাত ওয়াজিব নামাজ শেষে মুসল্লিরা দুনিয়া-আখেরাত এবং দেশ-জনগণের উন্নতি ও সমৃদ্ধি কামনায় দোয়া ও মোনাজাত করবেন।
এরপর সবাই কোলাকুলি করবেন।
ঘরে ঘরে এদিন বইবে আনন্দের জোয়ার।
পাড়া-পড়শীরা একে অপরের খোঁজ নেবেন। একে দাওয়াত করবেন অন্যকে। স্বজনরা বেড়াতে যাবেন আত্মীয়-স্বজনের বাড়ি।
যথাযথ ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য ও উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে ঈদ উদযাপনে সারা দেশের সব শ্রেণি পেশার মানুষই নিজ নিজ জায়গা থেকে যথাসাধ্য প্রস্তুতি নিয়েছেন। এরই মধ্যে ঢাকাসহ বিভিন্ন নগরের কর্মস্থল ছেড়ে বেশিরভাগ মানুষ স্বজনদের সঙ্গে ঈদ করতে গ্রামে চলে গেছেন।
জাতীয় ঈদগাহে প্রধান জামাত সকাল সাড়ে ৮টায়
রাজধানীসহ সারাদেশে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে ঈদ জামাতের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। এবার ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ব্যবস্থাপনায় জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হবে সকাল সাড়ে ৮টায়। আবহাওয়া প্রতিকূল বা অন্য কোনো অনিবার্য কারণে এ জামাত অনুষ্ঠান সম্ভব না হলে সকাল ৯টায় জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হবে।
ঈদের প্রধান জামাতে ইমাম হিসেবে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের খতিব হাফেজ মাওলানা মুফতি মোহাম্মদ রুহুল আমিন এবং বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের মুয়াজ্জিন ক্বারী মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান মোকাব্বির হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন।
বৈরী আবহাওয়ার কথা মাথায় রেখে ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠানের সকল আয়োজন ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। ঈদের প্রধান জামাতে নারীদের জন্যও আলাদা ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। ২৫ হাজার ৪০০ বর্গমিটার আয়তনের মূল প্যান্ডেলে এবার ৩৫ হাজার মুসল্লি একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারবেন।
এদিকে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) জানিয়েছে, জাতীয় ঈদগাহসহ রাজধানীতে নির্বিঘ্ন চলাচল ও সুষ্ঠুভাবে ঈদ জামাত অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে পাঁচ স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। রাষ্ট্রপতি, বিচারপতিগণ, মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, মুসলিম বিশ্বের কূটনীতিকরা জাতীয় ঈদগাহে ঈদের নামাজ আদায় করবেন বলে আশা করা যাচ্ছে।
ঈদ উদযাপন উপলক্ষে দেশের সব হাসপাতাল, কারাগার, সরকারি শিশু সদন, বৃদ্ধ নিবাস, ছোটমনি নিবাস, সামাজিক প্রতিবন্ধী কেন্দ্র, আশ্রয় কেন্দ্র, সেইফ হোমস, ভবঘুরে কল্যাণ কেন্দ্র, দুঃস্থ কল্যাণ ও মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে উন্নতমানের খাবার পরিবেশনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
ঈদের দিন সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের বিনা টিকেটে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ও উত্তর সিটি করপোরেশনের আওতাধীন সব শিশু পার্কে প্রবেশ এবং বিনোদনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ঈদের দিন সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের বিনা টিকেটে যাদুঘর, আহসান মঞ্জিল, লালবাগের কেল্লা ইত্যাদি দর্শনীয় স্থান প্রবেশ এবং তা প্রদর্শনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশ শিশু একাডেমিতে শিশুদের ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।
বায়তুল মোকাররমে ৫ জামাত
এদিকে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে প্রতি বছরের মতো এবারও ঈদের পাঁচটি জামাত অনুষ্ঠিত হবে। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে প্রথম জামাত অনুষ্ঠিত হবে-সকাল ৭টায়, এরপর পর্যায়ক্রমে ৮টা, ৯টা, ১০টা এবং পৌনে ১১টায় অনুষ্ঠিত হবে শেষ ঈদ জামাত।
জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় পবিত্র ঈদ-উল ফিতরের জামাত সকাল সাড়ে ৮টায় অনুষ্ঠিত হবে। জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ, হুইপ, মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, সংসদ-সদস্য ও সংসদ সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ মুসল্লিরা এই জামাতে অংশ নেবেন।
এ বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদ মসজিদুল জামি’আয় পবিত্র ঈদুল ফিতরের দু’টি জামাত অনুষ্ঠিত হবে। ঈদের প্রথম জামাত অনুষ্ঠিত হবে সকাল ৮টায় এবং দ্বিতীয় জামাত অনুষ্ঠিত হবে সকাল ৯টায়।
কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া মাঠে দেশের বৃহত্তম ঈদ জামাতের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। ১৮২৮ সালে প্রথম অনুষ্ঠিত জামাতের হিসাবে এটি হবে এই ঈদগাহে ঈদুল ফিতরের ১৯৭তম জামাত।
জামাত নির্বিঘ্ন করতে নিরাপত্তা ব্যবস্থায় সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। মুসল্লিদের জন্য চার স্তরের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কাজ করবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।