কারামুক্ত হেফাজতে ইসলামের সাবেক নেতা মামুনুল হকের মামলাগুলোর কী অবস্থা?

জামিনে কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন মামুনুল হক

ছবির উৎস, MD. MOKHLESUR RAHMAN

বাংলাদেশের কওমী মাদরাসা ভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলামের সাবেক যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক গ্রেপ্তার হওয়ার তিন বছরেরও বেশি সময় পর জামিনে কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন।

শুক্রবার সকালে গাজীপুরের কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্ত হন তিনি।

কারামুক্তির পর নেতাকর্মী ও অনুসারীরা শুভেচ্ছা জানায় তাকে। এসময় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে দেয়া বক্তব্যে মামুনুল হক বলেন, ২০২১ সালে আলেমদের নিয়ে যে ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত করা হয়েছে তার মুক্তির মধ্য দিয়ে সেই অধ্যায়ের প্রাথমিক পরিসমাপ্তি ঘটেছে।

“অন্যায়ভাবে আমাদেরকে কারারুদ্ধ করা হয়েছে। যখন ন্যূনতম প্রতিবাদটুকু করতে গিয়েছি তখন আমাদের কারারুদ্ধ করা হয়েছে,” বলেন তিনি।

ধর্ষণের একটি মামলা বেশি আলোচিত হলেও মামুনুল হকের নামে মোট ৪১টি মামলা রয়েছে বলে জানিয়েছেন তার আইনজীবী। যার মধ্যে একটি হত্যা মামলাও রয়েছে।

সেই মামলাগুলো এখন কোন পর্যায়ে রয়েছে? তার কারাভোগের বিষয়ে আইনজীবীরা কী বলছেন?

নেতাকর্মীর শুভেচ্ছা জানান মামুনুল হককে

ছবির উৎস, MD. MOKHLESUR RAHMAN

ছবির ক্যাপশান, শুক্রবার সকালে গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগার থেকে মুক্তি পান মামুনুল হক

আলোচিত মামলা

মি. হকের পক্ষে আইনজীবী হিসেবে মামলা পরিচালনা করছেন সৈয়দ জয়নুল আবেদীন মেজবাহ্।

বিবিসি বাংলাকে তিনি জানান, ৪১টি মামলার মধ্যে ১৫টি মামলা এখন বিচারাধীন রয়েছে।

“কিছু কিছু মামলা বিচারের শেষদিকে রয়েছে,” যোগ করেন তিনি।

হত্যা ও ধর্ষণের মামলা দুটিতে বর্তমানে তদন্তকারী কর্মকর্তার সাক্ষ্যগ্রহণ চলছে।

মি. হকের বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলাটি ব্যাপকভাবে আলোচিত। ২০২১ সালের ৩০শে এপ্রিল নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ থানায় এটি দায়ের করা হয়েছিল।

সোনারগাঁ থানার পুলিশ তখন বিবিসি বাংলাকে জানায়, বাদী ওই মামলায় অভিযোগ করেছেন যে নারায়ণগঞ্জের একটি রিসোর্টে তাকে ‘জোরপূর্বক আটকে রেখে ধর্ষণ করেছেন’ মামুনুল হক।

ওই বছরের তেসরা এপ্রিল মামুনুল হক সেই নারীকে নিয়ে নারায়ণগঞ্জের একটি রিসোর্টে যান। তখন সেখানে তাকে ঘেরাও করে রাখে স্থানীয় কিছু লোকজন এবং ক্ষমতাসীন দলের সাথে সম্পৃক্ত ছাত্রলীগ ও যুবলীগের কর্মীরা।

মি. হক দাবি করেন, ওই নারী তার দ্বিতীয় স্ত্রী এবং দুই বছর আগে তারা ‘ইসলামী শরিয়ত সম্মতভাবে’ বিয়ে করেছেন।

রিসোর্টে নাটকীয় পরিস্থিতির এক পর্যায়ে হেফাজতে ইসলামের সমর্থক এবং মাদরাসার ছাত্ররা পাল্টা হামলা চালিয়ে তাকে নিয়ে যায়।

পরে, ১৮ই এপ্রিল মামুনুল হককে অন্য একটি মামলায় গ্রেফতারের ১২ দিন পর তার “দ্বিতীয় স্ত্রী” তেসরা এপ্রিলের ঘটনায় ধর্ষণের মামলাটি করেন।

মি. মেজবাহ্ বলেন, “বাদীর সাথে মি. হকের লিখিত (নথি) আছে। যেখানে বাদী বলেছেন, তিনি তার কলেমা পড়া স্বামী।”

“যদি ভিক্টিম নিজেই বলেন কলেমা পড়া স্বামী, তাহলে তার তো আর ধর্ষণের অভিযোগ আনার কোনো সুযোগ নেই,” দাবি মি. মেজবাহ্’র।

ওই নারীর সন্তানও এই মামলায় বিয়ের পক্ষে সাক্ষ্য দিয়েছেন বলে জানান তিনি।

আরো পড়তে পারেন:
গ্রেপ্তার মামুনুল হক

ছবির উৎস, Getty Images

ছবির ক্যাপশান, ২০২১ সালের ১৮ই এপ্রিল গ্রেপ্তার করা হয় মামুনুল হককে

অন্যান্য মামলা

হেফাজতের সাবেক এই নেতার বিরুদ্ধে হত্যা মামলাটি হয় ২০১৩ সালে। তিনি তখন যুব সংগঠন যুব মজলিসের সভাপতি ছিলেন।

তার আইনজীবী জানান, এজাহারে বলা আছে, জামায়াত-বিএনপি নেতাকর্মীরা মিরপুরে বোমা হামলা করে একজন বৃদ্ধকে হত্যা করেছেন।

সেই মামলার চার্জশিটে মামুনুল হকের নাম আছে।

মামলাটির বিচারকাজ শেষের দিকে বলে জানান সৈয়দ জয়নুল আবেদীন মেজবাহ্। এখন তদন্তকারী কর্মকর্তার সাক্ষ্য গ্রহণ করা হচ্ছে।

তবে, ২০২১ সালে মোহাম্মদপুর থানার অন্য একটি মামলায় তিনি আটক হন।

মি. মেজবাহ্ বিবিসি বাংলাকে বলেন, তাবলীগের দুই পক্ষের মধ্যে একটি বিরোধ আছে। তার মধ্যে একটি পক্ষ টাকা-পয়সা ছিনিয়ে নিয়ে যাওয়া ও মারধোরের অভিযোগে মামলাটি করেছে।”

“সেই মামলায়ই হুকুমের আসামি হিসেবেই প্রথম গ্রেফতার করা হয় মামুনুল হককে,” যোগ করেন তিনি।

মামুনুল হকের বিরুদ্ধে ২০১৩ সালে ঢাকার শাপলা চত্বরে হেফাজতের ঘেরাও কর্মসূচির জেরে ঘটা সংঘর্ষ ও নাশকতার ইস্যুতেও মামলা রয়েছে।

২০২১ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বাংলাদেশ সফরের বিরোধিতা করে বিক্ষোভ করে হেফাজতে ইসলাম।

এই বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ কয়েকটি জায়গায় ব্যাপক সহিংসতা হয়। কমপক্ষে ১৭ জনের মৃত্যু হয়।

এসব ঘটনায় করা মামলাগুলোতেও আসামি হিসেবে রয়েছে মি. হকের নাম।

হেফাজতে ইসলামের সংবাদ সম্মেলনে মামুনুল হক
ছবির ক্যাপশান, হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব ছিলেন মামুনুল হক।

“রাজনৈতিক মামলা নয়”

মামুনুল হকের আইনজীবীর দাবি, চলমান মামলাগুলোতে তার আরও আগেই জামিন পাওয়ার কথা।

“অনেক ক্ষেত্রেই সরকার বলে হস্তক্ষেপ করি না, কিন্তু সরকারের হস্তক্ষেপ আছে বলেই প্রতীয়মান হয়,” মন্তব্য করেন তিনি।

মামলাগুলোকে তিনি “রাজনৈতিক মামলা” বলে অভিহিত করেন।

তবে, বাংলাদেশের অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন অভিযুক্তের আইনজীবীর বক্তব্যকে “দুর্ভাগ্যজনক” বলে মন্তব্য করেছেন।

বিবিসি বাংলাকে তিনি বলেন, “আদালত অভিযোগের গুণাগুণ বিচার করে জামিন দেন অথবা জামিন অগ্রাহ্য করেন। জামিন সরকারের ইচ্ছাতে হয় না, আইনের ইচ্ছাতে হয়।”

মি. উদ্দিন বলেন, সুনির্দিষ্ট ঘটনার প্রেক্ষিতেই মামলা হয়ে থাকে।

“ওনার বিরুদ্ধে যে মামলা হয়েছিলো সবাই জানে ঘটনাটা কী। এটা কোনো রাজনৈতিক মামলা না।”

বিবিসি বাংলার আরো খবর:
ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফরের সময়ে হেফাজতে ইসলামের সমর্থকদের বিক্ষোভ

ছবির উৎস, Getty Images

ছবির ক্যাপশান, ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফরের সময়ে হেফাজতে ইসলামের সমর্থকদের বিক্ষোভ

যেভাবে আলোচনায় আসেন মামুনুল

হেফাজতে ইসলামের পাশাপাশি মামুনুল হক রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ খেলাফতে মজলিসের নেতৃত্বেও রয়েছেন। তিনি দলটির মহাসচিব।

মি. হক আলোচিত হয়ে ওঠেন শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য বিরোধী বক্তব্যের মধ্য দিয়ে।

“আমাদের সকলের লক্ষ্য, উদ্দেশ্য এবং ঘোষণা হলো আমরা দেশে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে ইসলামকে বাস্তবায়ন করতে চাই। আমাদের সেই প্রচেষ্টা সফল হলে, ইসলামি হুকুমত বাস্তবায়িত হলে ভাস্কর্য সরিয়ে না ফেলার কোনো অবকাশ থাকবে না,” সেই সময় বলেছিলেন মামুনুল হক।

তখন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ মন্তব্য করেছিলেন ‘হেফাজত নতুন রাজাকার হয়ে দাঁড়াচ্ছে’।

এরপর বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী ও বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বাংলাদেশ সফরের সময় তিন দিন ধরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়, চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে এবং ঢাকায় বায়তুল মোকাররম মসজিদ এলাকায় হেফাজতের কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে ব্যাপক সহিংসতা হয়।

বিক্ষোভে নেতৃত্ব দিয়ে আরো বেশি করে আলোচনায় আসেন মামুনুল হক।

হাটহাজারী এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় থানা আক্রমণ থেকে শুরু করে বিভিন্ন সরকারি অফিসে অগ্নিসংযোগসহ নাশকতার নানা ঘটনা ঘটে। প্রাণহানি হয় কমপক্ষে ১৭ জনের।

সেই সহিংসতার কয়েকদিনের মাথায় নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে একটি রিসোর্টে নারীসহ মামুনুল হকের অবস্থান করার ঘটনা ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়।

Source link

এই পোস্টটি যদি ভালো লেগে থাকে তাহলে ফেইসবুক পেজটি লাইক দিন এবং এই রকম আরো খবরের এলার্ট পেতে থাকুন

 আরো পড়তে পারেন:  

Loading...