ভারতের মাটিতে বিশ্বকাপ ক্রিকেট। নানা রঙ, সংস্কৃতি ও নানা ভাষার দেশ ভারতে একটা বর্ণিল উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হবে – এমনটা আশা করেছিলেন অনেকেই। কিন্তু এবারে সে আশায় গুড়েবালি। কোনও উদ্বোধনী অনুষ্ঠান নেই, নেই তেমন কোনও সাংস্কৃতিক শো-ডাউন, ক্রিকেট বিশ্বের সবচেয়ে বড় আয়োজন একরকম অনাড়ম্বরভাবেই শুরু হতে চলেছে।
বিশ্বকাপ শুরুর আগের দিন ক্যাপ্টেন্স ডে হয়ে গেছে নরেন্দ্র মোদী ক্রিকেট স্টেডিয়ামে, গুজরাটের এই মাঠে শিরোনামে এসেছেন দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক টেম্বা বাভুমা, টেলিভিশন স্ক্রিনে তার মাথা নিচু করা একটা ছবি দেখে মনে হচ্ছিল তিনি ঘুমিয়ে গেছেন। কিন্তু পরে টুইটারে বাভুমা লিখেছেন, “এটা ক্যামেরা অ্যাঙ্গেলের কারণে মনে হচ্ছে।”
এই ক্যাপ্টেন্স ডে নিয়ে ছিল নানা অভিযোগ, অনেকে বলছেন কেন এই আয়োজনে হিন্দিতে হলো প্রশ্ন-উত্তর পর্ব, শুধু ভারত ও পাকিস্তানকে গুরুত্ব দেয়া নিয়েও ছিল অভিযোগ, বিশ্বকাপ অনাড়ম্বর কেন এসব নিয়েও ছিল প্রশ্ন। যদিও এমন প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে যান ভারতের অধিনায়ক রোহিত শর্মা।
তবে সামাজিক মাধ্যমে নানা আলোচনা এবার বিশ্বকাপে কোন উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হচ্ছে না কেন? এমন প্রশ্নে অবশ্য মুখে কুলুপ আইসিসি ও বিসিসিআইয়ের। বিভিন্ন ভারতীয় গণমাধ্যমের খবর যথেষ্ট সময় না পাওয়াতেই কোন উদ্বোধনী আয়োজন থাকছে না।
তবে উদ্বোধনী ম্যাচের ভেন্যু নরেন্দ্র মোদী স্টেডিয়ামে ১৪ই অক্টোবর ভারত-পাকিস্তান ম্যাচের আগে কিছু আনুষ্ঠানিকতার চিন্তা করছে আয়োজকরা। এছাড়া উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আক্ষেপ ১৯শে নভেম্বর ফাইনালের পর সমাপনী আয়োজনে পুষিয়ে দেয়ার কথাও শোনা যাচ্ছে।
তবু মাঠের ক্রিকেটটা হবে এটাই ক্রিকেট অনুরাগীদের জন্য বড় পাওয়া, আহমেদাবাদে বাংলাদেশ সময় আড়াইটায় মাঠে নামবে গত বিশ্বকাপের দুই ফাইনালিস্ট ইংল্যান্ড ও নিউজিল্যান্ড।
বলা হয়ে থাকে ক্রিকেট বিশ্বকাপ ইতিহাসের সবচেয়ে নাটকীয় ফাইনাল ছিল ২০১৯ সালের সেই ম্যাচটা।
এবারে দুই দলের জন্যই কিছু প্রেক্ষাপটে ভিন্নতা রয়েছে, নিউজিল্যান্ডে মার্টিন গাপটিল নেই, রস টেলর নেই।
ইংল্যান্ডের বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক ইয়ন মরগান এখন সাবেক। বাংলাদেশের ক্রিকেট বিশ্লেষক ও কোচ নাজমুল আবেদীন ফাহিম এই দুই দলকে এই বিশ্বকাপের ‘অন্যতম সেরা’ দুটো দল বলছেন।
তার মতে, সাম্প্রতিক ফর্মে ইংল্যান্ড এগিয়ে থাকবে।
গত মাসেই নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে একটা দ্বিপাক্ষিক সিরিজ জিতেছে ইংল্যান্ড। তবে এটা আইসিসি ইভেন্ট, আইসিসি ইভেন্টে রূপ বদল হয় নিউজিল্যান্ডের, দলটা খুব ঠাণ্ডা মাথায় ম্যাচ জিতে বের হতে পারে।
নাজমুল আবেদীন ফাহিম বিবিসি বাংলাকে বলেন, “নিউজিল্যান্ড খুব শান্তভাবে নিজেদের কাজটা করে যায়।”
ইংল্যান্ড-নিউজিল্যান্ড, কে এগিয়ে?
এবার ইংল্যান্ড ভালোভাবেই এগিয়ে থাকবে বলেও মনে করেন নাজমুল আবেদীন ফাহিম, দুই দলেরই বোলিং আক্রমণ দেখলে সমান সমানই মনে হচ্ছে।
আবার ব্যাটিংটা ইংল্যান্ডের অনেক ভালো, ২০১৯ বিশ্বকাপের পর থেকে ২০২৩ বিশ্বকাপের আগ পর্যন্ত ইংল্যান্ড ৬.২০ রান করে তুলেছে প্রতি ওভারে যা বিশ্বে সর্বোচ্চ।
গত বছর একটা মারাত্মক ইনজুরিতে পড়া জনি বেয়ারস্টো ফিট হয়ে ফেরত এসেছেন, জেসন রয়ের মতো ওপেনিং ব্যাটারকে ইংল্যান্ড এবার দলে রাখেনি।
হ্যারি ব্রুককে দলে নিয়েছে ইংল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট, হ্যারি ব্রুক উপমহাদেশের উইকেটের সাথে পরিচিত এবং পাকিস্তানের লিগে ভালো করেছেন তিনি।
বেন স্টোকসও অবসর ভেঙ্গে ওয়ানডে ক্রিকেটে ফিরেছেন, গত মাসেই নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ১৮৫ রানের ক্যারিয়ার সেরা এক ইনিংস খেলেছেন স্টোকস।
যদিও প্রথম ম্যাচে অনিশ্চিত তিনি।
নিউজিল্যান্ডের কেইন উইলিয়ামসন ও টিম সাউদিও প্রথম ম্যাচে নেই, কেইন উইলিয়ামসন ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের এক ম্যাচে ফিল্ডিং করতে গিয়ে হাঁটুতে চোট পেয়েছিলেন, এখন তিনি পুরোপুরি সেরে ওঠেননি তাই প্রথম ম্যাচে তার বদলে টস করতে দেখা যাবে টম লাথামকে।
টিম সাউদির চোট বুড়ো আঙ্গুলে, অর্থাৎ নিউজিল্যান্ড মাত্র ১৩জন ফিট ক্রিকেটার নিয়ে বিশ্বকাপে খেলতে নেমেছে।
ইংল্যান্ড আর নিউজিল্যান্ডের বোলিং শক্তিমত্তা কাছাকাছিই বলছেন নাজমুল আবেদীন ফাহিম, “দুদলেরই ফিঙ্গার স্পিনার আছেন এবং লেগ স্পিনার আছেন। তবে এদিকেও ইংল্যান্ড একটু এগিয়ে থাকবে পেস বোলারদের কারণে, ইংল্যান্ডে মার্ক উড, ক্রিস ওকসের মতো ফাস্ট বোলাররা আছেন”।
মি. ফাহিমের মতে, “ইংল্যান্ডের খেলার ধরনটাকে নিউজিল্যান্ড যদি আটকাতে না পারে নিউজিল্যান্ডের জন্য চাপ হয়ে যাবে।”
তুরূপের তাস কারা?
নিউজিল্যান্ড থেকে নাজমুল আবেদীন ফাহিম পিক করেছেন ডেভন কনওয়েকে।
এই বছর ৪৯ গড় ও ৯৬ স্ট্রাইক রেটে প্রায় সাড়ে চারশো রান তুলেছেন নিউজিল্যান্ডের ডেভন কনওয়ে।
বোলিংয়ে মি. ফাহিম নিয়েছেন, “যে কন্ডিশনে খেলা, লেগ স্পিনাররা সুবিধা পাবেন সোধী গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর হতে পারেন। উইকেট না নিতে পারলে ইংল্যান্ড ৩৫০+ করবেই”।
ইংল্যান্ডের উইকেট নিতেই হবে বলছেন তিনি।
“ইংল্যান্ড থেকে অধিনায়ক জস বাটলারকে পিক করবো আমি, আদিল রাশিদ ও ক্রিস ওকস ভালো করতে পারেন,” বলেন নাজমুল আবেদীন ফাহিম।
ইংল্যান্ডের আরও একটা বিশেষ দিক তুলে ধরেছেন তিনি, “ইংল্যান্ডে অনেক প্লেয়ারই একাই ম্যাচ জেতাতে পারেন, এই ধরনের ক্রিকেটার ইংল্যান্ডেই বেশি।”
বাংলাদেশের আলোচনা ভিন্ন দিকে
নাজমুল আবেদীন ফাহিম মনে করেন ক্রিকেট ক্রিকেটের জায়গায় থাকবে তবে এবারের বিশ্বকাপে সামগ্রিকভাবেই বাংলাদেশে ক্রিকেটের বাইরের আলোচনাই বেশি হচ্ছে।
এটার পেছনে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের দায় দেখছেন তিনি।
বিশেষত গত সপ্তাহ খানেক ধরে সাকিব আল হাসান ও তামিম ইকবালকে ঘিরে যেসব ঘটনা ঘটেছে, তারপর বিসিবি এমন কোনও পদক্ষেপ নেয়নি যাতে এদিক থেকে মানুষের মন সরে যায়।
তিনি বলেন “তামিম সাকিবের যে ঘটনা হয়েছে তাতে ফোকাস অন্যদিকে চলে গেছে কি না জানিনা। ক্রিকেট বোর্ডও এখন একদম চুপ। ক্রিকেট দেখলে বাংলাদেশেরও একটা কমার্শিয়াল ভ্যালু থাকবে এটা মাথায় রাখা উচিৎ।”
এরইমধ্যে বাংলাদেশে এখন আলোচনায় আছে একটি বাণিজ্যিক প্রচারণায় সাকিব-তামিমের একসাথে হওয়ার একটি ভিডিও।