ফিলিস্তিনের সশস্ত্র সংগঠন হামাস দুজন মার্কিন জিম্মিকে মুক্তি দিয়েছে, যাদের চলতি মাসে ইসরায়েলে হামলার সময় অপহরণ করা হয়েছিল।
ইসরায়েল খবরটি নিশ্চিত করে বলেছে, তারা গাজা সীমান্তে একজন মা জুডিথ ও তার কন্যা নাটালিয়া রানানকে গ্রহণ করেছে।
হামাস বলেছে এ দুজনকে ‘মানবিক কারণে’ ছেড়ে দেয়া হয়েছে।
গত সাতই অক্টোবর ইসরায়েলি ভূখণ্ডের ভেতরে গিয়ে হামাসের বন্দুকধারীরা ১৪০০ মানুষকে হত্যা করে এবং আর ২০০ মানুষকে জিম্মি করে নিয়ে যায়।
এর প্রতিক্রিয়ায় গাজায় ব্যাপক বোমাবর্ষণ শুরু করে ইসরায়েল এবং ফিলিস্তিনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন যে গাজায় অন্তত চার হাজার মানুষ নিহত হয়েছে।
মুক্তির পর সামরিক ঘাঁটিতে
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীর অফিস থেকে জানানো হয়েছে শুক্রবার সন্ধ্যায় ফিলিস্তিন সীমান্তে ইসরায়েল ডিফেন্স ফোর্স বা আইডিএফ সদস্যদের নিয়ে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল গাল হিরশ ওই দুই জিম্মিকে গ্রহণ করেন।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় আরও জানিয়েছে যে এরপর তাদের দেশটির একটি সামরিক ঘাঁটিতে নিয়ে যাওয়া হয় যেখানে তাদের পরিবারের সদস্যরা অপেক্ষা করছিলেন।
হামাসের আক্রমণের সময় তাদের দক্ষিণ ইসরায়েলের কিবুতয নাহাল ওযি থেকে অপহরণ করা হয়েছিলো। ৫৯ বছর বয়সী মা যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয়ের এবং তার সতের বছর বয়সী কন্যা সম্প্রতি হাই স্কুল থেকে শিক্ষা সমাপ্ত করেছেন।
নাটালিয়ার সৎ ভাই বেন রানান বিশ্বজুড়ে যারাই তাদের মঙ্গল কামনা করে প্রার্থনা করেছেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।
মা ও কন্যাকে মূলত নাটালিয়ার গ্রাজুয়েশন এবং তার দাদী তামার রানানের ৮৫তম জন্মদিন পালন করতে গিয়েছিলেন। তিনি অবশ্য ওই হামলায় প্রাণে বেঁচেছেন। তামার ও তার সঙ্গী ঘরের মধ্যেই একটি সেফ রুমে লুকিয়ে থাকতে সক্ষম হন।
নাটালিয়া রানানের বাবা উরি রানান এপি নিউজ এজেন্সিকে বলেছেন যে ‘সে এখন ভালো আছে’। তিনি বলেছেন তার সতের বছর বয়সী কন্যা ফোনে খুব বেশি কথা বলেনি এবং এক সপ্তাহের মধ্যেই তারা শিকাগো ফিরে আসবে।
ওদিকে হামাসের আল কাশাম ব্রিগেডের একটি ভিডিওতে দেখা যায় হামাসের সামরিক শাখার সদস্যরা রেডক্রসের ইউনিফর্ম পড়ে জিম্মিদের মুক্তিতে সহায়তা করছেন।
বাইডেনের সাথে ফোনালাপ
জেরুসালেমে যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসের প্রকাশ করা একটি ছবিতে দেখা যাচ্ছে নাটালিয়া ও জুডিথ রানান জিম্মি অবস্থা থেকে মুক্তি লাভের পর ফোনে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সাথে কথা বলছেন।
পরে সামাজিক মাধ্যম ‘এক্স’ এ দূতাবাস লিখেছে “হামাস জিম্মি করেছিলো এমন দুজন মার্কিন নাগরিকের সঙ্গে সন্ধ্যা প্রেসিডেন্ট কথা বলেছেন”।
“আমরা অত্যন্ত কৃতজ্ঞ যে তারা নিরাপদ। প্রতিটি জিম্মিকে তাদের প্রিয়জনের কাছে ফিরিয়ে আনার জন্য আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাবো”।
ওদিকে শুক্রবারই এক বিবৃতিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন তিনি আনন্দিত কারণ শিগগিরই ওই দুজন তাদের পরিবারের সঙ্গে একত্রিত হতে পারবে।
কাতারের প্রশংসায় ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী
দুই মার্কিন জিম্মিকে ছেড়ে দেয়ার ঘটনাকে স্বাগত জানিয়েছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক এবং এই ইস্যুতে নেতৃত্ব দেয়ার জন্য তিনি কাতারকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।
মি. সুনাক বলেছেন তিনি জিম্মিদের মুক্তির বিষয়ে মধ্যপ্রাচ্যের এই দেশটির আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানির সাথে আলোচনা করেছেন।
“আমরা কাতার, ইসরায়েল ও অন্যদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করে যাবো যাতে সব জিম্মি নিরাপদে ঘরে ফিরতে পারে,” সামাজিক মাধ্যম এক্স এ করা এক পোস্টে বলেছেন তিনি।
এর আগে মধ্যপ্রাচ্য সফরের অংশ হিসেবে মিশরে গিয়ে ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের প্রেসিডেন্টের সাথে আলোচনা করেছেন তিনি।
প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন গত সাতই অক্টোবর ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে হামাসের হামলার লক্ষ্য ছিল ইসরায়েল ও সৌদি আরবের মধ্যে শক্তিশালী বন্ধনকে ক্ষতিগ্রস্ত করা।
“হামাসের ইসরায়েলে যাওয়ার কারণগুলোর এটি একটি…তারা জানতো আমি সৌদিদের সাথে বসতে যাচ্ছিলাম,” মি. বাইডেনকে উদ্ধৃত করে জানিয়েছে রয়টার্স।
সৌদি আরবের সাথে ইসরায়েলের সম্পর্ক ঐতিহাসিকভাবে ভালো নয়। তবে ২০২০ সালে সংযুক্ত আরব আমিরাত ও বাহরাইনের সাথে ইসরায়েলের সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ করতে তাদের আশীর্বাদ ছিলো।
সৌদি আরবের প্রিন্স তুর্কি আল ফয়সল বেসামরিক নাগরিকদের ওপর হামলার জন্য হামাস ও ইসরায়েলের সমালোচনা করেছেন।
জিম্মিদের সহায়তায় রেডক্রস
ইন্টারন্যাশনাল কমিটি অফ দা রেডক্রস বা আইসিআরসি বলেছে দুই মার্কিন জিম্মিকে গাজা থেকে ইসরায়েলের যাওয়ার বিষয়ে সহায়তা করতে পেরে তারা খুবই স্বস্তিবোধ করছে।
এক বিবৃতিতে তারা বাকী জিম্মিদেরও ছেড়ে দেয়ার জন্য হামাসের প্রতি আহবান জানিয়েছে এবং বলেছে এসব জিম্মিদের আটক রাখা অবস্থায় চিকিৎসা সুবিধা দেয়া উচিত।
একই সঙ্গে সংস্থাটি গাজায় ফিলিস্তিনিদের মানবিক সহায়তা নিশ্চিত করার আহবান জানিয়েছে।
“সহায়তা ছাড়া পার করা প্রতিটি মূহুর্ত দুর্ভোগ বাড়িয়ে তুলছে”।