নতুন বছরের প্রথম দিন সোমবার জাপানে আঘাত হানা শক্তিশালী ভূমিকম্পে নিহত মানুষের সংখ্যা এখন পর্যন্ত ৪৮ জন বলে নিশ্চিত করেছেন দেশটির ইশিকাওয়া অঞ্চলের কর্মকর্তারা। মৃত্যুর সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
ওই অঞ্চলটি ছিল ৭.৬ মাত্রার ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল, যার ফলে সমুদ্রে বড় বড় ঢেউয়ের সৃষ্টি হয় এবং বহু ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। স্থানীয় সময় ৪টা ১০ মিনিটে ভূমিকম্পটি আঘাত হানে।
ভূমিকম্পটি হোনশু দ্বীপের নোটো প্রদেশে আঘাত করলে সেখানকার কর্মকর্তারা উপকূলীয় এলাকার লোকজনকে উঁচু জায়গায় সরে যাওয়ার আহ্বান জানান।
এই ভূমিকম্পে সার্বিক ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখনও অজানা, তবে বেশ কয়েকটি শহরে কয়েক ডজন ভবন ধসে পড়েছে এবং ধ্বংসস্তূপের নিচে বেশ কিছু মানুষ আটকা পড়েছে।
উদ্ধারকর্মীরা এখন ধ্বংসস্তূপের নীচে আটকা পড়ে থাকতে পারে এমন লোকদের সন্ধান করছেন, কিন্তু অবরুদ্ধ রাস্তা, ভাঙা গাড়ি ও বিধ্বস্ত বাড়িঘর উদ্ধারকাজে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। এই অনুসন্ধানকে “সময়ের বিরুদ্ধে যুদ্ধ” বলে বর্ণনা করেছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা।
“দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্তদের সন্ধান ও উদ্ধারের জন্য আমাদের সময়ের সাথে দৌড়াতে হবে”, বলেন প্রধানমন্ত্রী কিশিদা।
“অসংখ্য হতাহতের ঘটনা, ভবন ধসে পড়া এবং অগ্নিকাণ্ডসহ খুব ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি নিশ্চিত করা যাচ্ছে,” তিনি জানান। এদিকে উদ্ধারকারীদের জন্য নোটো উপদ্বীপের উত্তর প্রান্তে পৌঁছানো কঠিন হয়ে উঠেছে।
ক্ষতিগ্রস্ত অনেক এলাকায় প্রয়োজনীয় নানা পরিষেবাসহ বেশিরভাগ রেল পরিষেবা, ফেরি ও ফ্লাইট স্থগিত করা হয়েছে, ফলে উদ্ধার কাজ আরও জটিল হয়ে উঠছে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে জাপানের কিয়োডো সংবাদ সংস্থা জানাচ্ছে, তিনটি এলাকায় ১৯টি চিকিৎসা কেন্দ্রে বিদ্যুৎ ও পানি সরবরাহ ব্যাহত হচ্ছে, ফলে কিছু হাসপাতাল রোগীদের স্থানান্তরের কথা বিবেচনা করছে।
প্রায় ৩৩ হাজার পরিবারকে বিদ্যুতের অভাবের কারণে রাতারাতি হিমাঙ্ক বা তারও নিচের তাপমাত্রা সহ্য করতে হচ্ছে।
হাজার হাজার মানুষ আশ্রয় কেন্দ্রে থাকছে। জাপানি সামরিক বাহিনী বাড়িঘর ছেড়ে যেতে বাধ্য হওয়া লোকদের খাবার, পানি ও কম্বল সরবরাহ করছে।
ভূমিকম্পের পর জাপানের আবহাওয়া সংস্থা জাপান সাগরে বড় সুনামি’র সতর্কতা জারি করলেও পরে অবশ্য তা তুলে নেয়া হয়েছে, যার অর্থ সুনামির ঝুঁকি আর নেই।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন যেকোনো প্রয়োজনীয় সহায়তা করতে প্রস্তুত থাকার কথা জানিয়েছেন।
“জাপানি জনগণের জন্য আমরা যে কোনও প্রয়োজনীয় সহায়তা দিতে প্রস্তুত”, বলেছেন মি. বাইডেন।
তিনি আরও বলেছেন, জাপানের জনগণের জন্য তিনি প্রার্থনা করছেন এবং তার প্রশাসন জাপানি কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করছে।
“ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসাবে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও জাপান একটি গভীর বন্ধুত্বের বন্ধন ভাগ করে নেয়, যেটা আমাদের জনগণকে একত্রিত করে,” মি বাইডেন বলেন।
এদিকে যুক্তরাজ্যও জাপানকে সহায়তা করতে প্রস্তুত এবং সোমবারের ভূমিকম্পের পর উদ্ধার কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করছে বলে জানিয়েছেন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক।