টানা ভারী বর্ষণ ও ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় এবার ঈদের আনন্দ নেই কারো মনে। রাত ভর বৃষ্টি হওয়ায় সুনামগঞ্জের মানুষজন বন্যা আতঙ্কে নির্ঘুম রাত পার করছেন।
সোমবার (১৭ জুন) ভোর থেকে সুরমা নদীর পানি নদী উপচে সুনামগঞ্জ পৌরসভা শহরের বিভিন্ন এলাকায় ঢুকে জলাবদ্ধতা তৈরির পাশাপাশি অনেকের বাসা বাড়িতে ও দোকানে পানি ঢোকায় দুর্ভোগে পড়েছেন মানুষজন।
এদিন সকালে বৃষ্টি মাথায় নিয়ে ঈদগাহে গিয়ে কোরবানি ঈদের জামাত আদায় করেছেন এ জেলার লাখ লাখ মানুষ।
এদিকে দুপুরের দিকে জেলার সুরমা নদীর পানি সুনামগঞ্জ শহরের ষোলঘর পয়েন্ট দিয়ে বিপৎসীমার ২০ সেন্টিমিটারের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় নিম্নাঞ্চলের সড়ক ডুবে যাওয়ায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে রয়েছে জেলার বিশ্বম্ভরপুর, তাহিরপুর, মধ্যনগর, ধর্মপাশা, জগন্নাথপুর, ছাতক দোয়ারাবাজার, জামালগঞ্জসহ বিভিন্ন উপজেলার বাসিন্দারা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সুনামগঞ্জ পৌর শহরের নতুনপাড়া, বাঁধনপাড়া, হাছননগর, শহীদ আবুল হোসেন রোড, আরপিননগর, তেঘরিয়া, উকিলপাড়া, ষোলঘর, শান্তিবাগসহ বিভিন্ন সড়কে পানি উঠেছে।
জেলা শহরের নিম্নাঞ্চলের বাসা বাড়িতে পানি উঠেছে, অনেকের দোকানের জিনিসপত্র ভিজে গেছে। ভোর থেকেই কেউ কেউ দোকানের মালামাল ওপরে তুলছেন, কেউ কেউ স্থানান্তর করছেন।
বিভিন্ন পাড়া-মহল্লা ও আবাসিক এলাকার ওপর দিয়ে পানি গিয়ে পড়ছে ঝাওয়ার হাওরে।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় সুনামগঞ্জে ৩৬৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বৃষ্টিপাতের কারণেই মূলত নদ-নদীর পানি বেড়েছে। রোববার (১৬ জুন) ৩০ সেন্টিমিটার পানি বেড়েছে। সুনামগঞ্জের বন্যা হয় চেরাপুঞ্জির বৃষ্টিপাতের ওপর। গত ২৪ ঘণ্টায় চেরাপুঞ্জিতে ১২৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। যেহেতু বৃষ্টি ২০০ মিলি মিটারের নিচে সেহেতু আমাদের জন্য ঝুঁকির নয়। সুনামগঞ্জে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস রয়েছে, সে জন্য পানি বিপৎসীমার ওপরে থাকতে পারে। তবে সেক্ষেত্রে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।
জেলার তাহিরপুর উপজেলার বাদাঘাট ইউনিয়ন পাতারগাও গ্রামের বাসিন্দা শামিম আহমেদ জানান, পাহাড়ি ঢলের পানিতে সড়ক ডুবে গেছে। বসতবাড়িতে পানি ঢুকে যাবে যদি আরও একটু পানি বাড়ে। ঈদের আনন্দ নেই কীভাবে কী করব বুঝতে পারছি না যদি বন্যা হয়ে যায়।
জেলা শহরের ষোলঘর এলাকার বাসিন্দা আব্দুর রহমান জানান, যে ভাবে ভারী বৃষ্টিপাত আর ভারত থেকে নেমে আসছে গত ২০২২ সালের জুন মাসের মতোই। আর যে ভাবে বন্যা হয়েছিল সেই ভাবেই পানি বাড়ছে। ঈদের নামাজ পড়তে হয়েছে বৃষ্টিতে ভিজে এর আগে কোনো ঈদে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়নি। বন্যার আতঙ্কে আছে মানুষ।
মুদি দোকানি অমল তালুকদার জানান, দোকানের বেশির ভাগ মালামাল পানিতে ভিজে গেছে। ভোরে দোকানে এসে মালামাল ওপরে শুকনা স্থানে তুলেছি। বৃষ্টি থামায় পানি কিছুটা কমলেও রাতভর বৃষ্টিতে এখন আবার পানি বাড়ছে।
সুনামগঞ্জ পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী কালীকৃষ্ণ পাল জানান, জেলা শহরের অনেক এলাকায় জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে। সে সব এলাকার জলাবদ্ধতা দূর করার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, অচিরেই ড্রেন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হয়ে যাবে।
সুনামগঞ্জ পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার বলেন, আমাদের বন্যা পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে। কিছু কিছু জায়গায় পানি বাড়লেও খুব বেশি বাড়বে না। বর্তমানে সুরমা নদীর পানি সুনামগঞ্জ পৌর শহরের ষোলগড় পয়েন্ট দিয়ে বিপৎসীমার ২০ সেন্টিমিটারের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অতিমাত্রায় বৃষ্টির কারণে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে।
সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ রাশেদ ইকবাল চৌধুরী জানান, সোমবার ভোরে সুনামগঞ্জ সদর ও পৌরসভার কিছু নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পানি কমতে শুরু হয়েছে। এর আগে জেলার ছাতক ও দোয়ারা বাজার উপজেলার দুটি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছিল।
তিনি আরও জানান, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখার পাশাপাশি পর্যাপ্ত ত্রাণ সামগ্রীও রয়েছে। এছাড়া অতিরিক্ত ত্রাণ সামগ্রীর জন্য আমরা মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করছি।