চুয়াডাঙ্গায় ৭৪ লাখ টাকা হাতিয়ে পালানোর পর ঝিনাইদহে ঘাঁটি গেঁড়েছে “সমাধান ফাউন্ডেশন” নামে একটি প্রতারণা মুলক প্রতিষ্ঠান। ইতিমধ্যে ঝিনাইদহের ৬ উপজেলা থেকে প্রায় দেড়’শ যুবক-যুবতীর কাছ থেকে সাড়ে ৩০ হাজার টাকা করে প্রায় ৪৬ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
খবর পেয়ে অফিসটিতে হানা দেয় পুলিশ ও সরকারের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা। অভিযানের খবর আঁচ করতে পেরে অফিসের নিচে বিপুল অংকের টাকা নিয়ে দাড়িয়ে থাকা ঢাকা মেট্রো-গ-২৬-৭৫২৩ নাম্বারের একটি প্রাইভেট কার আইনশৃংঙ্খলা বাহিনীর অভিযান চালানোর আগেই পালিয়ে যায়।
সমাধান ফাউন্ডেশনের কথিত চেয়ারম্যান খন্দকার মেহেদী হাসানও পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। সেসময় পুলিশ তাকে আটক করে ঝিনাইদহ সদর থানায় নিয়ে যায়। তবে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয় সমাধান ফাউন্ডেশনের অর্গানাইজার ও টাকা আদায়কারী হরিণাকুন্ডু উপজেলার রথখোলা গ্রামের হায়দার হাসনাত।
সরকারের একটি গোয়ন্দা বিভাগ সুত্রে জানা গেছে, প্রায় আড়াই মাস আগে ঝিনাইদহ শহরের ব্যাপারীপাড়া জোড়াপুকুর সড়কে নিঝুম টাওয়ারে অফিস খুলে শত শত যুবক-যুবতীকে কাজের প্রলোভন দেখিয়ে রেজিষ্ট্রেশন করায় সমাধান ফাউন্ডেশনের কথিত চেয়ারম্যান কালীগঞ্জ উপজেলার বারোবাজার সংলগ্ন বাদেডিহী গ্রামের নজরুল ইসলামের ছেলে চিহ্নিত প্রতারক খন্দকার মেহেদী হাসান। এপর্যন্ত ৪৬৯ জনের রেজিষ্ট্রেশন করা হলেও দেড় শতাধীক যুবক যুবতী বিনা স্লিপে লাখ লাখ টাকা জমা দিয়েছেন। এরমধ্যে দেড়’শ যুবক যুবতী প্রায় ৪৬ লাখ টাকা দিয়েছেন।
অভিযুক্ত সমাধান ফাউন্ডেশনের কথিত চেয়ারম্যান খন্দকার মেহেদী হাসান জানিয়েছেন, তারা যুবক যুবতীদের বিভিন্ন প্রডাক্ট এমনকি ব্যাংক থেকে ঋন নিতে সহায়তা করবেন।
কিন্তু আশপাশের জেলায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সমাধান ফাউন্ডেশনের কথিত চেয়ারম্যান খন্দকার মেহেদী হাসান বংশগত ভাবেই দেশসেরা প্রতারক। সারা দেশে অফিস খুলে বেকার ও অসহায় যুবকদের ভুলভাল বুঝিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে ঢাকার উত্তরার ১০ নং সেক্টরে বিপুল বিত্ত বৈভবন গড়ে তুলেছেন।
প্রতারক মেহেদীর অফিসে রক্ষিত কাগজপত্র ঘেটে দেখা যায়, ঝিনাইদহের ৬ উপজেলায় ৪৬৯জন রেজিষ্ট্রেশন করেছেন। এরমধ্যে রেজিষ্ট্রার ৩৯ জনের নাম পাওয়া গেছে। অফিসটিতে গোয়েন্দারা বৈধ কোন কাগজপত্র পাননি। সব ভুয়া ও জাল কাগজ তৈরী করে “সমাধান ফাউন্ডেশন” গঠন করা হয়েছে। অফিসে রক্ষিত কাগজপত্র ঘেটে দেখা গেছে, এই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আরো যে সব প্রতারকরা জড়িত তারা হলেন, সেক্রেটারি জেনারেল এনামুল হক, এক্সিকিউটিভ ডাইরেক্টর শহীদুল্লাহ, রজনী আক্তার, ইঞ্জিনিয়ার মোঃ আব্দুল্লাহ, একেএম সাহিদুর রহমান, বিল্লাল হোসেন, সোহেল আলী, এসএম আশরাফুল্লাহ ও মাহবুবুর রহমান।
শহরের মহিষাকুন্ডু গ্রামের মিজানুর রহমান জানান, তিনি ও তার স্ত্রী তহমিনা খাতুন সমাধান ফাউন্ডেশনের কথিত চেয়ারম্যান খন্দকার মেহেদী হাসানের কাছে ৬১ হাজার, বারোবাজার এলাকার কাজল ৫ লাখ, হরিণাকুন্ডুর জোড়াপুকুর গ্রামের মাজেদা খাতুন ৩০ হাজার ৫০০, চটকাবাড়িয়া গ্রামের মিতা খাতুন ৩০ হাজার ৫০০ টাকা বিনা রশিদে টাকা দিয়েছেন।
এছাড়া সদর উপজেলার লেবুতলা গ্রামের সেলিনা খাতুন, হরিণাকুন্ডু উপজেলার জোড়াপুকুর গ্রামের আফাজ, বড়ভাদড়া গ্রামের আল আমিন, অনিক, সদরের বড়গড়িয়ালা গ্রামের সোহেল রানা, শ্রীপুর গ্রামের হাসানুজ্জামান, বিল্লাল হোসেন ও কোটচাঁদপুর উপজেলার দুর্বাকুন্ডু গ্রামের সাইফুজ্জামানসহ শত শত যুবক টাকা প্রদানের কথা স্বীকার করেন। তারা সমাধান ফাউন্ডেশনের কথিত চেয়ারম্যান খন্দকার মেহেদী হাসান ও জেলা চীফ অর্গানাইজার হায়দার হাসনাতের কাছে টাকা দিয়েছেন বলে জানান।
এ ব্যাপারে ঝিনাইদহ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল্লাহ-আল মামুন জানান, প্রতারক চক্রের খবর পেয়ে পুলিশ সেখানে যায় এবং ভুক্তভোগীর বক্তব্য রেকর্ড করে। অফিসটির কোন বৈধ কাগজপত্র না থাকায় খন্দকার মেহেদী হাসান নামে একজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় আনা হয়েছে।
অভিযানের নেতৃত্ব দেওয়া ঝিনাইদহ সদর থানার এসআই আরিফ জানান, কাগজপত্র দেখে মনে হলো সংস্থাটি প্রতারণার সঙ্গে জড়িত। সমাধান ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান খন্দকার মেহেদী হাসানের কথাবার্তা অসংলগ্ন। একেক সময় একেক তথ্য দিয়ে তিনি বিভ্রান্ত করছেন। এজন্য তাকে থানায় আনা হয়েছে। তিনি জানান, ভুক্তভোগীরা অভিযোগ দিলে পুলিশ পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহন করবে।