ডিসেম্বরে সংসদ নির্বাচন— যুগান্তরের এই প্রধান শিরোনাম অনুযায়ী, প্রকাশ্যে যে যাই বলুক, পর্দার আড়ালে জোর কদমে শুরু হয়েছে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি।
সোমবার ইইউ কমিশনার আদজা লাবিবের সাথে আলাপে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ভোট সম্ভবত এ বছরের ডিসেম্বরের মধ্যেই অনুষ্ঠিত হবে।
মঙ্গলবার প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দীন বলেছেন, ডিসেম্বরে জাতীয় নির্বাচন ধরেই আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি। অক্টোবরের দিকে তফশিল, ডিসেম্বরে ভোট ও জানুয়ারিতে সরকার গঠন-এমন লক্ষ্য নিয়ে নির্বাচনি রোডম্যাপ সাজানোর প্রস্তুতি চলছে বলে জানা গেছে।
এ অবস্থায় রাজনৈতিক দলগুলো জোরেশোরে মাঠে নেমেছে। ভোটের মেরুকরণ কী হবে, কোন দলের সঙ্গে কার জোট হবে; কার সঙ্গে কোথায় আসন সমঝোতা হবে-এসব বিষয়েও আলোচনা শুরু করতে যাচ্ছে। নতুন দলসহ অনেকেই তিনশ আসনে প্রার্থী দেওয়ার কথা বলছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গণ অভ্যুত্থানে ফ্যাসিবাদী সরকারের পতনের পর সারা দেশে দখল, চাঁদাবাজি ও অপকর্মের অভিযোগে বহিষ্কৃত নেতাকর্মীদের আর সুযোগ দেবে না বিএনপি।
এর মধ্য দিয়ে দলের নেতাকর্মীদের বার্তা দিতে চায় যে ‘ব্যক্তির চেয়ে দল বড়, দলের চেয়ে দেশ বড়’। দলের এই সিদ্ধান্ত অমান্য করে ভবিষ্যতে যারা দখল, চাঁদাবাজি ও আইশৃঙ্খলা ভঙ্গ করবে তাদেরকে দল থেকে বহিষ্কার করা হবে বলে সতর্ক করে দেয়া হয়েছে।
একইসঙ্গে দলের সৎ ও ত্যাগী নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের দোসরদের জায়গা বিএনপিতে হবে না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি।
পাশাপাশি দলে কোনো সন্ত্রাসী, অনুপ্রবেশকারী হাইব্রিডদের জায়গা না দেয়ার বিষয়ে কঠোর নির্দেশনা দিয়েছে হাইকমান্ড। দলীয় সূত্রের দাবি, দখল, চাঁদাবাজির মতো ঘটনা যারা ঘটনাচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে সরাসরি ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এমন অপরাধ প্রমাণ হলে জড়িত কাউকে আর বিএনপি’র রাজনীতি করার সুযোগ দেয়া হবে না।
সাত বছর পর গত ২৭শে ফেব্রুয়ারি জাতীয় সংসদের এলডি হল প্রাঙ্গণে দলের বর্ধিত সভায় দলের এই অবস্থান নেতাদের জানিয়ে দেয়া হয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্কের সাবেক অধ্যাপক চৌধুরী রফিকুল আবরার বা সি আর আবরার অন্তর্বর্তী সরকারের নতুন উপদেষ্টা হিসেবে আজ বুধবার শপথ নেবেন, সেই খবরটি নিয়ে শিরোনাম করেছে দৈনিক ইত্তেফাক। বর্তমানে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ শুধুমাত্র পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় দেখবেন।
এতে বলা হয়েছে, শিক্ষাবর্ষের তৃতীয় মাস চললেও এখনও প্রায় ৩ কোটি পাঠ্যবই ছাপানোই হয়নি। ফলে অনেক শিক্ষার্থী পেয়েছে আংশিক বই এবং নতুন শ্রেণির সব বই না পাওয়ায় শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের অনেকটা দিশেহারা অবস্থা।
তার ওপর বই না দিয়েই রমজান, ঈদুল ফিতরসহ কয়েকটি কারণে গত ২৮শে ফেব্রুয়ারি থেকে টানা ৪০ দিনের ছুটি চলছে স্কুলগুলোতে। এতে অস্বস্তিতে পড়েছেন শিক্ষার্থী-অভিভাবকরা।
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) প্রথমে গত জানুয়ারি মাসের মধ্যে সব পাঠ্যবই সরবরাহ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। পরে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং এনসিটিবি শীর্ষ পর্যায়ের ব্যক্তি থেকে শুরু করে সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যক্তিরা বলেছিলেন, ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে সব বই পাবে শিক্ষার্থীরা। শেষ পর্যন্ত সেই প্রতিশ্রুতিও রক্ষা হলো না।
বাস্তবতা বলছে, আসন্ন ঈদের আগে সব শিক্ষার্থীর হাতে সব বই দেওয়া সম্ভব হবে না।
বই পেতে যতই দেরি হচ্ছে, শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার ক্ষতিও ততই বাড়ছে। যেহেতু শিক্ষার্থীদের হাতে বই দিতে শিক্ষাবর্ষের তিন মাসের বেশি সময় লেগে যাচ্ছে, তাই শিক্ষাপঞ্জিতে পরিবর্তন এনে বিশেষ সিলেবাস করার পরামর্শ দিয়েছেন শিক্ষাবিদরা।
এখানে বলা হয়েছে, জনগুরুত্বপূর্ণ সব নাগরিক সেবা এক ছাতার নিচে আনতে নতুন একটি কমিশন গঠন করতে যাচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার।
স্বাধীন এই কমিশনের অধীনে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি), জন্ম-মৃত্যু, বিবাহ ও বিবাহবিচ্ছেদ নিবন্ধন, ইউনিক আইডিসহ নাগরিক সেবার গুরুত্বপূর্ণ সব কাজ হবে।
এই লক্ষ্যে উপদেষ্টা পরিষদের নির্দেশনায় সিভিল রেজিস্ট্রেশন (কমিশন) অধ্যাদেশের খসড়া করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। এই খসড়া পর্যালোচনায় গত সোমবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের এ-সংক্রান্ত আন্তমন্ত্রণালয় কমিটির প্রথম সভা হয়েছে।
সেখানে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) প্রতিনিধিও ছিলেন। তবে ইসি এনআইডি সেবা নিজের কাছে রাখতে চায়। সিইসি গতকাল মঙ্গলবারও বিষয়টি জানিয়েছেন।
এখানে বলা হয়েছে, অর্থনীতি নিয়ে সংস্কারের দু’টি প্রতিবেদন জমা পড়ে আছে। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে সুপারিশ বাস্তবায়নে জোরালো কোনও উদ্যোগ নেই। ফলে অর্থনীতিতে কাঠামোগত সংস্কারের প্রত্যাশা পূরণ হবে কি না, তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে।
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে অর্থনীতিতে দুর্নীতি-অনিয়ম এবং ভবিষ্যৎ অর্থনৈতিক কৌশল নির্ধারণ নিয়ে আলাদা দু’টি প্রতিবেদন তৈরি করিয়েছে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার।
একটি হলো সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের নেতৃত্বাধীন কমিটির তৈরি শ্বেতপত্র। অন্যটি বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সাবেক মহাপরিচালক কে এ এস মুরশিদের নেতৃত্বাধীন টাস্কফোর্সের প্রতিবেদন।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে শ্বেতপত্র জমা দেওয়া হয় গত পহেলা ডিসেম্বর। টাস্কফোর্সের প্রতিবেদন জমা পড়ে গত ৩০শে জানুয়ারি। এর মধ্যে দুই প্রতিবেদনের সুপারিশ বাস্তবায়ন নিয়ে তেমন কোনো উদ্যোগ না নেওয়ায় কমিটির সদস্যদের মধ্যে হতাশা তৈরি হয়েছে। কেউ কেউ মনে করছেন, সরকার অর্থনৈতিক সংস্কারকে গুরুত্ব দিচ্ছে না।
এখানে বলা হয়েছে, গ্যাসের ঘাটতি দিনে প্রায় ১৩৫ কোটি ঘনফুট। গ্যাস-স্বল্পতায় সবচেয়ে বেশি ধুঁকছে শিল্প খাত। এখন চাহিদার চেয়ে ৩০ শতাংশ কম গ্যাস পাচ্ছে শিল্পকারখানা। গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, সাভার, নরসিংদীসহ দেশের শিল্পাঞ্চলে এই সংকট দিন দিন বাড়ছেই।
এতে উৎপাদনে ছেদ পড়ার পাশাপাশি বন্ধ হয়েছে শতাধিক কারখানা। বাধ্য হয়ে চলছে শ্রমিক ছাঁটাই। বেকার হয়ে পড়া শ্রমিকরা নানা দাবিতে প্রায় দিনই সড়ক অবরোধ, ভাঙচুরসহ বিক্ষোভ করছেন। উৎপাদনে ধাক্কা লাগায় কমছে পণ্য রপ্তানি, বিদেশ থেকে বাড়ছে কাঁচামাল আমদানি।
ব্যবসায়ীরা জানান, ভোগান্তি এমন পর্যায়ে ঠেকেছে, কারখানা চালু রাখার চেয়ে বন্ধ রাখলেই লাভ। বারবার শিপমেন্ট বাতিল করতে হচ্ছে। এর মধ্যে নতুন কারখানার গ্যাসের দর দ্বিগুণ করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। গ্যাসের দাম বাড়লে নতুন বিনিয়োগ আসবে না।
জ্বালানি বিশ্লেষকরা বলছেন, সহসাই গ্যাস সংকট দূর হবে না। আগে দেশিয় গ্যাসের অনুসন্ধানের চেয়ে আমদানিতেই সরকারের ঝোঁক ছিল বেশি। সম্ভাবনা থাকার পরও দীর্ঘদিন ধরে গ্যাস অনুসন্ধানে অবহেলা করা হয়েছে। এতে গ্যাসের উৎপাদন কমেছে।
এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এবারের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে সময় সংকটের কারণে নির্বাচন কমিশন (ইসি) দল নিবন্ধনের জন্য সময়সীমা উল্লেখ করে আবেদন আহ্বান নাও করতে পারে।
ইসির পক্ষে বলা হচ্ছে, গণবিজ্ঞপ্তি জারি করে আবেদন আহ্বানের বিষয়টি আইনগতভাবে বাধ্যতামূলক নয়। এরই মধ্যে অনেক দলের আবেদন জমা হয়েছে।
গত বছর আগের ইসির কাছে আবেদন করে যেসব দল নিবন্ধন পায়নি সেসব দলের অনেকে তাদের আবেদন পুনর্মূল্যায়নের অনুরোধ জানিয়েছে।
বর্তমান ইসি তাদের জানিয়ে দিয়েছে, নিবন্ধন চাইলে নতুন করে আবেদন করতে হবে। অন্তত ২৯টি দল নতুন করে আবেদনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানা গেছে।
নতুন ১৩টি দল আবেদন করেছে এবং আরও বেশ কয়েকটি দল ইসির সংশ্লিষ্ট শাখায় যোগাযোগ করেছে। কিন্তু নির্বাচন কমিশন অপেক্ষা করছে আইন সংস্কারের।
এখানে বলা হয়েছে, বাণিজ্য সংগঠন আইন ২০২৩-এর বিধি প্রণয়ন করছে অন্তর্বর্তী সরকার। এ বিধি প্রণয়নের কাজ শেষে ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বারস অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (এফবিসিসিআই) নির্বাচন আয়োজনের কথা রয়েছে।
জানা গেছে, নতুন এ বিধিতে সংগঠনটির মোট পরিচালকের সংখ্যা নামিয়ে আনা হতে পারে ৫০-এর নিচে। তাদের মধ্যে মনোনীত পরিচালকের সংখ্যা কমিয়ে আনা হতে পারে ১২-তে।
বর্তমানে এফবিসিসিআই পর্ষদের মোট ৮০ পরিচালকের মধ্যে মনোনীত পরিচালকের পদ আছে ৩৪টি। এর মধ্যে ১৭টিতে মনোনয়ন দেয়া হয় চেম্বার গ্রুপ (বিভিন্ন চেম্বার) থেকে। আর অ্যাসোসিয়েশন গ্রুপ (বাণিজ্য সংগঠন) থেকে দেয়া হয় বাকি ১৭টিতে।
বাকি পরিচালকরা সরাসরি নির্বাচিত হয়ে আসেন।
মঙ্গলবার সকালে ঢাকার গুলশানে গুম কমিশনের কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “গুমের শিকার হয়ে ফিরে না আসা ৩৩০ জন ব্যক্তির বর্তমান অবস্থা বা ভাগ্য সম্পর্কে অনুসন্ধান চলমান আছে। তবে সাধারণভাবে বলা যায় তাদের ফিরে আসার আশা ক্ষীণ।”
তিনি বলেন, “সরকারের সর্বোচ্চ নির্দেশদাতা ছিলেন প্রধানমন্ত্রী। তার নির্দেশে গুমের ঘটনা ঘটেছে। এটা আমরা আগেও বলেছি।”
গুমসংক্রান্ত তদন্ত কমিশনের সভাপতি অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী বলেছেন, দেশে গত ১৫-১৬ বছরে গুমের প্রতিটি ঘটনা সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশেই হয়েছে।
“প্রতিটি গুমের ঘটনা সরকারের ওপরের নির্দেশে করা হয়েছে। ওপর বলতে তখনকার প্রধানমন্ত্রীই হবেন,” বলেন তিনি।
তিনি গতকাল আরও জানান, কমিশনে দাখিল করা গুম সংক্রান্ত অভিযোগগুলোর মধ্যে ৭৪টি অভিযোগ তদন্ত ও নিষ্পত্তির জন্য বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক বরাবর পাঠানো হয়েছে।
ইতোমধ্যে বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক, ডিজিএফআইয়ের মহাপরিচালক ও পাসপোর্ট অধিদফতরের মহাপরিচালকসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সাক্ষাৎকার নেয়া হয়েছে এবং হচ্ছে।
উল্লেখ্য, এই একই খবর আজ দ্য ডেইলি স্টার ও নিউ এজ পত্রিকারও প্রধান শিরোনাম।