কোটা সংস্কার করে সেটি ৫৬ শতাংশ থেকে সাত শতাংশে নামিয়ে আনার ব্যাপারে সুপ্রিম কোর্টের আদেশ সংক্রান্ত খবর সব গণমাধ্যমের প্রধান শিরোনামে উঠে এসেছে। এক্ষেত্রে পত্রিকাগুলোর প্রথম পাতার নির্বাচিত কিছু খবর তুলে ধরা হল।
কালের কণ্ঠের প্রথম পাতার খবর, ‘ছুটি শেষে মঙ্গলবারই প্রজ্ঞাপন জারি হতে পারে’। প্রতিবেদনে মূলত আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের বক্তব্য তুলে ধরা হয়েছে।
তিনি বলেছেন, আপিল বিভাগের রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে কোটা রাখার নির্দেশনা বিষয়ক পরিপত্র যথাসম্ভব শীঘ্রই জারি করা হয়। সোমবার ছুটি থাকায় মঙ্গলবারই প্রজ্ঞাপন জারি হতে পারে।
কোটা সংস্কার বিষয়ে আপিল বিভাগের বিভাগের রায়কে স্বাগত জানিয়ে আইনমন্ত্রী বলেন, “কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরতদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে লিভ টু আপিল শুনানির তারিখ এগিয়ে আনার জন্য অ্যাটর্নি জেনারেলকে নির্দেশ দিয়েছিলাম”।
আপিল বিভাগের এই রায়টি অত্যন্ত বিচক্ষণ রায় বলে মন্ত্রী উল্লেখ করেন।
দ্য ডেইলি স্টারের প্রধান শিরোনাম, ’93pc on merit, 7pc from quota’ অর্থাৎ, ’৯৩ শতাংশ মেধার ভিত্তিতে, ৭ শতাংশ কোটায়’
প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থায় বড় ধরনের সংস্কার এনে রোববার আদেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। তবে সরকার চাইলে বদলাতে পারবে, এমন সুযোগ রাখা হয়েছে।
আগে যেখানে কোটা ছিল ৫৬ শতাংশ, সেটা এবার কমিয়ে সাত শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের আদেশ অনুযায়ী চাকরিতে এবার ৯৩ শতাংশ নিয়োগ হবে মেধার ভিত্তিতে।
সাত শতাংশ কোটার মধ্যে পাঁচ শতাংশ থাকবে মুক্তিযোদ্ধা বা বীরাঙ্গনাদের সন্তানদের জন্য। বাকি এক শতাংশ কোটা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী এবং আরেক শতাংশ কোটা প্রতিবন্ধী ও তৃতীয় লিঙ্গের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
ওই সংক্ষিপ্ত রায়ে সর্বোচ্চ আদালত মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি-নাতনিদের কথা কোথাও উল্লেখ করেনি। যদি কোটা পূরণ না হয় তাহলে সেটা মেধা দিয়ে পূরণ করার কথাও বলা হয়েছে।
এছাড়া কোটা পুনর্বহাল সংক্রান্ত হাইকোর্টের রায়ও বাতিল ঘোষণা করে সর্বোচ্চ আদালত।
আজকের পত্রিকার প্রথম পাতার খবর, ‘রায়ে অসন্তুষ্ট ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ও নারী অধিকারকর্মীরা’। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সরকারি চাকরিতে নতুন কোটা পদ্ধতি নিয়ে আদালতের রায়ে সন্তুষ্ট নন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী এবং নারী অধিকার কর্মীরা।
ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জন্য পাঁচ শতাংশ কোটা পুনর্বহালের দাবি জানিয়েছে ‘আদিবাসী কোটা সংস্করণ পরিষদ’ এবং ‘বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ নারী কোটার দাবি জানিয়েছে’।
রোববার পৃথক বিবৃতিতে সংগঠনগুলো এ দাবি জানায়। আদিবাসী কোটা সংরক্ষণ পরিষদের আহ্বায়ক অলিক মৃর পাঠানো বিবৃতিতে বলা হয়, আদিবাসীদের কোটা পাঁচ শতাংশ থেকে কমিয়ে এক শতাংশ করা ন্যায়সঙ্গত হয়নি।
এতে অনগ্রসর জাতিগোষ্ঠীর জীবনমানের গুণগত পরিবর্তন অসম্ভব হয়ে পড়বে। আদিবাসীসহ অনগ্রসর জাতিগোষ্ঠী পিছিয়ে পড়বে।
অন্যদিকে মহিলা পরিষদের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রায় নারী পুরুষের সমতার কথা বলা হয়েছে। এই লক্ষ্যে পৌঁছাতে নারী কোটা অবশ্যই প্রয়োজন।
ইত্তেফাকের প্রধান শিরোনাম, ‘শাটডাউন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা এক পক্ষের, রায়কে ইতিবাচক বলছে অন্যপক্ষ’
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কোটা সংস্কারের দাবি আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের একটি পক্ষ আপিল বিভাগের কোটা সংস্কারের রায়কে ইতিবাচক বলছেন এবং এই রায়কে স্বাগত জানিয়েছেন।
অন্যদিকে আপিল বিভাগের রায়ের পর গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে আন্দোলনরত অন্য অংশটি।
তাদের মতে, ভবিষ্যতে কোটার পরিমাণ নিয়ে সরকারের যথেচ্ছ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে। তারা আগামী সপ্তাহের মধ্যে জরুরি অধিবেশন ডেকে স্থায়ী ব্যবস্থা হিসেবে এই সংক্রান্ত আইন পাস করার দাবি জানায়।
বণিক বার্তার প্রথম পাতার খবর, ‘কারফিউর দ্বিতীয় দিনে ১৫ জনের মৃত্যু’। প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, কোটা সংস্কারের দাবি কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচির মধ্যে কারফিউর দ্বিতীয় দিনে ঢাকাসহ সারা দেশে ১৫ জনের মৃত্যুর তথ্য পাওয়া গিয়েছে।
এরমধ্যে সাত জন আগে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় ঢাকার তিনটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন।
এদিকে ঢাকা ও নরসিংদীতে রোববারের সংঘর্ষের ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গিয়েছেন বাকি আট জন। এদিন পুলিশ ও আনসার সদস্যসহ আহত হয়েছেন আরো অন্তত ৬৫ জন।
এসব সংঘর্ষের ঘটনার অধিকাংশই ঘটেছে সন্ধ্যা ও রাতের বেলায়। দিনভর ঢাকার অন্যান্য স্থানে মোটামুটি শান্তিপূর্ণ অবস্থা দেখা গেলেও বিপরীত চিত্র ছিল যাত্রাবাড়ী-দনিয়া-শনির আখড়া এলাকায়।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, ‘দুই একদিনের মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসবে। চলমান কারফিউ অব্যাহত থাকবে সোমবারও। বেলা দুটা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত তা শিথিল থাকবে।
তবে মঙ্গলবার থেকে ঢাকা মহানগর ও ঢাকা জেলা, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী ও গাজীপুরের কারফিউর সিদ্ধান্ত নেবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। বাকি জেলাগুলোয় এ সিদ্ধান্ত নেবে জেলা প্রশাসন।
প্রথম আলোর প্রথম পাতার খবর, ‘সমন্বয়ক নাহিদকে তুলে নিয়ে নির্যাতন’। প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক মো. নাহিদ ইসলামের বাঁ উরু, দুই বাহু আর কাঁধে বড় জায়গা জুড়ে রক্ত জমে তামাটে হয়ে আছে।
শরীরে মারের চিহ্ন নিয়ে ঢাকার একটি হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে ছিলেন তিনি।
নাহিদ বললেন, শুক্রবার গভীর রাতে এক বন্ধুর বাড়ি থেকে সাদা পোশাকের এক দল লোক তাকে তুলে নিয়ে গিয়ে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করে।
রোববার ভোরে তিনি নিজেকে রাস্তার পাশে আবিষ্কার করেন। কোনমতে একটি অটোরিকশায় করে তিনি বাসায় ফেরেন। বাসা থেকে হাসপাতালে যান।
এদিকে ছেলের খোঁজে মা মমতাজ নাহার ও বাবা বদরুল ইসলাম শনিবার সারা দিন মিন্টু রোডে পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের-ডিবি কার্যালয়ের সামনে বসে ছিলেন।
দেশ রূপান্তরের প্রথম পাতার খবর, ‘পরিস্থিতি খুব শিগগিরই স্বাভাবিক হবে’। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশের চলমান পরিস্থিতিকে অভ্যন্তরীণ বিষয় উল্লেখ করে খুব শিগগিরই এটি স্বাভাবিক হবে দৃঢ় আশা প্রকাশ করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাসান মাহমুদ।
তিনি বলেছেন, রাষ্ট্রবিরোধী, স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি ও দুষ্কৃতিকারীরা সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা সংস্কারে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মধ্যে ঢুকে জনগণের ওপর রাষ্ট্রের সম্পত্তির ওপর হামলা পরিচালনা করেছে।
উদ্ভূত এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকার কূটনীতিকদের কনসার্ন সম্পর্কে সচেতন রয়েছে। একইসঙ্গে ভিয়েনা কনভেনশনের আওতায় নিরাপত্তা নিশ্চিত রাখতে সরকার বদ্ধ পরিকর।
রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এই বক্তব্য দেয়ার সময় সেখানে ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, চীন, জার্মানিসহ বিভিন্ন দেশ ও আন্তর্জাতিক মিশন প্রধানসহ ৮৫ জন ব্রিফিংয়ে অংশ নেন।
নয়া দিগন্তের প্রথম পাতার খবর, ‘সারা দেশে পুলিশের গ্রেফতার অভিযান’। প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে চলমান পরিস্থিতিতে কারফিউর মধ্যে ঢাকাসহ সারা দেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাঁড়াশি অভিযান অভিযান শুরু হয়েছে।
বিশেষ করে ঢাকায় শনিবার রাত থেকে চিরুনি অভিযান চলছে। গত রাত ৮টার পর থেকে পুলিশ, র্যাব, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালায় বলে জানা গিয়েছে।
এছাড়া সারা দেশে বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় পুলিশ গ্রেফতার অভিযান চালায়।
রোববার রাতে কারফিউর মধ্যে সেনা টহলের পাশাপাশি বিজিবি, পুলিশ, র্যাব ও পুলিশের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদের ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় ও গুরুত্বপূর্ণ স্থানে টহল দিতে দেখা গিয়েছে।
যুগান্তরের প্রথম পাতার খবর ‘আইসিটি ও এভিয়েশন খাতে কয়েকশ কোটি টাকার ক্ষতি’।
প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ৪০টি পয়েন্টে বড় ধরণের ক্ষয়ক্ষতি হওয়ায় শিগগিরই ইন্টারনেট সংযোগ চালু করা সম্ভব হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক।
রোববার তিনি বলেন, এসব ক্ষতিগ্রস্ত পয়েন্ট মেরামত করতে আরো সময় লাগবে। তিনি এই সময়ে দেশবাসীকে ধৈর্য ধরার আহ্বান জানান এবং সমস্যার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন।
এদিকে ইন্টারনেট ব্ল্যাকআউটের কারণে আইসিটি খাতে দিনে ১০০ কোটি টাকা লোকসান হচ্ছে বলে জানিয়েছেন এই খাতের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
এছাড়া দেশীয় অনলাইনভিত্তিক আর্থিক সেবা খাতে ক্ষতি হচ্ছে দিনে কমপক্ষে ৫০ থেকে ৬০ কোটি টাকার।
অপরদিকে উড়োজাহাজের টিকিট বিক্রি খাতে দিনে ১২০ কোটি টাকার বেশি অর্থ লোকসান হচ্ছে।
কোটা সংস্কারের বাইরে আন্তর্জাতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ আরেকটি খবর প্রতিটি পত্রিকার প্রথম পাতায় রয়েছে। সমকালের প্রথম পাতার খবর, ‘নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালেন বাইডেন’
প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন।
তিনি ভাইস প্রেসিডেন্ট কামালা হ্যারিসকে প্রেসিডেন্ট পদে সমর্থন দিয়েছেন। সোমবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আকস্মিক এই ঘোষণা দেন বাইডেন।
সম্প্রতি সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বিতর্কে পরাজয় এবং শারীরিক অসুস্থতার কারণে নভেম্বরের নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার জন্য বাইডেনের ওপর ডেমোক্র্যাট নেতাদের একাংশের ভীষণ চাপ ছিল।
বাইডেন এতদিন তা উপেক্ষা করে আসছিলেন। তবে গত সপ্তাহে তিনি প্রথমবার ইঙ্গিত দেন, চিকিৎসকরা বললে তিনি সরে দাঁড়াতে পারেন।