ছবির উৎস, Getty Images
যুক্তরাষ্ট্রের করদাতাদের দেয়া ডলার বাঁচাতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন খাতে বরাদ্দ করা বাজেট স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি ইলন মাস্কের নেতৃত্বাধীন নতুন পরামর্শক সংস্থা। এর মধ্যে বাংলাদেশে রাজনৈতিক পরিস্থিতি শক্তিশালী করার জন্য ২৯ মিলিয়ন বা প্রায় তিন কোটি ডলারের বরাদ্দ রয়েছে।
এছাড়া ভারতে ভোটার উপস্থিতি বাড়াতে ২১ মিলিয়ন বা ২ কোটিরও বেশি ডলার বরাদ্দ ছিল এই বাজেট অনুযায়ী, যেটা বাতিল হয়েছে বলে এক এক্স (সাবেক টুইটার) পোস্টে জানিয়েছে ডিপার্টমেন্ট অফ গভার্নমেন্ট এফিসিয়েন্সি।
বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন দেশে নির্বাচন ব্যবস্থার কনসোর্টিয়াম এবং রাজনৈতিক প্রক্রিয়া শক্তিশালী করতে ৫০০ কোটির কাছাকাছি ডলার বা ৪৮৬ মিলিয়ন ডলার বাজেট স্থগিত করেছে এই সংস্থাটি।
ট্রাম্প নতুন দফায় দায়িত্ব নেয়ার পর এই ‘ডিপার্টমেন্ট অফ গভার্নমেন্ট এফিসিয়েন্সি’ বা ডিওজিই- নামে উপদেষ্টা পর্ষদ গঠন করেছে যার কাজ যুক্তরাষ্ট্রের করদাতাদের অর্থে যেসব সরকারি চাকরি ও অন্যান্য খরচ হচ্ছে তার লাগাম টানা।
ফেডারেল কর্মী কমানো এবং যেখানেই অর্থের অপচয় মনে হবে সেখানেই রাশ টেনে ধরবে ইলন মাস্কের এই সংস্থা।
বাজেট স্থগিত হওয়ার এই ঘোষণায় লৈঙ্গিক সমতা ও নারী ক্ষমতায়নের জন্য বরাদ্দ ৪ কোটি ডলারও বাতিল করা হয়েছে।
ছবির উৎস, Getty Images
ডিপার্টমেন্ট অফ গভার্নমেন্ট এফিসিয়েন্সি কী?
ডিপার্টমেন্ট অফ গভার্নমেন্ট এফিসিয়েন্সি, অর্থাৎ এর নামের মধ্যেই সরকার আছে কিন্তু আসলে এটি সরকারি বিভাগ নয়, সরকারের বিভাগ হতে হলে একে কংগ্রেসের আইন দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হতে হবে।
এটি ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশগুলির মধ্যে একটির মাধ্যমে তৈরি হয়েছিল, যেখানে প্রতিটি সরকারি সংস্থার জন্য নিবেদিত কমপক্ষে চারজন কর্মচারী সহ একটি উপদেষ্টা সংস্থা হিসাবে কাজ করে।
এটিকে সরকারের গতানুগতিক কাঠামোর বাইরের একটি প্রতিষ্ঠান বলেই ধারণা করা হচ্ছে।
ট্রাম্পের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সরকারের বাইরে থেকে পরামর্শ এবং নির্দেশনা দেবে ডিপার্টমেন্ট অফ গভর্নমেন্ট এফিসিয়েন্সি।
এর লক্ষ্য, সরকারের মধ্যে “উদ্যোক্তার দৃষ্টিভঙ্গি” নিয়ে আসা। “এটা হবে আমাদের সময়ের ‘দ্য মানহাটন প্রজেক্ট’,” যোগ করেন ট্রাম্প।
ম্যানহাটন প্রজেক্টের মাধ্যমে আমেরিকার প্রথম পারমাণবিক বোমা তৈরি করা হয়েছিল।
২০২৬ সালের চৌঠা জুলাই নাগাদ এ দপ্তরের কাজ সমাপ্ত করার সময়সীমা নির্ধারণ করেছেন তিনি।
চৌঠা জুলাই যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতা দিবস। ট্রাম্পের পক্ষ থেকে ঘোষণা আসার পর প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন মাস্ক ও রামাস্বামী। দু’জনই একরকম হুঁশিয়ারি জানিয়েছেন তাদের বক্তব্যে।
“এটা সিস্টেমের মধ্যে একটা শকওয়েভ হিসেবে আবির্ভূত হবে। সেইসঙ্গে সরকারি অপচয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট যে কারো জন্যই কাল হয়ে দাঁড়াবে,” নিজের মালিকানাধীন সামাজিক মাধ্যম এক্সের এক পোস্টের জবাবে লিখেছেন ইলন মাস্ক।
রামাস্বামীও তার এক্স অ্যাকাউন্টে লিখেছেন, “আমরা কোনো ভদ্রতা দেখাতে যাবো না।”
ছবির উৎস, Getty Images
‘ডিওজিই’ নিয়ে আমেরিকানরা কি মনে করে?
বিবিসির মার্কিন অংশীদার সিবিএস নিউজের একটি জরিপ বলছে, ডিওজিই ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে সমর্থন উপভোগ করেছেন।
ব্যক্তিগতভাবে ট্রাম্প প্রশাসনে ইলন মাস্কের প্রভাব কতোটা থাকা উচিৎ তা নিয়ে অনেকে দ্বিমত পোষণ করলেও, বেশিরভাগ আমেরিকানরা, বিশেষ করে রিপাবলিকান ভোটাররা – এই নতুন সংস্থার কাজকে সমর্থন করেছিল।
বর্তমানে যে জনশক্তি কাজ করছে তার ২০ লাখেরও বেশি এবং বাইডেন প্রশাসনের অবকাঠামো প্রজেক্টগুলোর কারণে ২০২৩ সালে এই জনশক্তি বৃদ্ধি পেয়েছে সবচেয়ে বেশি।
রক্ষণশীল চিন্তার সংস্থা ইকনমিক পলিসি ইনোভেশন সেন্টারের এক জ্যেষ্ঠ গবেষক ডেভিড দিচ মনে করেন, ডিওজিইর কার্যকারিতা আছে।
“এই সংস্থাটি ফেডারেল সরকারের বিভিন্ন দিকে আলোকপাত করছে, তারা প্রশ্ন করছে কীভাবে আমেরিকার ট্যাক্সদাতাদের অর্থ ব্যবহার করা উচিৎ?”
এই নিবন্ধে Twitterএর কনটেন্ট রয়েছে। কোন কিছু লোড করার আগে আমরা আপনার অনুমতি চাইছি, কারণ তারা হয়ত কুকি এবং অন্যান্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে থাকতে পারে। আপনি সম্মতি দেবার আগে হয়ত Twitter কুকি সম্পর্কিত নীতি এবং ব্যক্তিগত বিষয়ক নীতি প়ড়ে নিতে চাইতে পারেন। এই কনটেন্ট দেখতে হলে ‘সম্মতি দিচ্ছি এবং এগোন’ বেছে নিন।
সতর্কবাণী: বিবিসির নয় এমন ওয়েবসাইটের কনটেন্টের জন্য বিবিসি দায়ী না
End of Twitter post
ছবির কপিরাইট
Twitter -এ আরো দেখুনবিবিসি। বাইরের কোন সাইটের তথ্যের জন্য বিবিসি দায়বদ্ধ নয়।
অধ্যাপক ইউনূসের সাথে ইলন মাস্কের ভিডিও কল
এর আগে বৃহস্পতিবার একটি এক্স পোস্টে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহম্মন ইউনূস জানান, “স্টারলিংক স্যাটেলাইট ইন্টারনেট সেবা বাংলাদেশে নিয়ে আসা এবং ভবিষ্যতে একসাথে কাজ করার ব্যাপারে স্পেস এক্স, টেসলা ও এক্স-এর মালিক ইলন মাস্কের সাথে তাৎপর্যময় আলাপ হয়েছে।”
বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সময় রাত ৯টার দিকে তাঁদের মধ্যে ফোনে কথা হয়।
স্টারলিংক একটি ইন্টারনেট যোগাযোগ ব্যবস্থা যার মাধ্যমে বিশ্বের খুব দুর্গম ও কঠিন এলাকাতেও ইন্টারনেট সেবা দেয়া যায়, আফ্রিকার বেশ কয়েকটি দেশে এরই মধ্যে স্টারলিংক সেবা দেয়া শুরু করেছে।
স্টারলিংক কয়েক বছর ধরেই বাংলাদেশের বাজারে এই সেবা নিয়ে ঢোকার চেষ্টা করে আসছে। সম্প্রতি তাদের একটি দল ঢাকায় এসে বিনিয়োগ বোর্ডের সাথে বৈঠক করে গেছে।
মূলত সাধারণ ইন্টারনেট সেবা যেখানে পৌঁছানো যায় না সেখানে সেবা দিতে সক্ষম স্টারলিংক । বিশ্বব্যাপী ইন্টারনেট সেবা দিতে পাঁচ বছর আগে মহাকাশে কৃত্রিম উপগ্রহ পাঠিয়েছে স্টারলিংক।
ইন্টারনেটের গতি অনেক বেশি হওয়ায় গভীর সমুদ্র বা পাহাড়ি এলাকার মতো দুর্গম জায়গাতেও গেমিং, স্ট্রিমিং ও দ্রুত ডাউনলোড নিশ্চিত করতে পারে তারা।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এ ধরনের প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য রেগুলেটরি ও লাইসেন্সিং নীতিমালা চূড়ান্ত করার লক্ষ্যে যে খসড়া গাইডলাইন তৈরি করা হয়েছে তাতে নজরদারি ও আড়িপাতার সুযোগ রাখা হয়েছে এবং সেটি চূড়ান্তভাবে বহাল থাকলে ইন্টারনেট সেবার ওপর সরকারের এখন যে খবরদারির সুযোগ আছে তাতে কোনো পরিবর্তন আসবে না।
ফাইবার অপটিক বা ক্যাবল ব্যবহার করে এখন যারা ইন্টারনেট সেবা দিচ্ছেন সেই ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার বা আইএসপি ব্যবসায়ীরা বলছেন স্যাটেলাইট ভিত্তিক ইন্টারনেট সেবার লাইসেন্স দেয়ার ক্ষেত্রে কী ধরনের শর্ত থাকে- সেটিই নির্ধারণ করবে দেশের ইন্টারনেট ব্যবসা খাতে এর প্রভাব কেমন বা কতটা হবে।