করোনাভাইরাসের তাণ্ডব চলছে বিশ্বব্যাপী।প্রতিদিনই বাড়ছে এই ভাইরাসে আক্রান্ত এবং মৃতের সংখ্যা।কোনো ব্যক্তির ভেতর করোনাভাইরাস সংক্রমণের প্রাথমিক কিছু লক্ষণ দেখা দিলে তিনি আতঙ্কিত হয়ে উঠেন।
কী করতে হবে? কোথায় যোগাযোগ করা প্রয়োজন? ডাক্তার পাবো কোথায়? হাসপাতালে যেতে হবে কিনা?-এসব প্রশ্ন তখন সামনে আসে।
সর্বপ্রথমে মনে রাখতে হবে করোনাভাইরাস সংক্রমণের কোনো সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই।
সারা পৃথিবীতে যত মানুষ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছে তাদের ৮০ শতাংশেরও বেশি বাসায় থেকে নানাভাবে উপশমের চেষ্টা করছেন।
বাসায় অবস্থান করে চিকিৎসা নেবার নেবার ক্ষেত্রে যেসব বিষয় মনে রাখতে হবে সেগুলো নিচে তুলে ধরা হলো।
নিজেকে বিচ্ছিন্ন করুন
যদি সন্দেহ হয় যে আপনার মধ্যে কভিড-১৯-এর এক বা একাধিক লক্ষণ দেখা যাচ্ছে, তাহলে তাৎক্ষণিকভাবে নিজেকে পরিবারের অন্য সদস্যদের থেকে বিচ্ছিন্ন বা ‘আইসোলেট’ করুন।
এতে অন্যদের মাঝে সংক্রমণের আশংকা কমে আসবে।
জ্বর আসলে কী করবেন?
করোনাভাইরাস সংক্রমণ থামানোর যেহেতু কোনো ঔষধ নেই সেজন্য সাধারণ সর্দি-কাশির ক্ষেত্রে যে ধরণের পদক্ষেপ নেয়া হয় সেগুলো অনুসরণ করার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা।
ঢাকার বক্ষব্যধি হাসপাতালের চিকিৎসক কাজী সাইফুদ্দিন বেন্নুর বলেন, প্যারাসিটামল খাওয়া এবং ‘গার্গল’ করা যেতে পারে।
জ্বর এলেই আতঙ্কিত না হাবার পরামর্শ দিচ্ছেন তিনি।পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা।
কফ থাকলে যা করবেন
যদি আপনার কফ জমে থাকে বসার সময় পিঠে ভর দিয়ে হেলান দিয়ে না বাসাই ভালো। মেরুদণ্ড সোজা করে বসুন। এতে কফ কিছুটা হালকা হয়ে আসতে পারে।
ব্রিটেনের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসের ওয়েবসাইটে এ তথ্য দেয়া হয়েছে।
সেখানে আরো বলা হয়েছে, কফ হালকা করার জন্য এক চামচ মধু খেতে পারেন। এতে উপকার হতে পারে। তবে বারো বছর বয়সের নিচে বাচ্চাদের মধু দেবেন না।
টেস্ট সেন্টারের ফোন নম্বর রাখুন
বাংলাদেশে এখন ৪৫টির মতো ল্যাবরেটরিতে করোনাভাইরাসের টেস্ট করানো হচ্ছে। আপনার নিকটস্থ টেস্ট সেন্টার কোথায় হতে পারে সে সংক্রান্ত খোঁজ রাখুন।
এখন কয়েকটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বাসায় গিয়ে নুমনা সংগ্রহ করছে। তাদের ফোন নম্বর সংগ্রহ করে রাখতে পারেন।
অক্সিজেন ভাড়া নিতে পারেন
শ্বাসকষ্ট হলে রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করানোর প্রয়োজন হয়। কিন্তু বাংলাদেশে অনেক ক্ষেত্রেই সেটি সম্ভব হচ্ছে না।
এক হাসপাতাল থেকে আরেক হাসপাতালে ছুটাছুটি করতে করতে রোগীর অবস্থা আরো অবনতি হয়।
রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করাতে না পারলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী বাসায় অক্সিজেন নিতে পারেন।
ঢাকার বক্ষব্যধি হাসপাতালের চিকিৎসক কাজী সাইফুদ্দিন বেন্নুর বলেন, অক্সিজেন বাসায় নেবার সিস্টেম আছে। আমরা যখন লং টাইম অক্সিজেন থেরাপি দেই, আমরা কখন অক্সিজেন বাসায় নিতে বলি রোগীদের।
তিনি বলেন, কভিড-১৯ রোগীদের ক্ষেত্রে হাই ফ্লো অক্সিজেন দিতে হবে।
টেলিমেডিসিন সম্পর্কে জেনে রাখুন
করোনা সংক্রমনের এই সময়টিতে অনেক চিকিৎসক রোগীদের সরাসরি দেখছেন না। অধিকাংশ ডাক্তারের চেম্বারও বন্ধ।
তবে গত দুইমাসে বহু ডাক্তার টেলিফোন এবং ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন।
বেশকিছু সরকারি এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ডাক্তারদের মাধ্যমে টেলিফোনে অথবা ভিডিও কনফারেন্সের সাহায্যে চিকিৎসা সেবা দিচ্ছে।
যেসব প্রতিষ্ঠান এ ধরণের সুবিধা দিচ্ছে তাদের ফোন নম্বর হাতের কাছে রাখতে পারেন। টেলিফোন নম্বর জানা থাকলে প্রয়োজনের সময় দ্রুত কাজে লাগবে।
চিকিৎসক সাইফুদ্দিন বেন্নুর জানান, ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে চিকিৎসা সেবা দিয়ে তিনি ৭০ থেকে ৭৫ শতাংশ পর্যন্ত সন্তুষ্ট হতে পারেন।
তিনি বলেন, বেশিরভাগে ক্ষেত্রে রোগীদের উদ্বেগ প্রশমনেও ভূমিকা রাখে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে চিকিৎসা সেবা।
সূত্র : বিবিসি বাংলা