২০২৩র ৩১শে অক্টোবর কলকাতার ইডেন গার্ডেন্সে বাংলাদেশ দল যে পরাজয়ের মুখে পড়ল, সে রকম বিষাদের দিন সে দেশের ক্রিকেটে খুব কমই এসেছে।
পাকিস্তানের কাছে হারার পর স্টেডিয়ামে আসা বেশ কয়েক হাজার বাংলাদেশি সমর্থক শুধু হতাশাতেই ডুবলেন না, দেশের প্রিয় তারকাদের গালিগালাজ করতেও ছাড়লেন না!
আসলে বিশ্বকাপে টানা ছ’টি ম্যাচ হেরে বাংলাদেশ এখন টুর্নামেন্টে এমন এক অবস্থায়, যা সে দেশের ক্রিকেট-পাগল সমর্থকরা কেউ ভাবতেই পারেননি।
নেট রানরেটে ইংল্যান্ডের তুলনায় সামান্য এগিয়ে থাকায় বিশ্বকাপের পয়েন্ট টেবিলে বাংলাদেশ এখনও সবার নিচে নেই ঠিকই – কিন্তু তারাই প্রথম দল যারা টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে গেছে।
পরপর ছ’টা ম্যাচেই বাংলাদেশ হেরেছে রীতিমতো বিশাল ব্যবধানে – আর সেই কাটা ঘায়ে নুনের ছিটে দিয়েছে ‘দুর্বল’ নেদারল্যান্ডসের বিরুদ্ধে পরাজয়।
পরিস্থিতি এমন যে বাংলাদেশের ক্রিকেট সাংবাদিকরাই রসিকতা করে বলছেন, “এই বিশ্বকাপে আনেকগুলো আপসেট হলেও এখন মনে হচ্ছে সব চেয়ে বড় আপসেট ছিল ধরমশালাতে বাংলাদেশের কাছে আফগানিস্তানের হার!”
টুর্নামেন্টের এই পর্যায়ে আফগানিস্তানের সঙ্গে দেখা হলে সেই ম্যাচেও বাংলাদেশ নির্ঘাত হারত – এটা নিয়ে যেন বিন্দুমাত্র সংশয় নেই তাদের।
তবে বাস্তবতা হল, এই কঠিন সঙ্কট থেকেও বাংলাদেশ ক্রিকেটকে উত্তরণের চেষ্টা করতেই হবে – সাকিব আল হাসানের ভাষায়, “ঘুরে দাঁড়ানো খুব কঠিন হলেও আমাদের আর তো কোনও অপশন নাই!”
কিন্তু সমর্থকদের মুখে সেই হাসি ফেরানোর প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশ ক্রিকেটকে অদূর ভবিষ্যতে কয়েকটি অস্বস্তিকর প্রশ্নর মুখে পড়তেই হবে – যেগুলো এড়িয়ে যাওয়া প্রায় অসম্ভব।
এই মুহুর্তে সেই প্রশ্নগুলো কী কী – আর তা কীভাবেই বা ‘অ্যাড্রেস’ করা সম্ভব – তারই অনুসন্ধান এই প্রতিবেদনে।
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে সুযোগ আসবে?
২০২৫র শুরুর দিকে পাকিস্তানের মাটিতে যে আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি অনুষ্ঠিত হবে, তাতে বাংলাদেশ খেলতে পারবে কি না সেটাও এখন চূড়ান্ত অনিশ্চিত।
গত ২০২১ সাল থেকেই আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির নিয়মকানুন ঢেলে সাজিয়েছে – আর এই ওয়ানডে টুর্নামেন্টটি সে বছর থেকেই অনুষ্ঠিত হচ্ছে নতুন ফর্ম্যাটে।
এ বছরও বিশ্বকাপ শুরুর আগেই আইসিসি প্রতিটি অংশগ্রহণকারী দলকে জানিয়ে দিযেছিল, বিশ্বকাপের পয়েন্টস টেবিলে প্রথম সাতটি দেশের দল, আর টুর্নামেন্টের স্বাগতিক দেশ পাকিস্তান – এরাই কেবল চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে খেলার যোগ্যতা অর্জন করবে।
আর পাকিস্তান যদি প্রথম সাতে এমনিতেই থাকে, তাহলে পয়েন্টস টেবিলের আট নম্বর দলটি সেই সুযোগ পেয়ে যাবে। আর বাংলাদেশ এই মুহুর্তে রয়েছে তালিকার নয় নম্বরে।
শ্রীলঙ্কা ও অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে বিশ্বকাপে বাকি দুটো ম্যাচ জিততে পারলে বাংলাদেশের পক্ষে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির যোগ্যতা অর্জন হয়তো সম্ভব – কিন্তু কাজটা যে কতটা দুরূহ তা সবাই জানেন!
এখানে বাংলাদেশের প্রতিযোগিতা থাকছে আফগানিস্তান, এমনকি নেদারল্যান্ডসের সঙ্গেও।
চলতি বিশ্বকাপে খেলার সুযোগ না-পাওয়ায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ, আয়ার্ল্যান্ড বা জিম্বাবোয়ের মতো দল চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি থেকে আগেই ছিটকে গেছে – এখন বাংলাদেশও সেই কাতারে নাম লেখায় কি না প্রশ্ন সেটাই।
মঙ্গলবার ম্যাচ-পরবর্তী সাংবাদিক সম্মেলনে মেহেদি হাসান মিরাজের কাছে প্রশ্ন করা হয়েছিল, “চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি খেলতে না পারলে খারাপ লাগবে না?”
মিরাজ হেসে বাংলাদেশের সাংবাদিকদের উদ্দেশে জবাব দিলেন, “খারাপ তো লাগবেই। আর আপনাদেরও কি খারাপ লাগবে না?”
“(বাংলাদেশ না খেলতে পারলে) আপনাদেরও তো (টুর্নামেন্ট কভার করা) হবে না, তাই না?”
ক্যাপ্টেন্সির দায়িত্ব কে পাবেন?
বাংলাদেশ ক্রিকেটের লেজেন্ড সাকিব আল হাসান বিশ্বকাপের অনেক আগেই স্পষ্ট করে দিয়েছেন, এই টুর্নামেন্ট শেষ হওয়ার পর তিনি আর এক দিনও অধিনায়কত্বের দায়িত্বে থাকবেন না।
গত জুলাই মাসে তামিম ইকবালের আচমকা অবসর ঘোষণার পর খানিকটা অভাবিতভাবেই সাকিবকে ক্যাপ্টেন্সির দায়িত্ব নিতে হয়েছিল।
তবে সেটা যে বেশ নিমরাজি হয়েই, সাকিব তা পরে একাধিকবার স্পষ্ট করে দিয়েছেন।
“ক্যাপ্টেন্সি আমার কেরিয়ারের এই পর্যায়ে কোনও ভ্যালু অ্যাড করছে বলে মনে করি না!”, সাকিব এমন কথাও বলেছেন একটি স্পোর্টস চ্যানেলে।
নিজের দশটা ওভার জাস্ট ভালভাবে হাত ঘোরাবেন, মন দিয়ে ব্যাটিং আর ফিল্ডিংটা করবেন – এই বয়সে এসে অধিনায়কত্বের বাড়তি দায়িত্ব নিয়ে নিজের বোঝা বাড়াতে চান না – এটাও পরিষ্কার করে দিয়েছেন তিনি।
ফলে বিশ্বকাপ শেষ হওয়ার পর তিনি যে অধিনায়ক থাকবেন না, এটা ধরে নেয়া যায়।
বস্তুত আর বছর দেড়েকের মধ্যে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের বিভিন্ন ফরম্যাট থেকে ধাপে ধাপে অবসর নেওয়ার পরিকল্পনাও ঘোষণা করে রেখেছেন সাকিব।
এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের জাতীয় ক্রিকেট নির্বাচকদের একজন নতুন অধিনায়ক বেছে নিতে হবে অচিরেই।
এই মুহুর্তে ভাইস ক্যাপ্টেনের দায়িত্বে থাকা নাজমুল হোসেন শান্ত (ফর্ম অসম্ভব খারাপ), তুলনায় বেশি অভিজ্ঞ লিটন দাস (ধারাবাহিকতা একেবারেই নেই) কিংবা অলরাউন্ডার মেহেদি হাসান মিরাজের (ভালয়-মন্দয় মিশিয়ে পারফরমেন্স) মধ্যে কোনও একজনকেই হয়তো সে দায়িত্বটা নিতে হবে।
কেরিয়ারের শেষ প্রান্তে চলে আসা মুশফিকুর রহিম বা মাহমুদুল্লাহ-কে ক্যাপ্টেন্সির দায়িত্ব নিতে বলা হবে – সেই সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ।
“সমস্যা হল নির্বাচকদের হাতে খুব একটা বেশি অপশন নেই। এমন কী যাদের কথা বলা হচ্ছে তারা সবাই যে অটোমেটিক্যালি টিমে ঢুকবেন এমনটাও নয়”, কলকাতায় বিবিসিকে বলছিলেন বাংলাদেশের একজন বর্ষীয়ান ক্রিকেট সাংবাদিক।
এমন কী, তেমন কোনও পছন্দসই নাম না পাওয়া গেলে “সাকিবকেই আরও কিছুদিন চালিয়ে দিতে অনুরোধ করা হবে” – এই সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে না।
“বাংলাদেশের ক্রিকেটে আসলে সবই সম্ভব … কাজেই দেখা যাক”, বলছিলেন ওই সাংবাদিক।
চন্ডিকার চাকরি টিঁকবে?
এ বছরের গোড়ার দিকে, বিশ্বকাপের মাত্র আট মাস আগে বাংলাদেশ দলের প্রধান কোচের দায়িত্বে ফিরিয়ে আনা হয় শ্রীলঙ্কার সাবেক ব্যাটার চন্ডিকা হাথুরুসিংহেকে।
হাথুরুসিংহে এর আগেও ২০১৪ থেকে ২০১৭ পর্যন্ত একটানা লম্বা সময় বাংলাদেশের কোচিং করিয়েছেন, তবে এই দফায় তার সঙ্গে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের চুক্তির মেয়াদ ছিল দু’বছরের।
ফলে দলের হেড কোচ হিসেবে তার কন্ট্রাক্ট আছে ২০২৫র গোড়া পর্যন্ত।
এর আগের দফায় চন্ডিকার কোচিংয়েই বাংলাদেশ ২০১৫তে বিশ্বকাপের কোযার্টার ফাইনালে উঠেছিল, ভারত-পাকিস্তান-দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়েছিল এক দিনের সিরিজে।
কিন্তু এবারের বিশ্বকাপে দলের শোচনীয় পারফরমেন্সের পর কাউকে একটা ‘বলির পাঁঠা’ করতেই হবে – আর সেই সম্ভাব্যদের তালিকায় হাথুরুসিংহে-ও রয়েছেন।
বড় টুর্নামেন্টে ব্যর্থতার পর দলের কোচদেরই আগে সরে যেতে হয় – ক্রিকেট বা ফুটবল দুনিয়ায় এমন উদাহরণ ভূরি ভূরি আছে।
তবে বিসিবি-র ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে ‘ব্যক্তিগত সুসম্পর্কে’র সুবাদে চন্ডিকা তার চাকরি বাঁচিয়েও ফেলতে পারেন বলেই বাংলাদেশ ক্রিকেটের ওয়াকিবহালরা অনেকে মনে করছেন।
“একেই ওনার মোটা মাইনেকড়ি, সুযোগসুবিধে নিয়ে বাংলাদেশে সমালোচনা প্রবল। এরপর মেয়াদের মাঝপথে ছাড়িয়ে দেওয়া হলে তাকে যে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে, সেটা নিয়েও সমর্থকরা নির্ঘাত বোর্ডকে ছিঁড়ে খাবেন”, বলছিলেন কলকাতায় ম্যাচ দেখতে আসা বিসিবি-র একজন মাঝারি সারির কর্মকর্তা।
চন্ডিকা হাথুরুসিংহে নিজের চাকরি বাঁচাতে পারুন বা না-পারুন – এই মুহুর্তে দলের যে ‘কোচিং কাঠামো’ সেটা যে বিশ্বকাপের পর ভেঙে দেওয়া হবে তা এক রকম নিশ্চিত।
বিশ্বকাপে বাংলাদেশের এই স্ট্রাকচারে রয়েছেন ‘হেড কোচ’ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে, ‘টিম ডিরেক্টর’ খালেদ মাহমুদ সুজন আর ‘টেকনিক্যাল কনসালট্যান্ট’ শ্রীধরন শ্রীরাম, যিনি আবার সাবেক একজন ভারতীয় স্পিনার।
এই তিনজনের কার ‘জব প্রোফাইল’ কী – মানে কে ঠিক কোন কাজটার দায়িত্ব সামলান – সেটা কিছুতেই ভেঙে না-বলতে চাইলেও ধরমশালায় চন্ডিকা হাথুরুসিংহে দাবি করেছিলেন ‘তিনজন মিলেমিশে কাজ করতে’ তার অন্তত কোনও সমস্যা হচ্ছে না।
কিন্তু এই ‘ত্রিমুখী’ কোচিং টিম যে দলের জন্য হিতে বিপরীত হচ্ছে, সেটা এতদিনে বিসিবি-ও উপলব্ধি করেছে বলে ইঙ্গিত – ফলে এই কাঠামোটা টুর্নামেন্টের পরে আর থাকবে না বলেই ধারণা করা হচ্ছে।
বোর্ডের নেতৃত্বে বদল হবে?
গত দশ বছরেরও বেশি সময় ধরে একটানা বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতির পদে আছেন নাজমুল হাসান পাপন।
তিনি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের একজন এমপি, সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রয়াত জিল্লুর রহমানের পুত্র – সরকারের সর্বোচ্চ নেতৃত্বের সমর্থনও স্পষ্টতই তাঁর পাশে আছে।
বাংলাদেশ ক্রিকেট মহলে এটা সুবিদিত যে তিনি শুধু বোর্ড পরিচালনাতেই নিজেকে সীমাবদ্ধ রাখেন না – দলে কে ঢুকবেন বা কে বেরোবেন, এমন কী কোন ম্যাচে কী ব্যাটিং অর্ডার হবে এগুলো নিয়েও নিয়মিতই মাথা ঘামান।
বাংলাদেশ দল যখন ভাল খেলে তখন এগুলো নিয়ে বিশেষ সমালোচনাও হয় না, কিন্তু বিশ্বকাপে দলের জঘন্য খেলার পর তার বোর্ড পরিচালনার ধরনধারন নিয়েও কিন্তু প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
সোশ্যাল মিডিয়াতে বাংলাদেশের অনেক ক্রিকেট অনুরাগী যেমন ইতিমধ্যেই ‘পাপনের পদত্যাগ চাই’ দাবি জানাতে শুরু করেছেন।
অনেকে তোপ দাগছেন মিনহাজুল আবেদিন নান্নুর নেতৃত্বাধীন নির্বাচক কমিটির বিরুদ্ধেও।
বাংলাদেশে ক্রিকেট-রাজনীতির অঙ্কগুলো যাদের জানা, তারা এটাও মনে করিয়ে দিচ্ছেন দীর্ঘদিন ধরেই বিসিবি-তে সাবেক প্রেসিডেন্ট সাবের হোসেন চৌধুরী ও তার অনুগামীরা কিন্তু বারবার নাজমুল হাসান পাপনের কড়া সমালোচনা করতে ছাড়েননি।
এই সাবের হোসেন চৌধুরীকে ভোটে হারিয়েই ২০১৩তে বোর্ড সভাপতির দায়িত্ব পান নাজমুল হাসান পাপন।
বস্তুত নেদারল্যান্ডসের কাছে দলের লজ্জাজনক হারের পর দিন সকালেই ‘পাপন সাহেব’ যেভাবে কলকাতার ফ্লাইট ধরে টিমের সিনিয়রদের সঙ্গে দেখা করতে চলে আসেন এবং লম্বা লম্বা মিটিং করেন – তাতে স্পষ্ট যে তিনিও এই মুহুর্তে বেশ চাপেই আছেন।
তবে এটাও মনে রাখতে হবে তিনি বিসিবি-র একজন নির্বাচিত সভাপতি এবং তার বর্তমান মেয়াদেরও প্রায় বছরতিনেক বাকি আছে।
কাজেই সাংবিধানিকভাবে তাকে প্রেসিডেন্টের পদ থেকে সরানো কঠিন।
“তবে হয়তো দেখব বিশ্বকাপে ব্যর্থতার তদন্ত করতে কমিটি গড়ে দিয়ে পাপন সাহেব নিজের কাঁধ থেকে দায় সরিয়ে দিলেন”, বলছিলেন বাংলাদেশের একজন সিনিয়র ক্রিকেট বিশ্লেষক।
২০০৩ সালের বিশ্বকাপে বাংলাদেশের হতশ্রী পারফরমেন্সের পরও ঠিক একই কায়দায় তদন্ত কমিটি গড়ে দিয়েছিলেন তদানীন্তন বোর্ড সভাপতি আলি আসগর লবি।
তামিম কি আদৌ দলে ফিরবেন?
বিশ্বকাপে বাংলাদেশের স্কোয়াড ঘোষণার সময় সবচেয়ে বেশি বিতর্ক হয়েছিল ওপেনার তামিম ইকবালকে দলে রাখা না-রাখা নিয়ে।
তামিম শেষ পর্যন্ত দলে সুযোগ পাননি – আর বিশ্বকাপে একের পর এক ম্যাচে যখনই বাংলাদেশের ওপেনিং জুটি ব্যর্থ হয়েছে, তখনই সমর্থকরা তামিমের কথা ভেবে দীর্ঘশ্বাস ফেলেছেন।
তামিমকে যে তারা প্রবলভাবে ‘মিস’ করছেন, ধরমশালা, চেন্নাই বা মুম্বাইয়ের মাঠে পোস্টার তুলে ধরে বাংলাদেশ সমর্থকরা সেটা জানাতেও দ্বিধা করেননি।
এখন প্রশ্ন হল, বিশ্বকাপের পরে বাংলাদেশের জাতীয় দলে তামিমের ফিরে আসার সুযোগ কতটা?
বিশ্বকাপের স্কোয়াডে তামিমের না-ঢুকতে পারার যে ‘আনুষ্ঠানিক’ কারণটা জানা আছে, তা হল পুরনো ব্যাক ইনজুরির কারণে তিনি টুর্নামেন্টের প্রতিটা ম্যাচ খেলার মতো ফিট ছিলেন না।
বাংলা ও ভারতের সাবেক ক্রিকেটার দেবাং গান্ধী কিন্তু মনে করেন, পুরোপুরি ফিট হয়ে তামিমের বাংলাদেশ দলে ফেরাটা নেহাতই ‘সময়ের অপেক্ষা’।
সোমবার ইডেনের ক্লাব হাউসে বসে দেবাং বিবিসিকে বলছিলেন, “তামিমের বয়স কত হবে? ৩৩ বা ৩৪ বড়জোর?”
“তেন্ডুলকর যদি চল্লিশ পেরিয়েও আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলতে পারেন তাহলে তামিমের মধ্যেও আরও তিন-চার বছরের সর্বোচ্চ মানের ক্রিকেট নিশ্চয় অবশিষ্ট আছে।“
এমন কী, তামিমের পুরনো আঘাতের সমস্যাকেও তিনি অতটা গুরুত্ব দিতে নারাজ।
“আবার তেন্ডুলকরের কথা বলি, কেরিয়ারের প্রায় শেষ দশ বছর ওনাকে টেনিস এলবো-র সমস্যা নিয়েই খেলতে হয়েছে। সিনিয়র ক্রিকেটাররা জানেন, এই সব ইনজুরি কীভাবে ম্যানেজ করে খেলা চালিয়ে যেতে হয়!”, বলছিলেন দেবাং গান্ধী।
গত জুলাইতে নাটকীয়ভাবে নিজের অবসর ঘোষণার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত হস্তক্ষেপে ও অনুরোধে সেই ঘোষণা প্রত্যাহার করে নিয়েছিলেন তামিম ইকবাল।
কিন্তু পরে বিশ্বকাপে দলে সুযোগ না-পাওয়াটা যে তাকে আহত করেছে, সেটাও ভিডিও বার্তার মাধ্যমে প্রকাশ্যেই বুঝিয়ে দিয়েছিলেন অভিমানী এই ক্রিকেটার।
এখন বিশ্বকাপে দল হিসেবে বাংলাদেশ চরম ব্যর্থ হওয়ার পর নির্বাচকরা এই অভিজ্ঞ ক্রিকেটারকে দলে ফেরান কি না, দেখার বিষয় সেটাই।
কিন্তু সেই সিদ্ধান্তের পেছনে ক্রিকেট ছাড়াও যে আরও নানা অক্রিকেটীয় ফ্যাক্টরের বড় ভূমিকা থাকবে, তাতে কোনও সন্দেহ নেই!