ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স সার্ভিসেস লিমিটেডের আর্থিক দুর্নীতির বিষয়ে আপিল বিভাগকে ব্যাখ্যা দিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক শাহ আলম এবং বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির স্বাধীন চেয়ারম্যান ইব্রাহিম খালেদ।
আজ মঙ্গলবার সকালে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আপিল বেঞ্চে এ বিষয়ে শুনানি অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ সময় ব্যাংকিং খাতে লুটপাটের ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন আপিল বিভাগ। এ বিষয়ে আদেশের জন্য আগামীকাল দিন ধার্য করা হয়েছে।
শুনানিতে আপিল বিভাগকে ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স সার্ভিসেস লিমিটেডের সাবেক পরিচালক পি কে হালদারের দুর্নীতির বিষয়ে ব্যাখ্যা দেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক শাহ আলম।
এ সময় সর্বোচ্চ আদালত তাকে বলেন, ব্যাংক থেকে একজন লোকই সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা নিয়ে গেলেন, তখন কেন্দ্রীয় ব্যাংক কী করেছে? আবার গনমাধ্যমে যে টাকার কথা বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের অংকের সাথে তার পার্থক্য আছে, এটা শুভঙ্করের ফাঁকি কি না, সে প্রশ্নও রাখেন আপিল বিভাগ।
এদিকে পিকে হালদার ইস্যুতে আপিল বিভাগে লিখিত বক্তব্য দেন সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ। তিনি আদালতকে জানান, সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা লোন এর মধ্যে ১৫ কোটি টাকা পিকে হালদার এবং তার সহযোগীরা সরিয়ে নিয়েছে। ফলে ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স সার্ভিসেস লিমিটেডকে বাঁচানো খুবই মুশকিল। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক স্পেশাল ব্যবস্থা নিলে সেটি সম্ভব হতে পারে।
আপিল বিভাগে ইন্টারন্যাশনাল লিজিং নিয়ে বক্তব্যে বাংলাদেশ ব্যাংক জানায়, পিকে হালদার শুধু ইন্টারর্নেশনাল লিজিং থেকে ১৫৬ কোটি টাকা এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠান থেকে ১৬৪ কোটি টাকা লোপাট করেছে। ব্যাংকটির আইনজীবী জানান, এ টাকা ফিরিয়ে আনা কঠিন, তবে সম্ভব।
এর আগে গত ১৬ ফেব্রুয়ারি ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স সার্ভিসেস লিমিটেডের (আইএলএফএসএল) স্বাধীন চেয়ারম্যান (হাইকোর্টের নির্দেশে নিয়োগপ্রাপ্ত) খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালকের নিচে নয় এমন একজন কর্মকর্তাকে আসতে বলেন আপিল বিভাগ। ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের ব্যাস্তবিক পক্ষে অর্থনৈতিক অবস্থা কী রকম আছে, অবসায়ন হওয়ার মতো অবস্থায় আছে কি না, আর্থিক অনিয়ম হলে কোন পর্যায়ে আছে, অর্থনৈতিক অবস্থার বিষয়ে সামগ্রিক অবস্থা নিয়ে তাদের ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়।
এর আগে গত ১৯ জানুয়ারি ওই কোম্পানির আমানতকারীদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট এক আদেশে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত আর্থিক খাতের কোম্পানি ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স সার্ভিসেস লিমিটেড পরিচালনার জন্য স্বাধীন পরিচালক ও চেয়ারম্যান হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদকে নিয়োগ দেন।
একইসঙ্গে প্রতিষ্ঠানটির বর্তমান চেয়ারম্যান, এমডি, বহুল আলোচিত প্রশান্ত কুমার হালদারসহ (পি কে হালদার) ১৩ পরিচালকের ব্যাংক হিসাব ও পাসপোর্ট জব্দ করতে বলা হয়। এছাড়া, প্রশান্ত কুমার হালদারের মা, স্ত্রী, ভাই প্রীতিশ কুমার হালদার, দুই কাজিন অমিতাভ অধিকারী ও অভিজিৎ অধিকারী, ব্যাংক এশিয়ার সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এরফানউদ্দিন আহমেদ এবং বন্ধু উজ্জল কুমার নন্দীর ব্যাংক হিসাব ও পাসপোর্ট জব্দ করার নির্দেশ দেয়া হয়। পাশাপাশি ২০ জনের দেশত্যাগের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেন আদালত।
একইসঙ্গে, এই ২০ জনের সম্পদের হিসাব ১৫ দিনের মধ্যে আদালতে দাখিলের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি পিকে হালদারকে দেয়া ঋণ-সংক্রান্ত যাবতীয় কাগজপত্র আগামী ১৫ দিনের মধ্যে আদালতে দাখিল করতে সংশ্লিষ্টদের বলা হয়েছে।
প্রশান্ত কুমার হালদার বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বে থেকে অন্তত সাড়ে ৩ হাজার ৬০০ কোটি টাকা লোপাট করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
সূত্র: সময়য়ের কণ্ঠস্বর