ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী মন্তব্য করেছেন যে কংগ্রেস এবং বিরোধী ইন্ডিয়া জোটের নেতারা ‘দেশের মানুষের আবেগ নিয়ে খেলতে ভালবাসেন’, তাদের উত্যক্ত করেন এই নেতারা।
কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী এবং বিহারের উপ-মুখ্যমন্ত্রী তেজস্বী যাদবের নাম না করে প্রধানমন্ত্রী এক নির্বাচনী সভায় এদের সঙ্গে মুঘলদের তুলনা করেছেন।
মি. মোদী ভারত শাসিত জম্মু-কাশ্মীরের উধমপুরে এক জনসভায় বিরোধী নেতাদের আমিষ খাওয়া নিয়ে এই মন্তব্য করেন।
গত বছর সেপ্টেম্বরে ভাইরাল হয়ে যাওয়া একটি ভিডিওতে দেখা গিয়েছিল যে বিহারের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী লালু প্রসাদ যাদব আর কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী একসঙ্গে খাসির মাংস রান্না করছেন।
আবার কয়েকদিন আগে বিহারের প্রাক্তন উপ-মুখ্যমন্ত্রী তেজস্বী যাদব কেন নবরাত্রির সময়ে মাছ খাওয়ার ভিডিও দিলেন, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছিলেন বিজেপি নেতারা।
‘মানুষের ভাবাবেগের কথা ভাবেনই না’
সেই ভিডিওর কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, “কংগ্রেস আর বিরোধী জোটের লোকেরা দেশের অধিকাংশ মানুষের ভাবাবেগের কথা ভাবেনই না। মানুষের আবেগ নিয়ে খেলতে ভালবাসেন তারা। একজন ব্যক্তি (লালু প্রসাদ যাদব), যাকে কোর্ট সাজা দিয়েছে এবং এখন জামিনে আছেন, এরকম একজন অপরাধীর বাড়িতে গিয়ে এরা শ্রাবণ মাসে খাসির মাংস রান্না করল। আবার সেটা ভিডিও বানালো যাতে দেশের মানুষ বিরক্ত হন।“
সেপ্টেম্বর মাসের কিছুদিন শ্রাবণ মাস চলে এবং সেই সময়ে মূলত উত্তর ভারতের হিন্দুদের অনেকেই নিরামিষ খান। সেই সময়ে রাহুল গান্ধী খাসির মাংস রান্না করছেন বলেই তাকে কটাক্ষ করেছেন প্রধানমন্ত্রী।
সংবাদ সংস্থা এএনআই জানাচ্ছে যে তিনি এই প্রসঙ্গেই বিরোধী নেতাদের সঙ্গে মুঘলদেরও তুলনা টেনেছেন।
“কারও কোনও কিছু খেতে আইনত বাধা নেই। কিন্তু এদের মনোভাবটা অন্যরকম। যখন মুঘলরা এখানে আক্রমণ চালিয়েছিল, তারা যতক্ষণ না মন্দির ধ্বংস করেছে, ততক্ষণ সন্তুষ্ট হয় নি।”
প্রধানমন্ত্রীর কথায়, “তাই ঠিক মুঘলদের মতোই দেশের মানুষকে শ্রাবণ মাসে ওই ভিডিও দেখিয়ে উত্যক্ত করতে চেয়েছিল তারা।“
কংগ্রেসের প্রতিক্রিয়া
দলের নেতা রাহুল গান্ধীর খাসির মাংস রান্না করা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কটাক্ষের জবাবে কংগ্রেস বলছে যে তারা রাজনৈতিক নেতাদের পুষ্টির মাসিক হিসাব রাখে না, তবে মি. মোদীর আমলে যে শিশুদের মধ্যে অপুষ্টি বাড়ছে, তার দিকে দল নজর রেখেছে।
জাতীয় কংগ্রেসের মুখপাত্র জয়রাম রমেশ বলেন যে, শিশুদের পুষ্টিগত তথ্য উদ্বেগজনকভাবে খারাপের দিকে চলে গেছে, কিন্তু স্কুল পড়ুয়া শিশুদের মিড-ডে মিল প্রকল্পের অধীনে সকালের নাস্তা দেওয়ার জন্য চার হাজার কোটি ভারতীয় টাকার একটি প্রকল্প অর্থের অভাবে গ্রহণই করল না মি. মোদীর সরকার।
মি. রমেশের কথায়, “২০১৫ থেকে ২১ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের মধ্যে রক্তাল্পতার ঘটনা প্রায় দশ শতাংশ বেড়েছে। যেসব নারীরা ১৫ থেকে ১৯ বছর বয়সসীমার মধ্যে পড়েন, তাদের মধ্যে রক্তস্বল্পতা বেড়েছে ৯.২%। প্রধানমন্ত্রীর রাজ্য গুজরাতে পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের প্রতি ১০ জনের মধ্যে ৮ জনের রক্তস্বল্পতা দেখা গেছে।“
নবরাত্রির সময়ে কেন আমিষ?
বিহারের প্রাক্তন উপ-মুখ্যমন্ত্রী ও লালু যাদবের পুত্র তেজস্বী যাদবের সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করা একটি ছবির কথাও উল্লেখ করেছেন প্রধানমন্ত্রী, এমনটাই জানিয়েছে সংবাদ সংস্থাগুলি।
এখন উত্তর এবং পশ্চিম ভারতে হিন্দুদের অনেকেই নবরাত্রি পালন করেন এবং এই সময়ে নিরামিষ খাওয়ার চল রয়েছে তাদের মধ্যে।
নরেন্দ্র মোদী বলেন, “নবরাত্রি চলাকালীন আমিষ খাবার খাওয়া, সেটার ভিডিও করে দেখানো, মানুষের ভাবাবেগে আঘাত দেওয়া, কাদের খুশি করতে চাইছেন আপনারা?”
‘বিজেপি নেতাদের বুদ্ধির পরীক্ষা’
এমাসের আট তারিখে তেজস্বী যাদব বিমানে বসে মাছ খাওয়ার একটি ভিডিও পোস্ট করেন।
যদিও পোস্টটা তিনি করেছিলেন পরের দিন, যেদিন নবরাত্রি শুরু হয়েছে।
বিজেপি তাকে ‘মরসুমি সনাতনী’ বলে কটাক্ষ করেছিল।
জবাবে মি. যাদব বলেছিলেন, যে তিনি পোস্টে লিখেই দিয়েছিলেন যে ভিডিওটি আটই এপ্রিলের। ভিডিওটি দিয়ে তিনি বিজেপি নেতাদের বুদ্ধির পরীক্ষা নিতে চেয়েছিলেন বলেও জানিয়েছিলেন।
মাছ খাওয়ার ভিডিও দেওয়ার দুদিন পরে আরেকটি ভিডিও দিয়েছিলেন মি. যাদব। সেখানে তাকে দেখা যাচ্ছিল কমলালেবু খেতে।
ভিডিওর ওপরে তিনি লিখেছিলেন, “হ্যালো বন্ধুরা। আজ হেলিকপ্টারে কমলালেবু পার্টি হচ্ছে। কমলা রঙটা নিয়ে ওরা আবার বিরক্ত হবে না তো?”
বিজেপির পছন্দের রঙ গেরুয়া আর কমলা – দুটিই বেশ কাছাকাছি।
এই নিবন্ধে Google YouTubeএর কনটেন্ট রয়েছে। কোন কিছু লোড করার আগে আমরা আপনার অনুমতি চাইছি, কারণ তারা হয়ত কুকি এবং অন্যান্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে থাকতে পারে। আপনি সম্মতি দেবার আগে হয়ত Google YouTube কুকি সম্পর্কিত নীতি এবং ব্যক্তিগত বিষয়ক নীতি প়ড়ে নিতে চাইতে পারেন। এই কনটেন্ট দেখতে হলে ‘সম্মতি দিচ্ছি এবং এগোন’ বেছে নিন।
সতর্কবাণী: বিবিসির নয় এমন ওয়েবসাইটের কনটেন্টের জন্য বিবিসি দায়ী না YouTube কনটেন্টে বিজ্ঞাপন থাকতে পারে
End of YouTube post
ছবির কপিরাইট
YouTube -এ আরো দেখুনবিবিসি। বাইরের কোন সাইটের তথ্যের জন্য বিবিসি দায়বদ্ধ নয়।
উধমপুরে প্রধানমন্ত্রীর বক্তৃতার জবাবে বিহারের প্রাক্তন উপ-মুখ্যমন্ত্রী মি. যাদব এক নির্বাচনী জনসভায় বলেন যে মানুষের আসল সমস্যাগুলো নিয়ে কথা না বলে তারা কে কী খাবে, কে কী পরবে, তা নিয়ে রাজনীতি করতে নেমে পড়েছে।
ইংরেজি সংবাদ চ্যানেল এনডিটিভি মি. যাদবকে উদ্ধৃত করে জানিয়েছে, “যে সব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আছে, তা নিয়ে কথা না বলে বিজেপি কথা বলছে মানুষ কী খাবে আর পরবে, তা নিয়ে।“
“বিহারের ইস্যু নিয়ে তারা কথা বলছে না। রাজ্য থেকে বাইরে কাজের খোঁজে যাওয়া কী করে বন্ধ করা যায় বা ভোটে জিতে ক্ষমতায় এলে পরবর্তী পাঁচ বছরে তারা কী করবে সেসব নিয়ে কথা নেই। গত দশ বছরে কেন্দ্রে বা রাজ্যে ১৭ বছরে কিছুই করে নি তারা… কিন্তু তারা মানুষ কী পরবে, কী খাবে সেসব নিয়ে কথা বলবে আর তা নিয়েই রাজনীতি চালিয়ে যাবে,” মন্তব্য মি. যাদবের।