রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, রিখটার স্কেলে এর ছিল মাত্রা ৫.২। তবে গুগলের ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থার তথ্য অনুযায়ী, ভূমিকম্পটির মাত্রা ৫.৩ বলে জানানো হয়।
এর উৎপত্তিস্থল ভারতের মেঘালয়ের রেসুবেলপাড়া নামক স্থান থেকে ৩ কিলোমিটার দূরে।
বাংলাদেশের স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ছয়টা ৪৫ মিনিটে এই ভূমিকম্প অনুভূত হয়।
ভূমিকম্পে এখনো ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে কোনও তথ্য পাওয়া যায়নি।
বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, সোমবার সন্ধ্যা ৬.৪৫ মিনিটে ৫.২ মাত্রার একটি ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে।
এর কেন্দ্রস্থল ঢাকার ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ ও গবেষণা কেন্দ্র থেকে ২৩৬ কিলোমিটার দূরে। এটি একটি মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্প।
বাংলাদেশ ছাড়াও এই ভূমিকম্প নেপাল, ভারত, ভুটান এবং চীনে অনুভূত হয়েছে।
ভারতের ন্যাশনাল সেন্টার ফর সিসমোলজির তথ্য অনুযায়ী, ভারতের মেঘালয়ের উত্তরে গারো পাহাড় এলাকায় পাঁচ দশমিক দুই মাত্রার ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে।
ভূমিকম্পটির গভীরতা ছিল ১০ কিলোমিটার। ভারতের স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬.১৫ মিনিটে এই ভূমিকম্প অনুভূত হয়।
উৎপত্তিস্থল ছাড়াও ভারতের পশ্চিমবঙ্গ এবং আসামেও কম্পন অনুভূত হয়েছে।
গত পাঁচ মাসে যত ভূমিকম্প
এরআগে গত সেপ্টেম্বরে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে বলে জানা যায়।
গত ০৯ই সেপ্টেম্বর সিলেট ও এর আশপাশের এলাকায় ৪.৫ মাত্রার একটি ভূমিকম্প অনুভূত হয়। এর উৎপত্তিস্থল ছিল ভারতের আসামে।
গত ১৭ই সেপ্টেম্বর রবিবার দুপুরে ৪ দশমিক ২ মাত্রার একটি ভূমিকম্প অনুভূত হয়। এর উৎপত্তিস্থল ছিলো ঢাকা থেকে ৬০ কিলোমিটার দুরে টাঙ্গাইলের একটি এলাকায়।
এর আগে চলতি বছরের মে মাস থেকে শুরু করে অগাস্ট পর্যন্ত চার মাসে মোট তিন বার ছোট থেকে মাঝারি আকারের ভূমিকম্প অনুভূত হয়। যার মধ্যে প্রায় প্রতিটির উৎপত্তিস্থল ছিল দেশের সীমানার ভেতর বা আশেপাশে।
১৪ই অগাস্ট রাত ৮টা ৪৯ মিনিটের দিকে একটি ভূমিকম্প অনুভূত হয় রাজধানীসহ দেশের বেশিরভাগ এলাকায়।
মার্কিন ভূ-তাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা ইউএসজিএস-এর তথ্য অনুযায়ী, এই ভূমিকম্পটির মাত্রা রিখটার স্কেলে ছিল ৫.৫, যা মাঝারি মাত্রার একটি ভূমিকম্প। আর এর উৎপত্তিস্থল ছিল বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের সিলেটের কানাইঘাট এলাকায়। গভীরতা ছিল মাত্র ১০ কিলোমিটার।
এর আগে, গত ১৬ই জুন রাজধানীসহ সারা দেশে ৪.৫ মাত্রার মৃদু ভূমিকম্প হয়। এর উৎপত্তিস্থল ছিল সিলেটের গোলাপগঞ্জ।
আর চলতি বছরের মে মাসের পাঁচ তারিখে আরেকটি ভূমিকম্প হয়েছে ঢাকা ও এর আশেপাশের এলাকায়।
যুক্তরাষ্ট্রের ভূ-তাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা ইউএসজিএস এর হিসেব অনুযায়ী, এই ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৪.৩। ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল ঢাকার কাছে বিক্রমপুরের দোহার থেকে প্রায় ১৪ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে। এটিরও গভীরতা ছিল মাত্র ১০ কিলোমিটার।
ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞরা তখন বলেছিলেন, বার্মিজ প্লেট ও ইন্ডিয়ান প্লেটের পরস্পরমুখী গতির কারণেই এ ধরণের ভূমিকম্প হচ্ছে।
তারা জানান, এই দুটি প্লেটের সংযোগস্থলে প্রচুর পরিমাণে শক্তি জমে রয়েছে যেগুলো বের হয়ে আসার পথ খুঁজছে। আর সে কারণেই ঘন ঘন এমন ভূমিকম্প অনুভূত হচ্ছে।
কত বছর পর পর হয় ভূমিকম্প
বিজ্ঞানীরা তাদের গবেষণায় দেখেছেন সাবডাকশন জোনে বড় আকারের দুটো ভূমিকম্পের মাঝখানে সময়ের ব্যবধান হচ্ছে ৮০০ থেকে ৯০০ বছর।
ময়নামতি পাহাড়ে বৌদ্ধ বিহারের যে স্থাপনা আছে, ওই এলাকা থেকে লোকজন অভিবাসন করে চলে গিয়েছিল ৮০০ থেকে ১,০০০ বছর আগে। তাদের ওই অভিবাসনের সঙ্গে ভূমিকম্পের সম্পর্ক ছিল।
“তাহলে আমরা ধরে নিতে পারি এখানে যে শক্তি সঞ্চিত ছিল সেটা ৮০০ বা ১০০০ বছর আগে ছেড়ে দিয়েছে এবং নতুন করে শক্তি সঞ্চিত হচ্ছে,” বলছিলেন ঢাকায় ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞ হুমায়ুন আখতার।
তাই আরেকটা বড় মাপের ভূমিকম্পের আশংকা আছেও বলে সতর্ক করে দিয়েছেন তিনি।
বাংলাদেশে বড় ভূমিকম্পের ইতিহাস
বাংলাদেশের সিলেট, চট্টগ্রাম এবং ঢাকায় ১৫৪৮, ১৬৪২, ১৬৬৩, ১৭৬২, ১৭৬৫, ১৮১২, ১৮৬৫, ১৮৬৯ সালে ভূমিকম্প হওয়ার ঐতিহাসিক উল্লেখ পাওয়া যায়। তবে এসবের মাত্রা কত ছিল তা জানা যায় না।
এছাড়া ১৮২২ ও ১৮১৮ সালে সিলেট ও শ্রীমঙ্গলে ৭.৫ ও ৭.৬ মাত্রার ভূমিকম্প হয়। অবশ্য এর ক্ষয়ক্ষতির তেমন বর্ণনা পাওয়া যায় না।
গবেষকদের মতে বাংলাদেশে গত ১২০-২৫ বছরে মাঝারি ও বড় মাত্রার প্রায় শতাধিক ভূকম্প অনুভূত হয়েছে।
তবে এসবের মধ্যে রিখটার স্কেলে সাত বা তার চেয়ে বড় মাত্রার ভূমিকম্পের সংখ্যা খুব বেশি নয়।
যদিও বাংলাদেশ ভূমিকম্প-প্রবণ অঞ্চলে অবস্থিত এবং এর নিচে যে পরিমাণ শক্তি জমা হয়ে আছে তা বের হলে বাংলাদেশে বেশ বড় ধরণের ভূমিকম্পের আশঙ্কা রয়েছে বলে বিশেষজ্ঞরা ধারণা করেন।