চলতি বোরো সংগ্রহ উপলক্ষে লাগামহীন ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে মণিরামপুর উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তার বিরুদ্ধে । সরকারিভাবে ধান সংগ্রহের নীতিমালা উপেক্ষা করে বিল আটকিয়ে তিনি কৃষকের কাছ থেকে অর্থ আদায় করছেন। চাল সংগ্রহে কেজি প্রতি ১ টাকা ঘুষ নিচ্ছেন। এতে সংশ্লিষ্ঠদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে।
জানা গেছে, গত ৭ মে সরকারিভাবে যশোরে মণিরামপুরে বোরো সংগ্রহ অভিযান শুরু হয়েছে। এখানে চালের বরাদ্দ ২১শ’ ১৭ মেট্রিক টন ও ধান ২৮ শ’ ২৩ মেট্রিক টন। সরকারের সাথে চুক্তিকৃত উপজেলার ২৮ জন চালকল মালিকের কাছ থেকে ওই চাল ক্রয় করা হচ্ছে।
এর আগে যশোর জেলা প্রশাসকের অনুমতিক্রমে ধান চাল সংগ্রহ কমিটির মিটিং অনুষ্ঠিত হয়। ওই মিটিংয়ে সিন্ধান্ত হয় চালকল মালিকরা চাল সবরাহের জন্য সংশিষ্ট এলাকার ওসিএলএসডি’র কাছে আবেদন করবে। ওই আবেদন উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা ফরওয়াডিং করে জেলা কর্মকর্তার কাছে প্রেরণ করবে। সেখান থেকে অনুমোদন পাওয়ার পর চালকল মালিকরা গুদামে চাল সবরাহ করবে। একইভাবে এ্যাপসের মাধম্যে কৃষকের কাছ থেকে ধান ক্রয় করা হবে। কিন্তু সেই নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে উপজেলা খাদ্য ইন্দ্রজিৎ সাহা কৃষক ও চালকল মালিকদের তার অফিসে ডেকে নিয়ে অনৈতিক সুবিধা হাসিল করছেন।
কৃষক তার কাছে না গেলে তিনি কোন বিল অনুমোদন করেন না। একটা ডব্লিউকেসিতে তিনি ১৫ শ টাকা ঘুষ নিচ্ছেন। তাকে উৎকোচ না দিলে ডব্লিউকেসিতে স্বাক্ষর করছেন না। তাকে অনৈতিক সুবিধা দিতে বাধ্য হতে হচ্ছে কৃষকের। একইভাবে কেজিপ্রতি ১ টাকা রেট বেঁধে কেনা হচ্ছে সরকারি চাল। চালকল মালিকরা উৎকোচের দিতে অপাগতা প্রকাশ করলে নানা ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। ফলে নি¤œমানের চাল সবরাহ করতে বাধ্য হচ্ছেন সরকারর সাথে চুক্তিকৃত মিল মালিকরা।
সুত্রগুলো জানিয়েছে, বিগত ধান-চাল সংগ্রহ মৌসুমে চালের বাজার অনুকূলে ছিল না। তখন সরকার নির্ধারিত দাম থেকে বাজারে চালের দাম বেশি ছিল। ফলে চালকল মালিকরা সরকারের কাছে চাল বিক্রি করতে অপারগতা প্রকাশ করেন। কিন্তু চাল না দিলে পরবর্তী মৌসুমে শাস্তিসরুপ বরাদ্দ হবে না বিধায় তখন অনেক টাকা গচ্ছা দিয়ে চালকল মালিকরা খাদ্যগুদামে চাল বিক্রি করে।
এ সময় অনেক মিলার সরকারের সাথে চুক্তি করেও চাল সবরাহ করতে না পারায় তাদের শাস্তি পেতে হয়েছে। পরবর্তী মৌসুমে তারা গুদামে চাল দিতে পারেনি। এ বছর তাদের শাস্তি মওকুফ করা হয়েছে। শাস্তি মওকুফ এর পর তারা সরকারের সাথে চুক্তি নবায়ন করতে গেলে উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা ইন্দ্রজিৎ সাহা প্রতি মিলারের কাছ থেকে ৫ হাজার টাকা উৎকোচ নিয়েছেন। একাধিক মিলার টাকা দেয়ার কথা স্বীকার করেছে।
এবারের সরকার নির্ধারিত মোটা চালের দাম ধরা হয়েছে ৪৫ টাকা। কিন্তু বাজারের ওই মোটা চালের দাম ৪১/৪২ টাকা। অথ্যাৎ কেজি প্রতি ব্যবধান ৩/৪ টাকা। এ সুযোগে উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা চালকল মালিকদের উপর চাপ প্রয়োগ করে কেজি প্রতি ১ টাকা অবৈধ উৎকোচ গ্রহণ করছেন। কোন চালকল মালিক উৎকোচ না দিলে ভয়ভীতিও দেখানো হচ্ছে।
সুত্র বলছে ,চলতি বোরো ধান-চাল সংগ্রহ অভিযান শুরুর সাথে সাথে উপজেলার খাদ্য কর্মকর্তা কৃষক ও চালকল মালিকদের তার অফিসে ডেকে নিয়ে এসে উৎকোচের দরকষাকষি করছেন। ওই কর্মকর্তার রুমে কৃষক ও চালকল মালিকদের ভিড় লেগে আছে। হচ্ছে টাকা লেনদেন।
সুত্র বলছে, চালকল মালিকরা কৃষকের কাছ থেকে ধান ক্রয় করে চাল প্রস্তত করে গুদামে সবরাহ করবে। কিন্তু উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তাকে অনৈতিক সুবিধা দিতে গিয়ে মিলে প্রস্তুত না করে বাজার থেকে কম দামে নিম্নমানের চাল ক্রয় তা গুদামে সবরাহ করছে। গুদামে সংগ্রহকৃত চালের মান যাচাই করলেই বিষয়টি ধরা পড়বে।
একাধিক চালকল মালিকের অভিযোগ, ‘উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তাকে অনৈতিক সবিধা দিতেই তারা অতি নিম্নমানের চাল সবরাহ করতে বাধ্য হচ্ছে। তাকে অনৈতিক সুবিধা না দিলে কৃষক হয়রানির শিকার হচ্ছে। এজন্য সংশ্লিষ্ঠরা এ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জেলা প্রশাসকসহ খাদ্য অধিদপ্তরের উদ্ধর্তন কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
সুত্র বলছে, মণিরামপুর উপজেলা খাদ্য ইন্দ্রজিৎ সাহার কর্মস্থলে প্রায় ৩ বছর পূর্ণ হতে চলেছে। বদলীর সময় ঘনিয়ে আসায় তিনি সবার কাছে প্রচার করছেন, ‘ভাল জায়গায় পোষ্টিংয়ে যেতে অনেক টাকার প্রয়োজন। সে টাকা এখান থেকে উসুল করতে হবে। ’ অফিস স্টাফদের সাথের তিনি খারাপ ব্যবহার করেন বলে জানা গেছে।
অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে মণিরামপুর উপজেলা খাদ্য ইন্দ্রজিৎ সাহা বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, ‘এসব অভিযোগের কোন ভিত্তি নেই। কে আপনাদের কাছে এমন তথ্য দিয়েছে নাম বলেন।’