মালদ্বীপের পার্লামেন্ট নির্বাচনে বিপুল ভোটে জিতে ক্ষমতায় নিজেদের অবস্থান আরও সুদৃঢ় করেছে প্রেসিডেন্ট মোহামেদ মুইজের দল পিপলস ন্যাশনাল কংগ্রেস (পিএনসি)।
সাময়িক ফলাফল অনুযায়ী, ৯৩ সদস্যের প্রতিনিধি পরিষদে মি. মুইজের দল পিপলস ন্যাশনাল কংগ্রেস (পিএনসি) পেয়েছে ৬৬টা আসন।
বিশ্লেষকদের মতে পিএনসি-র জয় চীনের সঙ্গে সুসম্পর্ক স্থাপনে প্রেসিডেন্ট মুইজের নীতির প্রতিই জোরালো সমর্থন বলে মনে করা হচ্ছে।
চীনপন্থী হিসেবে পরিচিত মোহামেদ মুইজ মালদ্বীপে দীর্ঘদিন ধরে থাকা ভারতের প্রভাব কমাতে চান।
তার দলের এই জয়কে ‘সুপার মেজরিটি’ হিসেবে বর্ণনা করেছে স্থানীয় গণমাধ্যম। সংবিধান সংশোধনের জন্য সংসদে যে দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকা দরকার, এই নির্বাচনের মাধ্যমে তার দল পিএনসি সেটি অর্জন করেছে।
প্রধান বিরোধী দল মালদিভিয়ান ডেমোক্রেটিক পার্টি (এমডিপি) পেয়েছে মাত্র ১৫টা আসন। আগে পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন ছিল তাদের দখলে। সেই চিত্র বদলে গেছে রোববারের ভোটের পর।
মালদ্বীপের বিশ্লেষক ও ইউনিভার্সিটি অব ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ার লেকচারার আজিম জহির বলেছেন, “মুইজের জন্য এটা একটা উল্লেখযোগ্য প্রাপ্তি।”
এই জয়ের ফলে “রাজনৈতিক প্রাতিষ্ঠানিক দৃষ্টিকোণ থেকে এবার মি. মুইজ সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করবেন। তাত্ত্বিক দিক থেকে বিচার বিভাগকেও নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন তিনি। কারণ সংসদে পর্যাপ্ত আসন তাদের।”
মোহামেদ মুইজ ক্ষমতায় এসেছিলেন গত বছর শেষের দিকে। নির্বাচনে তার প্রধান প্রচারণা ছিল পূর্ববর্তী সরকারের নেওয়া “ভারত প্রথম” নীতির অবসান ঘটানো।
প্রেসিডেন্ট পদে আসীন হওয়ার পর এখনও তিনি দিল্লি সফরে যাননি।
মালদ্বীপে থাকা ভারতীয় সেনাদের দেশে ফেরত পাঠানোর প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিলেন তিনি। সেই প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ভারতীয় সেনাদের মালদ্বীপ থেকে চলে যাওয়ার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। ওই দেশে দিল্লির প্রভাব কমানোই এর কারণ হিসাবে মনে করা হয়।
ইতোমধ্যে ভারতীয় সামরিক কর্মীদের দুটি ব্যাচ মালদ্বীপ ছেড়ে গিয়েছে এবং তাদের পরিবর্তে নিয়োগ করা হয়েছে ভারতের বেসামরিক প্রযুক্তিগত কর্মীদের। বাকি সেনারা ১০ মে-এর মধ্যে মালদ্বীপ থেকে চলে যাবেন বলে জানা গিয়েছে।
মালদ্বীপে উদ্ধার ও পুনরুদ্ধার কাজের জন্য দুটি হেলিকপ্টার এবং একটি বিমান রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচালনার জন্য মালদ্বীপে প্রায় ৮৫ জন ভারতীয় সামরিক কর্মী ছিলেন। বছর কয়েক আগে দিল্লির তরফে এই বিমান অনুদান হিসাবে দেওয়া হয়েছিল।
ভারতীয় সেনা ফেরত পাঠানোর সিদ্ধান্তের কারণে দিল্লির সঙ্গে মালের সম্পর্কে টানাপোড়েন সৃষ্টি হয়েছে। দুই দেশের সম্পর্কে এই টালমাটাল পরিস্থিতিকে বেইজিং কাজে লাগাতে আগ্রহী বলেই মনে করা হয়।
প্রসঙ্গত, মি. মুইজ জানুয়ারি মাসে রাষ্ট্রীয় সফরে বেইজিংয়ে গিয়েছিলেন। সে সময় বিনিয়োগের জন্য চীনের সঙ্গে বেশ কয়েকটি চুক্তিও স্বাক্ষর করেছেন।
মার্চ মাসে বিনামূল্যে অস্ত্রের (প্রাণঘাতী নয় এমন) জন্য চীনের সঙ্গে একটি ‘সামরিক সহায়তা’ চুক্তি স্বাক্ষর করেছিল মালে। সেই চুক্তি অনুযায়ী মালদ্বীপের সুরক্ষা বাহিনীকে চীনের প্রশিক্ষণ দেওয়ারও কথা।
এর আগে, ভারত এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মালদ্বীপের সামরিক বাহিনীকে প্রশিক্ষণ দিত।
বিশ্লেষক মি. জহির বলছেন, “এখন একটি ভারসাম্যপূর্ণ পররাষ্ট্রনীতি তৈরি করার আরও অবকাশ রয়েছে। কিন্তু দিল্লি যদি সম্পর্ককে সঠিক ভাবে পরিচালনা করে না পারে এবং তাকে (প্রেসিডেন্ট মুইজকে) সাহায্য করতে অস্মমতি জানায়, তাহলে অবশ্যই মালে বেইজিংয়ের ওপর আরও বেশি নির্ভরশীল হয়ে পড়বে।”
রোববারের পার্লামেন্ট নির্বাচনের ফলাফলের আনুষ্ঠানিক অনুমোদন পেতে এক সপ্তাহ সময় লাগবে বলে মনে করা হচ্ছে।
মালদ্বীপের নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, রোববার ভোট পড়েছে প্রায় ৭৩ শতাংশ, তবে এই সংখ্যা ২০১৯ সালের পড়া ভোট ( ৮২ শতাংশের) চেয়ে কম।
ভোটের ফলাফলের পর এমডিপির একজন জ্যেষ্ঠ নেতা মুইজুকে অভিনন্দন জানান।
দলটির চেয়ারপার্সন ফাইয়াজ ইসমাইল সামাজিক মাধ্যম এক্স-এ (সাবেক টুইটার) লিখেছেন, “এমডিপি-র সংসদ সদস্যরা আমাদের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের উন্নতির জন্য দায়িত্বশীল বিরোধী দল হিসাবে সরকারের সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত।”