‘চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এইজ কেয়ার’ আশ্রমের চেয়ারম্যান মিল্টন সমাদ্দারের বিরুদ্ধে তিনটি মামলা দায়ের প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
বুধবার (০১ মে) রাতেই রাজধানীর মিরপুর মডেল থানায় মামলা দায়ের করা হবে বলে জানিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা (ডিবি) বিভাগ।
গোয়েন্দা বিভাগের তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, মিল্টন সমাদ্দারের বিরুদ্ধে মিরপুর মডেল থানায় তিনটি অভিযোগে মামলা দায়ের করা হবে। মামলাগুলো এজাহারভুক্ত হওয়ার কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন।
মামলায় মিল্টনের বিরুদ্ধে মানবপাচার, শিশুদের ওপর হামলা, আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে মারধর এবং তার টর্চার সেলসহ সব অভিযোগই তুলে ধরা হবে।
এর আগে বুধবার (১ মে) রাজধানীর মিরপুর এলাকা থেকে মিল্টন সমাদ্দারকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা (ডিবি) বিভাগ।
এ বিষয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, মিল্টন সমাদ্দারের বিরুদ্ধে অজস্র অভিযোগ রয়েছে। তার এসব অভিযোগের বিষয়ে তার স্ত্রীকেও জিজ্ঞাসাবাদ করে গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ।
তার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ উঠেছে, তা অত্যন্ত জঘন্য অপরাধ। এসব অভিযোগের প্রমাণ মিললে তাকে কোনো ভাবেই ছাড় দেওয়া হবে না।
কে এই মিল্টন সমাদ্দার?
তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানায়, বরিশালের উজিরপুরে মিল্টনের গ্রামের বাড়ি। তিনি গ্রামে থাকাকালীন তার বাবাকে মারধর করেছিলেন। এ কারণে এলাকাবাসী তাকে এলাকাছাড়া করেছিল। এরপর মিল্টন ঢাকায় চলে আসেন। পরে তিনি ঢাকার শাহবাগের একটি ফার্মেসিতে কাজ শুরু করেন। সেখানে ওষুধ চুরি করে বিক্রির কারণে মিল্টনকে বের করে দিয়েছিল ফার্মেসি মালিক। এরপর তিনি একজন নার্সকে বিয়ে করেন। বিয়ের পর ‘চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এইজ কেয়ার’ স্থাপনের জন্য স্ত্রীর সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করেন। সেই অনুযায়ী মিরপুর পাইকপাড়া এলাকায় তারা ‘চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এইজ কেয়ার’ স্থাপন করেন।
জানা গেছে, মিল্টনের ভেরিফায়েড ফেইসবুক পেজে তিনটি প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে নিজের পরিচয় তুলে ধরেন। এগুলো হলো- চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এইজ কেয়ার, চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এইজ কেয়ার ফাউন্ডেশন ও মিল্টন হোম কেয়ার প্রাইভেট লিমিটেড। এর মধ্যে প্রথম দুটি স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান এবং পরেরটি কোম্পানি।
বরিশাল থেকে আসা মিল্টন রাঙ্গামাটির চন্দ্রঘোনা খ্রিষ্টান হাসপাতাল থেকে নার্সিংয়ে ডিপ্লোমা সম্পন্ন করেছেন বলে নিজের পরিচয়ে তুলে ধরেন।
চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এইজ কেয়ার রাজধানীর মিরপুরের পাইকপাড়ায় অবস্থিত যেটিকে তিনি আশ্রম বলে তুলে ধরেছেন। তার পেইজগুলোতে সড়কে পড়ে থাকা অসহায় বৃদ্ধ কিংবা আশ্রয়কেন্দ্রের শিশুদের অনেক ছবি-ভিডিও শেয়ার করা রয়েছে। পাশাপাশি বিভিন্ন সময় দুস্থদের থাকার এ কেন্দ্র পরিদর্শনে আসা মন্ত্রী থেকে শুরু করে বিশিষ্ট ব্যক্তিদের ভিডিও পোস্ট করেছেন তিনি। অনেক ভিডিওতে তার আশ্রমের অধিবাসী বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের বাবা-মা ও শিশুদের সন্তান সম্বোধন করেন মিল্টন।
এসব ভিডিওর পাশাপাশি তার ফেইসবুক পেজে ১০টির বেশি মোবাইল ব্যাংকিং নম্বর রয়েছে, যেগুলোর মাধ্যমে অনুদান সংগ্রহ করেন তিনি। এই অনুদানেই চলে এসব কেন্দ্র বলে দাবি তার।
মানবিকতার আড়ালে ভয়াবহ প্রতারণার জাল বিস্তার করার অভিযোগ রয়েছে মিল্টনের বিরুদ্ধে। মিল্টনের বিরুদ্ধে রয়েছে অসহায় মানুষকে আশ্রয় দেওয়ার নামে তাদের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বিক্রির অভিযোগ।
এর আগে, মিল্টন সমাদ্দারের বিভিন্ন অপকর্ম নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হয়। এরপর থেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাকে নিয়ে শুরু হয় সমালোচনার ঝড়। মুখ খুলতে থাকেন ভুক্তভোগীরাও। যদিও কয়েকটি গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দিয়ে তার বিরুদ্ধে ওঠা সব অভিযোগ অস্বীকার করেন মিল্টন সমাদ্দার।