যশোর জেলা পরিষদের মার্কেটে দোকান বরাদ্দকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। গতকাল সোমবার দুপুরে জেলা পরিষদ মার্কেটে ব্যবসায়ীরা দোকান নির্মাণ কাজ শুরু করলে জেলা পরিষদ বাঁধা দিলে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।
এসময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিলে কোন প্রকার অপ্রতিকর ঘটনা ঘটেনি। তবে নতুন বরাদ্দ পাওয়া ব্যবসায়ীদের সঙ্গে পুরাতন ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সংঘর্ষ হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। যদিও এই মার্কেট নির্মাণে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ও পৌরসভার অনুমতির বিধান থাকলেও জেলা পরিষদ সেটা নেয়নি। অভিযোগ উঠেছে, ‘পুরাতন ব্যবসায়ীদের অগ্রাধিকার ভিত্তিক দোকান বরাদ্দ না দিয়ে; মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে নতুন ব্যবসায়ীদের কাছে দোকান বরাদ্দ দিচ্ছেন জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও তার ছেলে।
জানাগেছে, দীর্ঘদিন ধরে যশোর জেলা পরিষদ কার্যালয় প্রাঙ্গনে ও যশোর ইনস্টিটিউট মাঠের এক প্রান্তে পুরাতন কাপড়ের ব্যবসা করে আসছিলেন ব্যবসায়ীরা। কিন্তু সম্প্রতি যশোর ইনস্টিটিউটের মাঠ উন্নয়ন ও সৌন্দর্য্য বর্ধণের কাজ শুরু করলে ইনস্টিটিউট অংশের ব্যবসায়ীদের উচ্ছেদ করা হয়। উচ্ছেদকালে মৌখিকভাবে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয় উন্নয়নকাজ শেষ হলে এসব ব্যবসায়ীদের জেলা পরিষদ প্রাঙ্গনের মার্কেটে জায়গা বরাদ্দ দেওয়া হবে।
সেই প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী সোমবার ঐ ১২ পুরাতন ব্যবসায়ীরা জেলা পরিষদ মার্কেটে দোকান তৈরি কার শুরু করে। দোকান তৈরির এক পর্যায়ে জেলা পরিষদের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা দোকান নির্মাণে বাঁধা দেন। এসময় জেলা পরিষদ কর্মকর্তারা ব্যবসায়ীদের জানান, এখানে প্রতিটি দোকান নির্মাণ করতে হলে ৩ থেকে ৪ লক্ষ টাকা দিতে হবে। জেলা পরিষদের কর্মকর্তা বাঁধা দিলে জেলা পরিষদ ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। পরবর্তীতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিলে কোন প্রকার অপ্রতিকর ঘটনা ঘটেনি।
যশোর ইনস্টিটিউট মার্কেট অংশের সভাপতি বাবু বিশ^াস অভিযোগ করে বলেন, ‘ইনস্টিটিউটের মাঠ থেকে যখন আমাদের উচ্ছেদ করা হচ্ছিল; তখন আমাদের বলা হয়ে ছিলো জেলা পরিষদের মার্কেটে আমাদের স্থান দেওয়া হবে। সেই মোতাবেক ১২ ব্যবসায়ীরা সরে আসি। আজ জেলা পরিষদের মার্কেটে দোকান নির্মাণ করতে আসলে আমাদের বাঁধা দেওয়া হয়েছে। এখন দোকান নির্মাণ করতে দিবে না; উল্টো তিন থেকে চার লক্ষ প্রতিটি দোকানের জন্য টাকা দিতে হবে জেলা পরিষদকে। তিনি জানান, ‘আমাদের জন্য বরাদ্দ জায়গা পুরাতন ব্যবসায়ীদের আগে অগ্রাধিকার না দিয়ে জেলা পরিষদ নতুন ব্যবসায়ীদের অগ্রাধিকার দিচ্ছে।
নতুন ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে তিন থেকে চার লক্ষ টাকার বিনিময়ে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সাইফুজ্জামান পিকুল ও তার ছেলে জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানজীব নওশাদ পল্লব দোকান বরাদ্দ দিচ্ছে বলে জানতে পেরেছি। নাজমুল হোসেন নামে আরেক ব্যবসায়ী বলেন, ‘আমরা করি পুরাতন কাপড়ের ব্যবসা। এতো টাকা দিয়ে দোকান বরাদ্দ নিবো কিভাবে। জায়গা না দিলে আমরা ব্যবসা করবো কিভাবে। আমাদের জায়গা নতুন ব্যবসায়ীদের কাছে বরাদ্দ দিলে আমরা আন্দোলনে যাওয়ার হুশিয়ারি দেন। এই বিষয়ে যশোর কোতয়ালী মডেল থানার ওসি (তদন্ত) একে এম শফিকুল আলম বলেন, ‘দোকান বরাদ্দকে কেন্দ্র করে ব্যবসায়ীদের দুপক্ষ জড়ো হতে থাকে। এসময় উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। পুলিশ ঘটনাস্থল যেয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়। কোন প্রকার অপ্রতিকর ঘটনা ঘটেনি। আর জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আছাদুজ্জামান বলেন, ‘অস্থায়ী মার্কেট নির্মাণ করতে মন্ত্রনালয়ের অনুমতি নেওয়া লাগে না।
আমরা নিজেরাই অনুমতি দিতে পারি। আর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সাইফুজ্জামান পিকুল বলেন, ‘ব্যবসায়ীদের সঙ্গে জায়গা বরাদ্দ নিয়ে আমাদের কোন চুক্তি ছিলো না। নতুন ব্যবসায়ীদের সঙ্গে চুক্তিভিত্তিকভাবে দোকান বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে। মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে নতুনদের কাছ থেকে বাবা ছেলে দোকান বরাদ্দ প্রসঙ্গ তিনি বলেন, তাদের অভিযোগ মিথ্যা।