মহান আল্লাহ সৃষ্টিজগতের রিজিকদাতা। রিজিকের জন্য তিনি ঈমান আনার শর্তও জুড়ে দেননি। মুসলিম-অমুসলিম-নির্বিশেষে সবাইকে তিনি রিজিক দেন। এমনকি প্রাণিজগৎকেও তিনি অফুরন্ত রিজিক দান করেছেন।
কিন্তু কুদরতিভাবে তিনি রিজিকের মধ্যে পার্থক্য রেখেছেন। পৃথিবীর সব মানুষকে তিনি ধনী বানাননি। তিনি চাইলে পৃথিবীর সব মানুষকে অভিন্ন রিজিক দিতে পারতেন। এর নজিরও তিনি পৃথিবীতে রেখেছেন।
যেমন- মায়ের বুকের ক্ষেত্রে পৃথিবীর ধনী-গরিব সবার সমান অধিকার রয়েছে এবং সবার জন্য অভিন্ন রিজিক তিনি নির্ধারণ করেছেন। কিন্তু দুগ্ধকাল পার হওয়ার পর থেকেই সবার রিজিকে তারতম্য দেখা যায়। কিন্তু কেন এই তারতম্য? কেন সব মানুষকে ধনী বানানো হয়নি?
কুরআনের আয়াতগুলোর দিকে তাকালে এর পাঁচটি কারণ পাওয়া যায়-
১. সব মানুষকে ধনী বানানো হয়নি, যাতে একে অন্যের মাধ্যমে উপকৃত হতে পারে। অর্থাৎ যাতে মানুষ বিভিন্ন পেশা ধারণ করে একে অন্যের সহযোগিতা করতে পারে। ইরশাদ হয়েছে, ‘তারা কি তোমার রবের করুণা বণ্টন করে? আমিই (আল্লাহ) তাদের মধ্যে তাদের জীবিকা বণ্টন করি পার্থিব জীবনে এবং একজনকে অন্যজনের ওপর মর্যাদায় উন্নীত করি, যাতে একে অন্যের দ্বারা কাজ করিয়ে নিতে পারে…।’ (সুরা : জুখরুফ, আয়াত : ৩২)
২. কিছু মানুষ সম্পদ পেয়ে উদ্ধত হয়ে যায়, অহংকারি হয়ে ওঠে। যেমন—কারুন উদ্ধত ও অহংকারি হয়ে উঠেছিল। এ বিষয়ে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘কারুন ছিল মুসার সম্প্রদায়ভুক্ত। কিন্তু সে তাদের প্রতি ঔদ্ধত্য প্রকাশ করেছিল। আমি (আল্লাহ) তাকে দান করেছিলাম এমন ধনভাণ্ডার, যার চাবিগুলো বহন করা এক দল বলবান লোকের পক্ষেও কষ্টসাধ্য ছিল। স্মরণ করো, তার জাতি তাকে বলেছিল, দম্ভ কোরো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ দাম্ভিকদের পছন্দ করেন না।’ (সুরা : কাসাস, আয়াত : ৭৬)
সুতরাং সব মানুষকে এ জন্য অঢেল সম্পত্তি দেওয়া হয়নি, যাতে মানুষ উদ্ধত হতে না পারে। ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ তার সব বান্দাকে জীবন উপকরণে প্রাচুর্য দিলে তারা পৃথিবীতে অবশ্যই বিপর্যয় সৃষ্টি করত। কিন্তু তিনি (আল্লাহ) তার ইচ্ছামতো যথাযথ পরিমাণে রিজিক অবতীর্ণ করেন। তিনি তার বান্দাদের সম্যক জানেন ও দেখেন।’ (সুরা : শুরা, আয়াত : ২৭)
৩. মহান আল্লাহ কিছ মানুষকে ধনী বানিয়েছেন। আবার কিছু মানুষকে গরিব বানিয়েছেন। রিজিকের এই হ্রাস-বৃদ্ধি পরীক্ষাস্বরূপ। ধনীর জন্য আল্লাহর নির্দেশ পালন ও মানুষের অধিকার আদায়ের পরীক্ষা আর গরিবের জন্য সবরের পরীক্ষা। ইরশাদ হয়েছে, ‘তুমি তোমার চক্ষুদ্বয় কখনো প্রসারিত কোরো না তার প্রতি, যা আমি তাদের বিভিন্ন শ্রেণিকে পার্থিব জীবনের সৌন্দর্যস্বরূপ উপভোগের উপকরণ হিসেবে দিয়েছি- এর মাধ্যমে তাদের পরীক্ষা করার জন্য। তোমার রবের রিজিক উত্কৃষ্ট ও অধিক স্থায়ী।’ (সুরা : ত্বহা, আয়াত : ১৩১)
৪. যাদের ধনী বানানো হয়নি, তাদের জন্য সান্ত্বনা হলো, মহান আল্লাহ এর বিনিময়ে তাদের পরকালীন জীবন সমৃদ্ধ করার ঘোষণা দিয়েছেন। তবে এর জন্য শর্ত হলো, ঈমান আনার পাশাপাশি নেক আমল নিয়ে কবরে যেতে হবে। মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘কেউ পার্থিব সুখ-সম্ভোগ কামনা করলে আমি যাকে ইচ্ছা, যে পরিমাণ ইচ্ছা এখানেই সত্বর দিয়ে থাকি। পরে তার জন্য জাহান্নাম নির্ধারণ করি, যেখানে সে প্রবেশ করবে নিন্দিত ও অনুগ্রহবঞ্চিত অবস্থায়। আর যারা ঈমানদার হয়ে পরকাল কামনা করে এবং তার জন্য যথাযথ চেষ্টা করে, তাদের প্রচেষ্টা অবশ্যই পুরস্কারযোগ্য।’ (সুরা : বনি ইসরাঈল, আয়াত : ১৮-১৯)
৫. মানবসমাজ টিকিয়ে রাখার স্বার্থেই সব মানুষকে অঢেল সম্পত্তি দেওয়া হয়নি। কেননা ধনাঢ্য ব্যক্তিদের মধ্যে অপরাধপ্রবণতা বেশি। তাই সব মানুষকে ধনী বানানো হলে গোটা সমাজ পাপাচারের ভারে নুয়ে পড়ত। এ বিষয়ে কোরআনে এসেছে, ‘যখন আমি কোনো জনবসতি ধ্বংস করতে চাই তখন তার সমৃদ্ধিশালী লোকদের (সৎকর্ম করতে) নির্দেশ দিয়ে থাকি। কিন্তু তারা সেখানে অসৎকাজ করতে থাকে। আর তখন (আজাবের) ফায়সালা ওই জনবসতির ওপর অবধারিত হয়ে যায়। আমি তা সম্পূর্ণভাবে বিধ্বস্ত করে দিই।’ (সুরা : বনি ইসরাঈল, আয়াত : ১৬)
কাজেই মানবসমাজ টিকিয়ে রাখার স্বার্থেই সব মানুষকে ধনী বানানো হয়নি।
সূত্র: বিডি জার্নাল
ইসলাম সম্পর্কিত প্রতি মূর্হর্তের খবর জানুন এখানে
এই পোস্টটি যদি ভালো লেগে থাকে তাহলে ফেইসবুক পেজটি লাইক দিন এবং এই রকম আরো খবরের এলার্ট পেতে থাকুন