রাসুল (সা.) এর যুগের কারাগার

 

ইসলাম-পূর্ব জাহেলি যুগেও আরব সমাজেও কারাগারের অস্তিত্ব পাওয়া যায়। তাই হিরার শাসকরা মুনাজিরাদের সময় ইরাকে বেশ কয়েকটি কারাগার তৈরি করে। ইসলাম আগমনের পর কোরআন ও সুন্নাহর আলোকে অপরাধের শাস্তির বিধান করা হয়। অনেক অপরাধের শাস্তির কথা শরিয়তে বর্ণিত নয়। কোরআন ও হাদিসে সুস্পষ্টভাবে বর্ণিত নয় এমন শাস্তিকে ‘তাজির’ বলা হয়। অপরাধের মাত্রা বুঝে বিচারকরা তাজির নির্ধারণ করেন। ইসলামী শাস্তির বিধান মতে, কারাগার কাউকে লাঞ্ছিত বা অপদস্থ করার জন্য নয়; বরং তা ব্যক্তির নিজস্ব কার্যকলাপে বাধা দেওয়ার একটি মাধ্যম। এটি মসজিদ কিংবা ঘরের মধ্যে রেখেও করা যায়। (ইবনে তাইমিয়া, মাজমুউল ফাতওয়া)

রাসুল (সা.)-এর যুগে অপরাধীদের জন্য প্রচলিত অর্থে নির্দিষ্ট কোনো কারাগার ছিল না; বরং প্রয়োজনের মুহূর্তে একটি স্থানে বন্দিদের রাখা হতো। আল্লামা আবু মুহাম্মাদ ইবনে হাজম (রহ.) বর্ণনা করেন, ‘রাসুল (সা.)-এর কখনো কোনো কারাগার না থাকার বিষয়ে কারো কোনো দ্বিমত নেই।’ (আল মাহাল্লি : ৩৮৩/৯)

রাসুল (সা.)-এর যুগে সাধারণত অপরাধী ও যুদ্ধবন্দিদের মসজিদের খুঁটির সঙ্গে বেঁধে রাখা হতো। যেমন—সুমামা বিন উসাল (রা.)-কে তিন দিন মসজিদের খুঁটির সঙ্গে বেঁধে রাখা হয়। সাহাবিদের প্রাত্যহিক কার্যকলাপ প্রত্যক্ষ করে ইসলাম গ্রহণ করেন তিনি। মসজিদে বন্দি করার কারণে মুসলিমদের সঙ্গে সরাসরি মেলামেশার সুযোগ হয় অনেকের। ফলে বহু অমুসলিম ইসলাম গ্রহণ করেছেন। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ২৩৪৯)

ওমর (রা.)-এর যুগে ইসলামী সাম্রাজ্য বিস্তৃত হওয়ায় অপরাধী দমনে কারাগার স্থাপনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। তখন মক্কায় অবস্থিত সফওয়ান বিন উমাইয়ার ঘর চার হাজার দিরহামে কিনে তা কারাগার হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এটাই ছিল ইসলামের ইতিহাসে প্রথম কারাগার। ওমর (রা.)-কে মুসলিম ইতিহাসে কারাগারের মূল প্রতিষ্ঠাতা অবিহিত করা হয়। চতুর্থ খলিফা আলী (রা.)-এর সময়ে কারাগারের অবকাঠামো ও প্রাতিষ্ঠানিক রূপরেখা আরো বিস্তৃত হয়। সামগ্রিকভাবে ইসলামের ইতিহাসে আলী বিন আবু তালেব (রা.) কারাগারের সূচনাকারী হিসেবে পরিচিত।

আধুনিক কারাগারের সূচনা
উমাইয়া যুগে কারাগারের পরিধি আরো বিস্তার লাভ করে। মুয়াবিয়া বিন আবু সুফিয়ান (রা.)-এর সময়ে দামেস্কের ‘আদ দারুল খাজরা’ প্রাসাদ প্রশাসনিক কাজের জন্য ব্যবহৃত হতো। এই প্রাসাদের অভ্যন্তরে কারাগারও স্থাপনা করা হয়। কেউ রাষ্ট্রীয় শৃঙ্খলাবিরোধী কাজ করলে তাকে সেখানে বন্দি করে রাখা হতো। (আত তানবিহ ওয়াল ইশরাফ, মাসউদি)

আব্বাসীয় যুগে কারাগারের ব্যবস্থাপনা আরো আধুনিক হয়। ‘মুতবিক’ নামে আব্বাসীয় খেলাফতের রাজধানীতে একটি কেন্দ্রীয় কারাগার স্থাপন করা হয়। মদিনার গভর্নর সায়িদ বিন আসের সময়ে মদিনায়ও এমন একটি কারাগার স্থাপন করা হয়েছিল। কুফার কারাগারটি ছিল সবচেয়ে সুরক্ষিত ও বিস্তৃত। ইরাকের শাসনকর্তা হাজ্জাজ বিন ইউসুফের সময়ে অনেক কারাগার তৈরি হয়। ওয়াসেত নগরীর দিময়াসে অবস্থিত কারাগারটি ছিল সবচেয়ে ভয়ানক কারাগার। (আল মুনতাজাম, ইবনুল জওজি)

মুহাম্মাদ হেদায়াতুল্লাহর লেখা থেকে

 

সূত্র: কালের কন্ঠ

এই পোস্টটি যদি ভালো লেগে থাকে তাহলে ফেইসবুক পেজটি লাইক দিন এবং এই রকম আরো খবরের এলার্ট পেতে থাকুন

 আরো পড়তে পারেন:  

Loading...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *