সুস্থতা-অসুস্থতা আল্লাহর নিয়ামত। স্বাভাবিক রোগব্যাধির পাশাপাশি পৃথিবীকে আক্রান্ত করেছে এখন কভিড-১৯ (করোনাভাইরাস)। আমাদের দেশসহ পৃথিবীর লাখ লাখ মানুষ করোনায় আক্রান্ত। করোনা কিংবা স্বাভাবিক রোগব্যাধি যা-ই হোক, অসুস্থ হওয়ার পর সেবা পাওয়া রোগীর মৌলিক অধিকার। ইসলামে এ অধিকার অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে প্রতিষ্ঠিত। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘মুসলমানের প্রতি অন্য মুসলমানের পাঁচটি অবশ্যকরণীয় রয়েছে। … এর অন্যতম হলো রোগীর খোঁজখবর নেওয়া।’ মুসলিম। সেবা পাওয়া রোগীর অধিকার আর রোগীকে সেবা প্রদান করা অন্যদের ওপর একান্ত কর্তব্য। ইসলামে রোগীর সেবার ব্যাপারে এত গুরুত্ব থাকার পরও করোনায় আক্রান্ত সন্দেহে রোগীকে রাস্তায় ফেলে যাওয়ার নির্মম খবর এসেছে গণমাধ্যমে। তবে রোগীর প্রতি নির্মমতার খবরের পাশাপাশি কিছু স্বেচ্ছাসেবী করোনায় আক্রান্ত, অভাবী ও লাশ দাফন এবং সৎকারে দিনরাত নিবেদিতপ্রাণ হয়ে কাজ করে যাচ্ছেন- এ খবরও বেশ প্রচারিত হয়েছে। অনেক পুলিশ সদস্য সেবা দিতে গিয়ে আক্রান্ত হয়েছেন- এ কথাও আমরা জানি। করোনা তো নয়ই, সাধারণ জ্বর-সর্দিতে আক্রান্তকেও হাসপাতাল ভর্তি নিচ্ছে না- গণমাধ্যমে এমন খবর যেমন এসেছে, তেমন করোনায় আক্রান্তকে চিকিৎসাসেবা দিতে গিয়ে নিবেদিতপ্রাণ ডাক্তার নিজের প্রাণই বিলিয়ে দিয়েছেন- এমন খবরও এসেছে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যারা করোনা বা অন্য কোনো রোগে আক্রান্তের সেবায় আত্মনিয়োগ করছেন তারা অনেক বড় সওয়াবের কাজ করছেন। রোগীর সেবা করার সুযোগ থাকার পরও যদি কোনো হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রোগীকে ভর্তি না নেয়, প্রতিবেশীকে অসুস্থ হতে দেখে অন্য প্রতিবেশী যদি সাধ্যমতো রোগীর সেবায় এগিয়ে না আসে তাহলে হাশরের ময়দানে সরাসরি আল্লাহর দরবারে তাকে জিজ্ঞাসিত হতে হবে। সাধ্যমতো রোগীর সেবা না করলে যেমন রয়েছে কঠিন শাস্তি, তেমন রোগীর সেবায় যারা এগিয়ে আসছেন তাদের জন্য দুনিয়া ও আখিরাতে রয়েছে পুরস্কার। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘কোনো মুসলিম যখন তার (অসুস্থ) মুসলিম ভাইয়ের সেবায় নিয়োজিত হয়, সে ফিরে আসা পর্যন্ত জান্নাতের ফলবাগানে (তার ছায়ায়) অবস্থান করতে থাকে।’ মুসলিম।
রোগীকে দেখতে যাওয়া মানুষটির জন্য সকাল-সন্ধ্যা ৭০ হাজার ফেরেশতা দোয়া করতে থাকে। হজরত আলী (রা.) থেকে বর্ণিত। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘কোনো মুসলমান যদি অন্য কোনো মুসলিম রোগীকে সকালে দেখতে যায় তাহলে ৭০ হাজার ফেরেশতা তার জন্য সন্ধ্যা পর্যন্ত দোয়া করতে থাকে। আর সে যদি সন্ধ্যায় তাকে দেখতে যায় তবে ৭০ হাজার ফেরেশতা (পরবর্তী) ভোর পর্যন্ত তার জন্য দোয়া করতে থাকে এবং জান্নাতে তার জন্য একটি ফলের বাগান তৈরি হয়।’ তিরমিজি। আজ আমার পাশের লোকটি রোগাক্রান্ত হয়েছেন, আগামীকাল তো আমিও হতে পারি। আমি অসুস্থ হলে অন্যদের কাছে যেমন আচরণ প্রত্যাশা করি, রোগীদের প্রতি তেমন আচরণ করা আমার কর্তব্য।
লেখক : খতিব, বাইতুশ শফীক মসজিদ ও পরিচালক, বাইতুল হিকমাহ একাডেমি, গাজীপুর।
সূত্র: বিডি প্রতিদিন