সংগঠনের নেতৃত্ব নিয়ে তুমুল দ্বন্দ্ব-গ্রুপিং, কিছু নেতার ভূমিকা নিয়ে বিতর্ক এবং এর জের ধরে সরকারের সাথে যোগসাজশে ‘বাধ্য হওয়ার’ অভিযোগ নিয়ে বিপাকে পড়ে এখন অনেকটা ঢিমেতালে কার্যক্রম চালাচ্ছে কয়েক বছর আগে হুট করে শক্তিধর হিসেবে আবির্ভূত হওয়া কওমি মাদ্রাসা ভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম।
সংগঠনটিতে বিভিন্ন সময়ে গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন এবং এখনো কমিটিতে আছেন এমন কয়েকজন নেতা ছাড়াও পর্যবেক্ষক ও বিশ্লেষকদের সাথে আলাপ করে এমন ধারণাই পাওয়া গেছে।
সংগঠনটিতে আগে সক্রিয় ছিলেন এমন কয়েকজনের মতে ‘হেফাজত প্রেশার গ্রুপ হিসেবে ভূমিকা রাখার মতো অবস্থানে এখন আর নেই, বরং সংগঠনটি এখন কিছু নেতার মাধ্যমে সরকারি নির্দেশনায় পরিচালিত হচ্ছে’।
একজন রাজনৈতিক বিশ্লেষক এবং ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের খোঁজ রাখেন এমন একজন বলছেন যে তারা মনে করেন এক দশক আগে সরকারের জন্য যতটা চ্যালেঞ্জ ধর্মভিত্তিক এই সংগঠনটি তৈরি করেছিলো সেটি এখন আর নেই।
বরং ‘মামলা থেকে রক্ষা পেতে’ এবং ‘জেলে থাকা নেতাদের মুক্তি নিশ্চিত করতে গিয়ে’ সরকার বা আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর ‘নিয়ন্ত্রণে’ চলে গেছে সংগঠনটি, এমন ধারণাও তৈরি হয়েছে সংগঠনটির ভেতরে ও বাইরে অনেকের মধ্যে।
তবে সংগঠনটির দুজন নেতা বিবিসিকে বলেছেন যে হেফাজত দুর্বল হয়নি বরং ‘নির্যাতন মামলা হয়রানি মোকাবেলা করেও এটি এগিয়ে চলেছে’ বলে মনে করেন তারা।
‘সরকারের নিয়ন্ত্রণে থাকা’ বা ‘সরকারের সাথে যোগাযোগ’ করে চলার অভিযোগও প্রত্যাখ্যান করেছেন তারা।
হেফাজত ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব আজিজুল হক ইসলামাবাদী বিবিসি বাংলাকে বলেছেন হেফাজতের মধ্য থেকেই কিছু ব্যক্তি সরকারের ‘এজেন্ট’ হয়ে সংগঠন ভাঙ্গতে চেয়েছিলো।
“কিন্তু তারা তা পারেনি। মাঝে যারা সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক রেখে চলেছে তারাও সেই সম্পর্ক ভঙ্গ করেছে, বলেছেন তিনি।
আরেকজন যুগ্ম মহাসচিব মীর ইদ্রিস বলছেন সংগঠনের কোন নেতৃত্ব সংকটও নেই। তার দাবি, “আহমদ শফীকে ব্যবহার করে কিছু লোক স্বার্থ উদ্ধারের চেষ্টা করেছিলো তার মৃত্যুর আগে। কিন্তু তিনি ভুল বুঝতে পেরে তাদের বাদ দিয়েছিলেন নিজেই। ফলে হেফাজতে কখনোই আর নেতৃত্ব নিয়ে দ্বন্দ্ব দেখা যায়নি”।
২০১০ সালে সংগঠনটির তৎপরতা শুরু হয়েছিলো। কিন্তু ২০১৩ সালের ৫ই মে ঢাকার মতিঝিলের শাপলা চত্বরে বিশাল সমাবেশ করে বিস্ময়ের জন্ম দিয়েছিলো কওমি মাদ্রাসা ভিত্তিক এই সংগঠনটি। বিশেষ করে শাহবাগে যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে গড়ে ওঠা আন্দোলনের সময় হেফাজতের এই আবির্ভাব স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশের রাজনীতির আলোচিত এক ঘটনা বলেই মনে করেন অনেকে।
এরপর অন্তত আট বছর নানাভাবে সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগ করে নিজেদের বেশ কিছু দাবি দাওয়া আদায়ও করে নিয়েছিলো তারা।
কিন্তু ২০২১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর নরেন্দ্র মোদীর ঢাকা সফরের সময় সহিংসতায় জড়িয়ে পড়া, ঢাকায় বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য স্থাপনের বিরোধিতা করা এবং এ বিরোধিতায় নেতৃত্ব দেয়া মামুনুল হক ঢাকার একটি রিসোর্টে এক নারী সহ আটকের ঘটনার জের ধরে অনেকটা সংকটে পড়ে যায় সংগঠনটি।
“এসব ঘটনার জের ধরে তৈরি হওয়া সংকট কাটিয়ে উঠতে না পেরে দফায় দফায় সরকারের দ্বারস্থ হয়েছেন এই সংগঠনের নেতারা। আমি মনে করি সেটিই সরকারকে সুযোগ করে দিয়েছে এটিকে কব্জায় নেয়ার,” বলছিলেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক জোবাইদা নাসরীন।
এখন কী অবস্থা হেফাজতের?
হেফাজত ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মীর ইদ্রিস বিবিসি বাংলাকে বলছেন সাংগঠনিক তৎপরতা কম থাকলেও হেফাজত বসে নেই।
“ইসলামের প্রচারে হেফাজতে ইসলাম সক্রিয় আছে। কর্মসূচি না থাকায় হয়তো মনে হচ্ছে আমরা নেই। কিন্তু বিষয়টা তেমন নয়,” বলছিলেন তিনি।
তবে সংগঠনটিতে বিভিন্ন সময়ে সক্রিয় ছিলেন এমন কয়েকজনের সাথে আলাপ করে যেই ধারণা পাওয়া গেছে তাহলো ২০২০ সালে আহমদ শফির মৃত্যুর আগে তার ছেলে আনাস মাদানীকে সংগঠনটির প্রধান করার যে চেষ্টা হয়েছিলো তার রেশ এখনো কাটেনি।
আনাস মাদানী ও তার অনুসারীরা এখন সংগঠনটির কার্যক্রমে সক্রিয় নন। এরপর কার্যত মি. হকসহ কয়েকজন সংগঠনে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠেন।
পরে নরেন্দ্র মোদীর বাংলাদেশ সফরের বিরোধিতা করে হেফাজতে ইসলামের নেয়া কর্মসূচীকে ঘিরে সহিংসতায় কমপক্ষে ২১ জনের মৃত্যু হয়েছিলো।
এর রেশ কাটতে না কাটতেই সংগঠনটির অন্যতম নেতা মি. হকের নারী ঘটিত ঘটনায় সমালোচনার প্রেক্ষাপটে তাকে নেতৃত্ব থেকে সরিয়ে দেয় হেফাজত। যদিও বাস্তবতা হলো হেফাজতের কেন্দ্রীয় কমিটিতে এখন যারা আছেন তাদের বেশীরভাগই মি. হকের ঘনিষ্ঠ।
আজিজুল হক ইসলামাবাদী বলছেন মামুনুল হককে নিয়ে ষড়যন্ত্র হয়েছে আর হেফাজত নরেন্দ্র মোদী বিরোধিতা করেছিলো নীতিগত অবস্থান থেকে কিন্তু তার সফরের দিনে কোন কর্মসূচি দেয়া হয়নি।
“কিন্তু পরিকল্পিতভাবে সেদিন সহিংসতা তৈরি করে হেফাজতের ওপর দায় চাপিয়ে দুইশো মামলা ও দুই হাজার নেতাকর্মীকে আটক করে হেফাজতকে দুর্বল করতে পারেনি সরকার। আর মামুনুল হক জনপ্রিয় ছিলেন বলেই ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছেন,” বলছিলেন তিনি।
তবে বাস্তবতা হলো এমন যে ওই দুটি ঘটনার পর নজিরবিহীন চাপে পড়ে হেফাজত আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি।
অধ্যাপক জোবাইদা নাসরীন বলছেন মামুনুল হককে নিয়ে বিব্রতকর অবস্থায় পরার পর বিভিন্ন মামলায় সংগঠনটির আরও নেতা আটক হওয়ার পর সরকারের কাছে তাদের অনুনয় বিনয় ছিলো অনেকটাই প্রকাশ্য।
দুই হাজার একুশ সালের এপ্রিলে মি. হকসহ বেশ কয়েকজন নেতাকে আটকের পর সংগঠনটি তাদের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দুইশোরও বেশি মামলা হয়েছে বলে জানিয়েছিল।
পরে এসব নেতার মুক্তি ও মামলা প্রত্যাহারের জন্য দফায় দফায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন হেফাজত ইসলামের নেতারা।
উভয় পক্ষের মধ্যে সমঝোতার অংশ হিসেবেই সরকার শেষ পর্যন্ত অনেকের বিরুদ্ধে মামলা নমনীয় করার উদ্যোগ নেয়।
মি. হক নিজেও এখন সব মামলায় জামিন পেয়ে কারাগার থেকে বেরিয়ে এসেছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতাকালীন একজন নেতা বিবিসিকে বলেছেন, “এখন যারা হেফাজত চালাচ্ছে তারা শুরুতে কিছুই ছিলো না। এখন তাদের মাধ্যমেই সরকারের উদ্যোগে পরিচালিত হচ্ছে সংগঠনটি”।
মীর ইদ্রিস অবশ্য এসব অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে বলেছেন, “ইসলামের স্বার্থ রক্ষায় অটুট থাকার নীতিতেই হেফাজত অবিচল আছে।”
আর মি. ইসলামাবাদী বলছেন যে, “হেফাজতকে শেষ করে দেয়ার চক্রান্ত হয়েছিলো। তবে সংগঠনের দায়িত্বশীলরা সেটি মোকাবেলায় সমর্থ হয়েছেন।”
সরকারের সঙ্গে সখ্যতার সূচনা
২০১৩ সালের মে মাসে হেফাজত ইসলামের ঢাকায় অবস্থানের চেষ্টা করে ঘিরে সরকার যে অস্বস্তির সংকটে পড়েছিলো সেটি কাটিয়ে ওঠার চেষ্টার আনুষ্ঠানিক বহি:প্রকাশ ঘটেছিলো ওই ঘটনার পাঁচ বছর পর ২০১৮ সালের নভেম্বরে।
তখন ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে কওমি মাদ্রাসার ‘শোকরানা মাহফিলে’ হেফাজতের তৎকালীন নেতা আহমদ শফীর সাথে যোগ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনাকে ‘কওমি জননী’ আখ্যা দেন হেফাজতের একজন নেতা।
তবে এর মধ্যেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার হেফাজতের চাপের মুখেই কওমি মাদ্রাসার দাওরায়ে হাদিসকে মাস্টার্সের সমমানের স্বীকৃতি দেয়াসহ বেশ কিছু দাবি দাওয়া মেনে নিতে বাধ্য হয়েছিলেন।
হেফাজতের নেতাদের ঘনিষ্ঠ এক ইসলামি লেখক বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, “তখন ইসলামী নীতি ও আদর্শ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে সত্যিকার অর্থেই একটি প্রেশার গ্রুপ হিসেবে আবির্ভূত হতে পেরেছিলো হেফাজতে ইসলাম। কিন্তু পরে তারা আর সেটি ধরে রাখতে পারেনি”।
আর বিশ্লেষক জোবাইদা নাসরীন বলছেন সমর্থক বেড়েছে না কমেছে সেটি বলা কঠিন, তবে ওই ঘটনার পর থেকেই সংগঠনটিকে সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হবার একটি প্রক্রিয়া কিন্তু দৃশ্যমানই ছিলো।
তবে যুগ্ম মহাসচিব আজিজুল হক ইসলামাবাদী বলছেন যে হেফাজত সরকারের ঘনিষ্ঠ হয়নি বরং সরকার হেফাজতকে নিশ্চিহ্ন করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছে।
“এতো মামলা, হামলা , নির্যাতনের পরেও আমরা হারিয়ে যাইনি। কিছু নেতা সরকারের স্বার্থ সংরক্ষণ করতে গিয়ে হারিয়ে গেছেন। হেফাজত আছে এবং ভালোভাবেই টিকে আছে,” বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন তিনি।
যদিও গত বছরের জানুয়ারিতে আর কখনো রাজনীতিতে না জড়ানোর এমন শর্তে রাজি হয়ে নিজেদের আটক নেতাদের মুক্তি চেয়ে প্রধানমন্ত্রীসহ আরও কয়েকজন মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন হেফাজতের সিনিয়র নেতারা।
এর আগে ২০১৮ সালে এক বিবৃতিতে তখনকার আমির আহমদ শফী ঘোষণা করেছিলেন যে হেফাজত কোন দল বা নির্বাচনে কোন প্রার্থীকে সমর্থন করবে না।
আহমদ শফীর মৃত্যুর আগে ও পরের দ্বন্দ্ব
২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আহমদ শফীর মৃত্যুর প্রায় তিন মাস পর সংগঠনটির যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হকসহ ৩৬ জনের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ এনে মামলা করেছিলেন মি. শফীর শ্যালক মোহাম্মদ মহিউদ্দিন।
মৃত্যুর একদিন আগে হাটহাজারী মাদ্রাসার শুরা কমিটির সভায় ওই মাদ্রাসার পরিচালকের পদ থেকে সরে দাঁড়াতে হয়েছিলো আহমদ শফিকেও, দলেরই আরেকটি অংশের চাপে।
তখন তার মৃত্যুর পর তার ছেলে আনাস মাদানী ইঙ্গিত করেছিলেন যে হাটহাজারি মাদ্রাসায় কয়েকদিনের ঘটনাপ্রবাহ এবং উদ্ভূত পরিস্থিতির কারণে ‘টেনশনে’ তাঁর ‘হার্ট ফেল’ হয়েছিল।
তখন মাদ্রাসার কর্তৃত্ব নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যকার বিরোধের জের ধরে মাদ্রাসার ভেতরে ভাংচুর ও বিক্ষোভের ঘটনা ঘটেছিলো।
বিক্ষোভকারীদের দাবির মুখে নিজেও মাদ্রাসার পরিচালকের পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর পাশাপাশি নিজের ছেলে আনাস মাদানীকেও মাদ্রাসা থেকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত দিয়েছিলেন আহমদ শফী।
যদিও তার ঘনিষ্ঠরা তখন দাবি করেছিলেন যে শতবর্ষী আহমদ শফী তখন খুবই অসুস্থ ছিলেন এবং তার কোন কিছু চিন্তা করার বা বোঝার মত পরিস্থিতি তখন ছিল না।
যুগ্ম মহাসচিব মীর ইদ্রিস অবশ্য দাবি করেছেন যে তখন কিছু ব্যক্তি আহমদ শফীকে সামনে রেখে নিজেদের স্বার্থে কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো যা পরে ‘হুজুর নিজেই সংশোধন করেছেন’।
জোবাইদা নাসরীন বলছেন ওই সময় হেফাজতের দু পক্ষের মধ্যে বিরোধ প্রকাশ্যে এসেছিলো এবং আহমদ শফীর মৃত্যুর পর তার ঘনিষ্ঠরা অনেকেই গুরুত্বহীন হয়ে পড়েছেন বলে তার কাছে মনে হয়েছে।
“আমি মনে করি হেফাজতের দুর্বল হয়ে পড়ার সূচনাও ছিলো এই কর্তৃত্ব কেন্দ্রিক নেতৃত্ব বিরোধ,” বলছিলেন তিনি।
ভাস্কর্য, মোদীর সফর ও মামুনুল হক
ঢাকায় বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের একটি ভাস্কর্য স্থাপনের সরকারি উদ্যোগের বিরোধিতা করে হেফাজতকে নতুন করে আলোচনায় এনেছিলেন এর তখনকার যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক।
এরপর ২০২১ সালে বাংলাদেশের সুবর্ণ জয়ন্তীতে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফরের বিরুদ্ধে মি. হকের নেতৃত্বেই হেফাজত বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে। এ নিয়ে সহিংসতায় সারাদেশে কমপক্ষে বিশ জনের মৃত্যু হয়েছিলো।
ইসলামি রাজনীতির দিকে নজর রাখেন এমন অনেকেই বিশ্বাস করেন যে আহমদ শফী পরবর্তী দুর্বল নেতৃত্ব আর এসব ঘটনার ধারাবাহিকতায় সংগঠনটি ‘প্রেশার গ্রুপ’ হিসেবে নিজের অবস্থান ধরে রাখতে পারেনি, বরং ধীরে ধীরে চাপে পড়ে নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে।
আহমদ শফির ঘনিষ্ঠ হিসেবে একসময় হেফাজতে ইসলামে প্রভাবশালী ছিলেন এমন একজন বিবিসি বাংলাকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন ‘হেফাজত আর সেই হেফাজত নেই, এটি এখন সরকার যেভাবে খুশী চালায়’।
ইসলামি একজন লেখক বলেছেন “কিছু ইস্যুতে অতি উত্তেজনায় জড়িয়ে খেই হারিয়েছে হেফাজত, যার কোন প্রয়োজন ছিলো না। এখন এটি ম্রিয়মাণ”।
আর জোবাইদা নাসরিন বলছেন নরেন্দ্র মোদীর সফরের সহিংসতা আর মামুনুল হককে ঘিরে ঘটনা প্রবাহ সংগঠনটি সামাল দিতে পারেনি, বরং উভয় ঘটনায় বিপাকে পড়ে তাদের সরকারের দ্বারস্থ হতে হয়েছে।
সব কিছু মিলিয়ে সংগঠনের ভেতরে ও বাইরে এখন অনেকের বিশ্বাস যে হেফাজতকে এখন সরকার যেভাবে খুশী ব্যবহার করতে পারে এবং করছেও।
“ধর্ম নিরপেক্ষরা সক্রিয় হলেও হেফাজতকে নামানো হয় আবার দেশে জঙ্গি বাড়ছে এটা বিদেশীদের বোঝাতেও হেফাজতকে নামানো হয়। আবার সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে বোঝাতেও হেফাজত নেতাদের আটক করা হয়। আর নেতাদের রুটিন ওয়ার্ক হয়ে দাড়িয়েছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাসায় আসা যাওয়া করা,” – হেফাজতের অবস্থা বোঝাতে এভাবেই বিশ্লেষণ করেছেন ধর্মভিত্তিক রাজনীতির একজন পর্যবেক্ষক। যদিও তিনি তার নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ করেছেন।