বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কোটার বিষয়ে সর্বোচ্চ আদালতের রায় আসা পর্যন্ত ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করার জন্য সবার প্রতি অনুরোধ করে বলেছেন, “আমার বিশ্বাস আমাদের ছাত্র সমাজ উচ্চ আদালত থেকে ন্যায় বিচারই পাবে, হতাশ হবেনা”।
যারা নিহত হয়েছে তাদের জন্য দুঃখ প্রকাশ এবং পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ”সরকার হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেছে। আপিল আদালতে শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে।”
“আদালত শিক্ষার্থীদের কোন বক্তব্য থাকলে তা শোনার সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছে। এই আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের সুযোগ রয়েছে”।
বুধবার সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে দেয়া আট মিনিটের ভাষণে তিনি আরও বলেছেন কোটা নিয়ে আন্দোলনকে ঘিরে হত্যাকাণ্ডসহ যেসব অনভিপ্রেত ঘটনা ঘটেছে সুষ্ঠু ও ন্যায় বিচারের স্বার্থে সেসব বিষয়ে বিচার বিভাগীয় তদন্ত করা হবে।
সরকারি চাকুরীতে কোটার বিষয়ে ঢাকাসহ সারাদেশে গত কয়েকদিনের সহিংসতার প্রেক্ষাপটে এ ভাষণ দিলেন তিনি। ঢাকা, চট্টগ্রাম ও রংপুরে মোট ছয়জন এসব সহিংসতায় নিহত হয়েছে।
এ কারণে দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণার পর আজ সন্ধ্যা নাগাদ শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগে বাধ্য করা হয়েছে।
শেখ হাসিনা তার ভাষণে বলেন কাদের উস্কানিতে সংঘর্ষের সূত্রপাত হলো, কারও কোন উদ্দেশ্যে দেশকে একটি অরাজক পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দিল, তা তদন্ত করে বেরা হবে।
“যারা হত্যাকাণ্ড লুটপাট ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়েছে তারা যেই হোক না কেন, তার যেন উপযুক্ত শাস্তি পায় সে ব্যবস্থা নেয়া হবে”।
তিনি ২০১৮ সালে ছাত্রসমাজের আন্দোলনের প্রেক্ষিতে সরকারি চাকরীতে কোটা প্রথা বাতিল করে পরিপত্র জারির কথা উল্লেখ করে বলেন যে, মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষ থেকে কোটা বহাল রাখার পক্ষে উচ্চ আদালত ২০১৮ সালের জারি করা পরিপত্র বাতিল করে দেয়।
সরকারের পক্ষ থেকে পরিপত্র বহাল রাখার জন্য সর্বোচ্চ আদালতে আপিল করা হয় এবং আদালত শুনানির দিন ধার্য করে।
“এসময় ছাত্ররা কোটা সংস্কারের দাবি নিয়ে আন্দোলন শুরু করে। শুরু থেকেই সরকার যথেষ্ট ধৈর্য ও সহনশীলতা প্রদর্শন করেছে। আন্দোলনকারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ সহযোগিতা করে। রাষ্ট্রপতির কাছে আন্দোলনকারীরা স্মারকলিপি দেয়ার ইচ্ছে প্রকাশের পর তাদের সুযোগ করে দেয়া হয় এবং নিরাপত্তা দেয়া হয়”।
তিনি বলেন এই আন্দোলনকে কেন্দ্র করে কিছু স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী তাদের উচ্চাভিলাষ চরিতার্থ করার জন্য বিভিন্ন ধরনের বক্তব্য ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড শুরু করে। যেহেতু বিষয়টি উচ্চ আদালতে আপিল করা হয়েছে তাই সবাইকে ধৈর্য ধারনের আহবান জানান তিনি।
“পরিতাপের বিষয় হলো কিছু মহল এই আন্দোলনের সুযোগ নিয়ে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হয়। ফলে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে ঘিরে যে সকল ঘটনা ঘটেছে তা খুবই বেদনাদায়ক ও দুঃখজনক। অহেতুক কতগুলো মূল্যবান জীবন ঝরে গেলো”।
প্রধানমন্ত্রী হত্যাকাণ্ডের নিন্দা জানিয়ে বলেন যেসব ঘটনা ঘটেছে তা কখনই কাম্য ছিলো না।
“চট্টগ্রামে সন্ত্রাসীরা বহুতল ভবনের ছাদ থেকে ছাত্রদের হত্যার উদ্দেশ্যে নির্মমভাবে নিচে ছুঁড়ে ফেলে অনেক ছাত্রদের হাত পায়ের রগ কেটে দেয়। তাদের ওপর লাঠিপেটা এবং ধারালো অস্ত্র দ্বারা আঘাত করে। একজন মৃত্যুবরণ করেছে। অনেকে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে। ঢাকা, রংপুর এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবন ও ছাত্রছাত্রীদের আবাসিক হলে অগ্নিসংযোগ ও ভাংচুর করা হয়”।
শেখ হাসিনা বলেন, মেয়েদের হলে ছাত্রীদের ওপর আক্রমণ করা হয়েছে এবং লাঞ্ছিত করা হচ্ছে। আবাসিক হলে প্রভোস্টদের হুমকি দেয়া ও আক্রমণ করা হচ্ছে। শিক্ষকদের ওপর চড়াও হয়ে তাদের গায়ে হাত তোলা হয়েছে।
“আমি বিশ্বাস করি যারা কোটা সংস্কার আন্দোলনে জড়িত তাদের সাথে এসব সন্ত্রাসীদের কোন সম্পর্ক নেই। বরং সন্ত্রাসীরা এদের মধ্যে ঢুকে সংঘাত ও নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। এ ধরনের ঘটনার সাথে যারা জড়িত তাদের চিহ্নিত করে উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে,” বলছিলেন তিনি।
শেখ হাসিনা তার ভাষণে বলেন তিনি ছাত্রছাত্রীদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন।
“এই সন্ত্রাসীরা যে কোন সময়ে সংঘাতের পরিবেশ তৈরি করে তাদের ক্ষতিসাধন করতে পারে। তাই শিক্ষার্থীদের পিতা-মাতা, অভিভাবক ও শিক্ষকদের প্রতি আমার আবেদন থাকবে, তারা যেন তাদের সন্তানদের নিরাপত্তার বিষয়ে সজাগ থাকেন”।
“আইনি প্রক্রিয়ায় সমাধানের সুযোগ থাকা সত্ত্বেও রাস্তায় আন্দোলনে নেমে দুষ্কৃতিকারীদের সংঘাতের সুযোগ করে দিবেন না,” বলেছেন তিনি।