ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের প্রধান নেতা ইয়াহিয়া সিনওয়ারের মৃত্যুর খবরটি বৃহস্পতিবার নিশ্চিত করেছে ইসরাইল। হামাস প্রধানের এই হত্যা ফিলিস্তিনি গোষ্ঠীর জন্য একটি বড় ধাক্কা। এর ফলে নেতৃত্বে একটি শূন্যতা তৈরি হতে পারে। মনোবল হারিয়ে ফেলতে পারে সংগঠনটির কর্মীরা।
এই অবস্থায় কি ঘুরে দাঁড়াতে পারবে হামাস। সংগঠনটির নতুন নেতৃত্বেই বা আসতে যাচ্ছেন কে? এ নিয়ে বিশেষজ্ঞরাই বা কী বলছেন-
গত ৭ অক্টোবর ২০২৩ সালে ইসরাইলের ওপর হামলার অন্যতম পরিকল্পনাকারী ছিলেন সিনওয়ার। সেই তিনি গত আগস্টে সংগঠনটির হাল ধরেন ইসমাইল হানিয়ার মৃত্যুর পর। এর দুই মাস না যেতেই এবার তাকেও হত্যা করেছে ইসরাইল। যাকে নিজেদের অন্যতম বড় জয় হিসেবেও মনে করছে ইসরাইল। তাদের মতে, এই যুদ্ধ এখন শেষ হওয়ার পথে।
তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হামাস তার উত্তরাধিকার ব্যবহার করে নতুন প্রজন্মকে একত্রিত করতে পারে, যারা ইসরাইলের প্রতিশোধমূলক যুদ্ধের পরিণতি ভোগ করে বড় হয়েছে। হামাসের পরবর্তী পদক্ষেপ কী হতে যাচ্ছে তা নিয়ে কথা বলেছেন কিংস কলেজ লন্ডনের মধ্যপ্রাচ্যের বিশ্লেষক আন্দ্রেয়াস ক্রিগ।
এই গবেষকের মতে, ‘সিনওয়ারের হত্যাকাণ্ড কেবল একটি প্রতীকী ঘটনা নয় বরং এই নেটওয়ার্কযুক্ত সংস্থায় একটি নেতৃত্বের শূন্যতা তৈরি করেছে। হামাসের রাজনৈতিক নেতৃত্বের বেশিরভাগই কাতারে নির্বাসিত। যার ফলে গাজায় সামরিক ও অপারেশনাল উইংয়ের মধ্যে পার্থক্য দেখা দিয়েছে। তবে হামাসের বিভিন্ন কোষ লড়াই চালিয়ে যাবে, তবে আন্দোলনের মূল অংশে, সেখানে একটি শূন্যতা রয়েছে এবং এটি সমন্বয় করা খুব কঠিন করে তুলবে।’
অন্যদিকে ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অফ সিঙ্গাপুরের মিডল ইস্ট ইনস্টিটিউটের জেমস ডরসির মতে, ‘সিনওয়ার হামাসের একজন ‘ব্যতিক্রমী’ ব্যক্তিত্ব ছিলেন। যিনি রাজনৈতিক এবং সামরিক উভয় শাখার আন্দোলনের মধ্যে ব্যাপক সমর্থন পেয়েছিলেন।’
সিনওয়ারের স্থলাভিষিক্ত কে হবেন?
ডরসির মতে, কাতার-ভিত্তিক হায়্যার মতো নির্বাসিত হামাসের অন্যান্য নেতারা সিনওয়ারের জায়গায় আসতে পারেন। অন্য নির্বাসিত নেতারা যারা দায়িত্ব নিতে পারে, তাদের মধ্যে খালেদ মেশাল রয়েছেন, যিনি ২০১৭ সালে হানিয়াহের স্থলাভিষিক্ত হওয়া পর্যন্ত হামাস প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন।
তবে ক্রিগের মতে, ‘পরবর্তী নেতা অনিবার্যভাবে অপারেশনাল স্তরের কেউ হতে চলেছেন। যিনি যুদ্ধের ময়দানে নেতৃত্ব দিতে সক্ষম। আর এখানে প্রিয় হিসাবে আবির্ভূত হয়েছে: সিনওয়ারের ছোট ভাই মোহাম্মদ সিনওয়ার। তার হয়তো ইয়াহিয়ার মতো ক্যারিশম্যাটিক নেতৃত্ব গুণ নেই। তবে তার ভালো খ্যাতি আছে… একজন জঙ্গি ও যোদ্ধা হিসেবে।’
হামাস কি ঘুরে দাঁড়াতে পারবে?
এ ব্যাপারে ক্রিগের মত, ‘হামাসের নেতাকে হত্যার ফলে তাদের কৌশলগত, অপারেশনাল পরাজয় হয়েছে। তবে তা সত্ত্বেও, সিনওয়ারের মৃত্যু গাজায় ইসরাইলের বিরুদ্ধে সশস্ত্র প্রতিরোধে রূপ নিতে যাচ্ছে না।’
অন্যদিকে ডারসি বলেন, ‘হামাস একটি আন্দোলন যা নীতিগতভাবে অত্যন্ত স্থিতিস্থাপক প্রমাণিত। হামাসের ইতিহাস… ইসরাইল তার নেতাদের হত্যার ইতিহাস। ইয়াহিয়া সিনওয়ার এই তালিকায় যোগ দিয়েছেন। তবে এটি এমন একটি প্রজন্ম যারা সব আশা হারিয়েছে… অবশ্যই গাজায়। আপনার যদি কোনো আশা না থাকে, আপনার কাছে কিছুই নেই এবং কোথাও যাওয়ার নেই, আপনার হারানোর কিছু নেই।’
তথ্যসূত্র: এএফপি।