সিরিয়া এবং ইরাকের ৮৫টি লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটি জর্ডানে তাদের এক সামরিক স্থাপনায় ড্রোন হামলার প্রতিশোধ হিসেবেই এই পাল্টা হামলা চালিয়েছে।
গত রোববারের সেই হামলায় তিনজন মার্কিন সেনা নিহত হয় ও ৪০ জনের বেশি আহত হয়। এই হামলার জন্য ইরানকে দায়ী করে আসছে যুক্তরাষ্ট্র। যদিও ইরান কোন ধরণের সম্পৃক্ততা অস্বীকার করে এই অভিযোগকে ‘ভিত্তিহীন’ বলে দাবি করেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সেন্ট্রাল কমান্ড বলছে তারা ইরানের ইসলামিক বিপ্লবী গার্ড কুদস ফোর্স এবং সহযোগি অন্যান্য সশস্ত্র বাহিনীর উপর হামলা করেছে।
শুক্রবার এক বিবৃতিতে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেন, “আমাদের পাল্টা উত্তর আজ শুরু হল। এটা আমাদের নির্ধারিত জায়গা ও সময় অনুযায়ী চলতে থাকবে।”
তবে জো বাইডেনের এই পাল্টা হামলায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে। ডেমোক্র্যাটরা এটি সমর্থন করলে কড়া সমালোচনা করছে রিপাবলিকানরা।
ইসরায়েল-গাজা যুদ্ধ শুরুর পর থেকে এই অঞ্চলে মার্কিন সেনারা ইরান সমর্থিত গোষ্ঠীর লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয় – কিন্তু গত সপ্তাহে প্রথমবার তাদের প্রাণহানির ঘটনা ঘটে।
রয়টার্স জানায় যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থার বিশ্বাস, যে ড্রোন দিয়ে হামলা চালানো হয় সেটা ইরানের তৈরি। অভিযোগ আছে ইরাক ও সিরিয়ায় ইরান সমর্থিত সশস্ত্র বাহিনীগুলোর অসংখ্য ঘাঁটি, অস্ত্র কোষাগার ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র রয়েছে, যেসব জায়গা থেকে গত ৭ই অক্টোবরের পর হতে এই অঞ্চলে থাকা মার্কিন ঘাঁটিগুলোর উপর ১৭০টিরও বেশি হামলার ঘটনা ঘটেছে। যুক্তরাষ্ট্র এই অঞ্চলগুলোকেই এখন লক্ষ্যবস্তু করছে।
শুক্রবার দুপুরের দিকে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ঘাঁটি থেকে দূরপাল্লার বোমারু বিমান উড়ে যেতে দেখা যায়।
এর আগে পর্যন্ত ইরান ও যুক্তরাষ্ট্র দুই দেশের পক্ষ থেকেই বলা হয়ে আসছিল তারা কেউই যুদ্ধে জড়াতে চায় না।
তবে রোববারের হামলার পর থেকে ধারণা করা হচ্ছিল যে কোন সময় যুক্তরাষ্ট্র পাল্টা হামলায় যেতে পারে। তবে সরাসরি ইরানের মাটিতে বা লোহিত সাগরে থাকা ইরানের কোন যুদ্ধজাহাজে হামলা করেনি যুক্তরাষ্ট্র।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন সিরিয়া ও ইরাক মিলিয়ে ৮৫টি লক্ষ্যবস্তুতে হামলার কথা নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, “মার্কিন বাহিনীর উপর হামলা আমি সহ্য করবো না। যুক্তরাষ্ট্র, আমাদের বাহিনী ও আমাদের স্বার্থ রক্ষায় যা যা করতে হয় সবই করবো।”
মোট সাতটি অঞ্চলে এই হামলাগুলো হয়েছে, যার চারটি সিরিয়ায় ও তিনটি ইরাকে।
যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় কাউন্সিলের মুখপাত্র জন কিরবি জানিয়েছেন, “এটা কেবল তাদের পাল্টা হামলার প্রথম পর্ব।”
তিনি আরও জানান গত ২৮শে জানুয়ারির পর থেকে ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে কোন ধরণের যোগাযোগ হয় নি।
গত কিছুদিন ধরেই এই পাল্টা হামলা হতে পারে বলে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে তারবার্তা পাঠানো হচ্ছিল। যাতে করে আসলে ইরান ও তার সহযোগীদের বড় ধরণের হতাহতের ঘটনা এড়ানোর সুযোগ দিয়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
ফলে রাজনৈতিক অঙ্গনে এর তীব্র সমালোচনা শুরু হয়েছে। কংগ্রেসম্যান বায়রন ড্যানিয়েলস অনলাইনে লিখেছেন, “এই হামলা সেদিনই হওয়া উচিত ছিল যেদিন আমাদের কর্মী মারা যায়।”
অনেক সামরিক বিশেষজ্ঞেরও মত যুক্তরাষ্ট্র পাল্টা হামলা করতে অনেক দেরি করে ফেলেছে। যদিও পেন্টাগন বলছে আবহাওয়ার জন্য তাদের দেরি করতে হয়েছে।
“তবে এর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র আসলে ইঙ্গিত দিচ্ছে যে তারা ইরানে কোন হামলা করবে না,” বিবিসিকে বলেন অ্যারাবিয়ান গালফ স্টেটস ইনস্টিটিউট অফ ওয়াশিংটনের ফেলো হুসেইন ইবিশ।
বিবিসির কূটনৈতিক সংবাদদাতা পল অ্যাডামস বলছেন, হোয়াইট হাউজ এই হামলায় একটা বার্তা দিতে চেয়েছে – ইরান ও তার সহযোগিদের সতর্কবার্তা দিয়ে বলছে যুক্তরাষ্ট্রের কোন সামরিক ব্যক্তি মারা গেলে ছেড়ে দেয়া হবে না।
যুক্তরাষ্ট্র তাদের বিবৃতিতে এই হামলায় সিরিয়া ও ইরাকের ৮৫টি লক্ষ্যবস্তুতে হামলার পাশাপাশি ১২৫টি যুদ্ধ সরঞ্জাম ও দূর পাল্লার বোমারু বিমান ব্যবহারের কথা জানিয়েছে।
ইরান আগেই জানিয়েছিল তাদের উপর বা তাদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট যে কোন কিছুর উপর হামলা হলে তার কড়া জবাব দেয়া হবে।
এখন সামনের দিনগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট মি. বাইডেন ইরানের মাটিতে হামলা না করে, ইরানের ব্যক্তি বা মিত্রদের উপর হামলা বাড়াতে চান কি না এবং তা সংঘাত আরও বাড়িয়ে দেবে কি-না সেটাই দেখার।
চলতি সপ্তাহে মধ্যপ্রাচ্য ভ্রমণের কথা আছে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের। ৪ থেকে ৮ই ফেব্রুয়ারি তিনি সৌদি আরব, মিশর, কাতার, ইসরায়েল ও পশ্চিত তীর সফর করবেন। গত ৭ই অক্টোবরের পর এই অঞ্চলে এটি তার পঞ্চম সফর।