যুক্তরাজ্যের সাধারণ জনগণ, পর্নোগ্রাফির অভিনেতা-অভিনেত্রী এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে পর্নোগ্রাফির প্রভাব নিয়ে কতগুলো প্রশ্নের উত্তর দিতে।
এই উত্তরগুলো নিয়ে যুক্তরাজ্য সরকারের কাছে সুপারিশ যাবে এই পর্নোগ্রাফি শিল্পের পর্যালোচনা করার জন্য।
এর মধ্যে থাকছে সম্পর্কের ক্ষেত্রে পর্নের প্রভাব, মানসিক স্বাস্থ্য এবং নারী ও মেয়েদের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে নানা প্রশ্ন।
তবে এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত একটা ট্রেড অ্যাসোসিয়েশন বলছে তারা মনে করছে, “এটা বড় কোন সেন্সরশিপের পূর্বপ্রস্তুতি।”
এই পর্যালোচনায় দেখা হবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও ভার্চুয়াল রিয়েলিটি কীভাবে পর্নোগ্রাফি তৈরি ও দেখার ধারণাকে বদলে দিচ্ছে।
কারণ শিশু নির্যাতন ও অসম্মতিমূলক পর্নোগ্রাফির ছবি তৈরিতে এআইয়ের ক্ষমতা নিয়ে বিশ্ব জুড়ে উদ্বেগ তৈরি হচ্ছে।
গত ডিসেম্বরে যুক্তরাজ্যের সরকার ঘোষণা দেয় একসময় ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটে কাজ করা কনজারভেটিভ পিয়ার (হাউজ অফ লর্ড সদস্য) ব্যারনেস বার্টিনের নেতৃত্বে পর্নোগ্রাফি নিয়ে একটা ‘স্বতন্ত্র’ পর্যালোচনা হবে।
এই গবেষণা জরিপে পর্নোগ্রাফি শিল্পে অপব্যবহার, পাচার এবং নির্যাতনের বিষয়গুলো দেখা হবে। সেই সঙ্গে দর্শকদের উপর এর প্রভাব এবং পর্নোগ্রাফির অবৈধ কনটেন্টগুলো বন্ধে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে সাহায্য করার উপায় খোঁজা হবে।
অপ্রাপ্তবয়স্করা যাতে অনলাইনে পর্নোগ্রাফিতে প্রবেশাধিকার না পায় সেজন্য ব্যবহারকারীর বয়সের প্রমাণ ও সেটা যাচাইকরণ টুল ব্যবহারের বিষয়টি এরইমধ্যে যুক্তরাজ্যের নতুন অনলাইন সেফটি অ্যাক্টে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
কিন্তু ব্যারনেস বার্টিন বলছেন এই পর্যালোচনাটি প্রযুক্তির বিকাশের সাথে সাথে “আইনের ভবিষ্যৎ প্রমাণ’’ হিসেবে থেকে যাবে।
“মাত্রাতিরিক্ত পর্নোগ্রাফি একটা ক্ষতিকর প্রভাব তৈরি করতে পারে – আমরা আমাদের শিশু ও অবশ্যই পুরো সমাজের কাছে দায়বদ্ধ যাতে এখানে একটা সীমানা নির্ধারণ করে দেয়া যায়,” বলেন তিনি।
২০২০ সালের এক রিপোর্টে জানা যায় সারা বিশ্বের সোশাল মিডিয়া থেকে এক লক্ষেরও বেশি নারীর ছবি সংগ্রহ করে সেগুলো দিয়ে ভুয়া নগ্ন ছবি তৈরি করা হচ্ছে এবং অনলাইনে তা শেয়ার করা হচ্ছে।
আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) ব্যবহার করে এসব ছবি থেকে নারী দেহের পোশাক সরিয়ে ফেলা হচ্ছে এবং মেসেজিং অ্যাপ টেলিগ্রামের মাধ্যমে এসব নগ্ন ছবি ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে বলে রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে।
ইন্টেলিজেন্স কোম্পানি সেনসিটির তৈরি এই রিপোর্টটি আরো জানাচ্ছে যে এসব বিবস্ত্র নারীর অনেকেই অল্পবয়সী।
“বৈধ, নৈতিক শিল্প”
অ্যাডাল্ট ইন্ডাস্ট্রির ট্রেড অ্যাসোসিয়েশন দ্য ফ্রি স্পিচ কোয়ালিশন বলছে, তাদের আশা সরকার “এই আলোচনায় তাদের ইন্ডাস্ট্রিকে জড়িত করার ব্যাপারে পুরোপুরি সৎ থাকবে।”
“আমাদের নিয়ে মাঝে মাঝেই উত্তেজিত শিরোনাম ও রাজনৈতিক বক্তৃতা দেয়া হলেও, আমরা একটি বৈধ ও নৈতিক শিল্প যেখানে আমাদের পরিবার আমাদের উপর নির্ভরশীল, এখানে সম্মতি ও নিরাপত্তাকে অগ্রাধিকার দেয়া হয় এবং অন্যদের মতো আমরাও চাই অপ্রাপ্তবয়স্কদের আমাদের কনটেন্ট থেকে দূরে রাখতে,” বলেন তাদের মুখপাত্র।
এই অ্যাসোসিয়েশন বিবিসিকে জানায় তারা এই পর্যালোচনার বিষয়ে ‘উদ্বিগ্ন’ কারণ তারা মনে করে এখানে “যৌন অভিব্যক্তিকে একটি হুমকি ও সমাজের জন্য ক্ষতিকর হিসেবে দেখানো হচ্ছে।”
তাদের ভাষায় এই পর্যালোচনাকে যদিও সেন্সরশিপের একটা অজুহাত বলে মনে হচ্ছে, কিন্তু তারা চায় এটি এগিয়ে যাবে এবং এক্ষেত্রে নানান মিথ দূর করতে ও কার্যকর সমাধান পেতে কাজ করবে।
যৌনতা বিষয়ক আইনজীবি, বিশেষজ্ঞ ও কর্মী মাইলস জ্যাকম্যান বলেন এটা খুবই হতাশাজনক যে, “এই পর্যালোচনার বিষয়টি বাচ্চাদের যৌন সম্পর্কের শিক্ষার প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি উপেক্ষা করে, খুবই অনুমান নির্ভর ও নেতিবাচকভাবে সাজানো হয়েছে”।
জরিপের প্রশ্নপর্বে সাথে কিছু পরিসংখ্যানও দেয়া হয়েছে যেখানে দেখা যাচ্ছে অপ্রাপ্তবয়স্কদের দ্বারা যৌন অপরাধের মাত্রা বেড়েছে, পুলিশ যেটার জন্য মোবাইল ফোন হাতে থাকা ও সহজে পর্নোগ্রাফি কনটেন্ট পাওয়াটাকে দুষছে।
পুলিশ ফাউন্ডেশনের থিঙ্কট্যাঙ্ক রিক মুইর এই পর্যালোচনার উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “ক্ষতিকর যৌন আচরণ সামাল দিতে যে কোন কিছু করার চেষ্টাটা ইতিবাচক, আর পুলিশের দৃষ্টিকোণ থেকে অপরাধ কমাতে এটা লম্বা সময়ের জন্য ভূমিকা রাখবে।”
যুগান্তকারী
কিন্তু লন্ডন স্কুল অফ ইকোনোমিকস অ্যান্ড পলিটিক্যাল সায়েন্সের (এলএসই) অধ্যাপক সোনিয়া লিভিংস্টোন প্রশ্ন তুলেছেন এক্ষেত্রে পর্যাপ্ত একাডেমিক গবেষণা হওয়া নিয়ে। তিনি বলেন গবেষকরা এরইমধ্যে যেসব তথ্য প্রমাণ সংগ্রহ করেছেন সেগুলো পর্যালোচনার ক্ষেত্রে বিবেচানয় রাখা উচিত।
“আমি আশা করবো তারা এগুলো পড়বেন,” বিবিসিকে তিনি বলেন।
তিনি যোগ করেন অনলাইন সেফটি অ্যাক্ট, “যুক্তরাজ্যে শিশুদের অনলাইনে নিরাপদ রাখতে যুগান্তকারী ভূমিকা রাখবে। এটা অবশ্য পরিষ্কার নয় যে এখানে প্রস্তাবিত কোন কোন বিষয়গুলো নতুন।”
একইসাথে অধ্যাপক লিভিংস্টোন মনে করেন, এই শিল্পের ব্যবসায়িক মডেলেও নজর দেয়া জরুরী কারণ পর্নোগ্রাফি প্রতিষ্ঠানগুলো অ্যালগরিদম ব্যবহার করে আরও চরমমাত্রার কনটেন্ট তৈরির দিকে যাচ্ছে, যা অনেকের জন্য ক্ষতির কারণ।
এ বছরের শেষদিকে এই পর্যালোচনার প্রতিবেদন প্রকাশ করা হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।