ইসরায়েল বলছে বৈরুতে হামাস নেতার হত্যাকাণ্ড ‘লেবাননের ওপর কোন হামলা নয়’। তবে দেশটির মুখপাত্র বলেছেন সালিহ আল-আরোরি ‘হামাস নেতাদের বিরুদ্ধে চালানো সার্জিক্যাল স্ট্রাইকে’ নিহত হয়েছে।
হামাস এই হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে এবং এর সহযোগী হেজবুল্লাহ বলেছে ‘এটি লেবাননের সার্বভৌমত্বের ওপর আক্রমণ’।
অন্যদিকে লেবাননের প্রধানমন্ত্রী ইসরায়েলের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলেছেন দেশটি ‘লেবাননকে সংঘাতে টেনে আনতে চাইছে’।
লেবাননের গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী হামাসের রাজনৈতিক শাখার উপ প্রধান আরোরি এবং আরও ছয় জন বৈরুতের দক্ষিণাঞ্চলে ড্রোন হামলায় নিহত হয়েছেন। বাকী ছয়জনের মধ্যে দুজন হামাসের সামরিক কমান্ডার।
তিনি ছিলেন হামাসের সামরিক শাখা কাসাম ব্রিগেডের একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি এবং হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়ার ঘনিষ্ঠ সহযোগী।
তিনি লেবাননে অবস্থান করে হামাস ও হেজবুল্লাহর মধ্যে যোগসূত্রের কাজ করতেন।
১৯৮৭ সালে হামাসে যোগ দিয়েছিলেন আরোরি। এরপর তিনি পশ্চিম তীরে সংগঠনটি সামরিক উপস্থিতি বাড়ানোর ক্ষেত্রে সহযোগিতা করেন।
তিনি ইসরায়েলের কারাগারে একসময় বন্দীও ছিলেন। পরে ২০১১ সালে ইসরায়েলি সৈন্যদের ছেড়ে দেয়ার বিনিময়ে এক হাজার ফিলিস্তিনি বন্দীকে মুক্তি দেয়ার চুক্তির ক্ষেত্রে মধ্যস্থতা করেন।
ইসরায়েলি মুখপাত্র মার্ক রেগেভ ওই হামলা ইসরায়েলই চালিয়েছে কি-না তা নিশ্চিত করেননি, যা সাধারণত ইসরায়েলি কর্মকর্তারা করে থাকে।
তবে তিনি এমএসএনবিসিকে বলেছেন “যারাই করে থাকুক, এটা পরিষ্কার যে এটা লেবানন রাষ্ট্রের ওপর কোন হামলা নয়”।
“এমনকি এটা সন্ত্রাসী সংগঠন হিজবুল্লাহর ওপরও কোন হামলা নয়”।
“যারাই করেছে তারা হামাস নেতৃত্বের ওপর সার্জিক্যাল হামলা করেছে। যারাই করেছে তারা হামাসকে ধরতে চেয়েছে। এটা পরিষ্কার”।
গত সাতই অক্টোবরে ইসরায়েলের ভূখণ্ডে হামাসের হামলার পর ইসরায়েলের হামলায় নিহতদের মধ্যে ৫৭ বছর বয়সী মি. আরোরি সবচেয়ে সিনিয়র হামাস নেতা।
ওইদিন হামাস বন্দুকধারীরা ইসরায়েলের সীমান্ত সংলগ্ন এলাকায় প্রবেশ করে হামলা চালায়। ওই ঘটনায় বারশো মানুষ নিহত হয়েছিলো, যাদের বেশিরভাগই বেসামরিক নাগরিক। এছাড়া আরও ২৪০জনকে জিম্মি করা হয়েছিলো।
জবাবে হামাসকে ধ্বংস করতে ইসরায়েল এরপর পাল্টা সামরিক অভিযান শুরু করে।
গাজায় হামাসের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসেবে ইসরায়েলি হামলায় প্রায় ২২ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু।
হেজবুল্লাহও ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে অনেক রকেট ছুঁড়েছে এবং ইসরায়েলের সাথে তাদের কয়েকটি সংঘর্ষও হয়েছে গাজা যুদ্ধের সময়।
লেবাননের রাষ্ট্রায়ত্ত বার্তা সংস্থা জানিয়েছে বৈরুতের দক্ষিণাঞ্চলে দাহিয়েহ এর শহরতলীতে হামাস কার্যালয় লক্ষ্য করে পরিচালিত ইসরায়েলি ড্রোন হামলায় মি. আরৌরি নিহত হয়েছেন।
একজন প্রত্যক্ষদর্শী বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেছেন তিনি দমকল কর্মী ও স্বাস্থ্য কর্মীদের একটি উঁচু ভবনে জমায়েত হতে দেখেছেন। ওই ভবনের তৃতীয় তলায় বিশাল গর্ত তৈরি হয়েছে।
সামাজিক মাধ্যমে আসা ভিডিও ফুটেজগুলোতে দেখা যাচ্ছে গাড়ীতে আগুন এবং সেখানকার ব্যস্ত আবাসিক এলাকার বেশ কিছু ভবনে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
দাহিয়েহ হেজবুল্লাহর শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত।
হামাসের রাজনৈতিক শাখার প্রধান মি. হানিয়া এ হামলাকে “কাপুরুষোচিত..সন্ত্রাসী হামলা, লেবাননের সার্বভৌমত্বের লঙ্ঘন এবং আগ্রাসনের বিস্তার’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।
হেজবুল্লাহ বলছেন তারা আরৌরির মৃত্যুকে ‘লেবানন, এর জনগণ, এর নিরাপত্তা, সার্বভৌমত্বের ওপর মারাত্মক আঘাত’ হিসেবে দেখছে এবং এর ‘গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ও সামরিক ইঙ্গিত আছে’।
সংগঠনটি বলছে, “এ হামলা যুদ্ধের ক্ষেত্রে একটি বিপজ্জনক অগ্রগতি…এবং আমরা হেজবুল্লাহ দৃঢ়তার সাথে বলছি যে কোন অপরাধ প্রত্যুত্তর এবং শাস্তি ছাড়া যাবে না”।
হামাস ও হেজবুল্লাহর বড় সমর্থক ইরান বলেছেন আরৌরি হত্যাকাণ্ড ‘নিশ্চিতভাবেই প্রতিরোধের মাত্রাকে আরও প্রজ্বলিত করবে’।
এদিকে ইসরায়েলের নিরাপত্তা বিষয়ক কেবিনেট মিটিং হওয়ার কথা থাকলেও মঙ্গলবার সেটি বাতিল করা হয়েছে। সেখানে গাজার যুদ্ধ-উত্তর পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা ছিলো।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু এর আগে হামাস নেতৃত্বকে নিশ্চিহ্ন করে দেয়ার কথা বলেছিলেন।
ইসরায়েলি মিডিয়ার দাবি অনুযায়ী আরোরি একই সাথে পশ্চিম তীরে হামাসের সামরিক শাখার ডি ফ্যাক্টো লিডার হিসেবে পরিচিত ছিলেন।
তিনিই ২০১৪ সালে দখলকৃত পশ্চিম তীর থেকে তিন ইসরায়েলি কিশোরকে অপহরণ ও হত্যার ঘটনায় জড়িত ছিলেন বলে মনে করা হয়।
দ্যা টাইমস অফ ইসরায়েল বলছে ‘তিনি ছিলেন হামাস নেতাদের মধ্যে অন্যতম যিনি ইরান ও হিজবুল্লাহর ঘনিষ্ঠ ছিলেন’।