বাংলাদেশের ঢাকায় শনিবারের মহাসমাবেশের জন্য বিরোধী দল বিএনপি এবং ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে তাদের নির্ধারিত জায়গাতেই সমাবেশ করার অনুমতি দিয়েছে পুলিশ।
যদিও অনুমতির বিপরীতে শান্তিপূর্ণ সমাবেশের জন্য বেশ কিছু শর্ত মেনে চলতে বলা হয়েছে বলে এক প্রেস ব্রিফিং এ জানিয়েছেন ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার ডঃ খ মহিদ উদ্দিন।
তবে জামায়াতে ইসলামীকে ঢাকা মহানগর পুলিশ মতিঝিলের শাপলা চত্বরে সমাবেশের অনুমতি না দিলেও দলটি সন্ধ্যায় এক বিবৃতিতে তাদের ঘোষিত ‘মহাসমাবেশ সফল করতে’ নেতাকর্মীদের প্রতি আহবান জানিয়েছে।
ওদিকে অনুমতি পাওয়ার পরপরই বিএনপি নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে এবং আওয়ামী লীগ বায়তুল মোকাররম দক্ষিণ গেইটে মঞ্চ নির্মাণের কাজ শুরু করেছে। এর আগে শুক্রবার বিকেলে উভয় দলের মঞ্চ নির্মাণের প্রস্তুতি বন্ধ করে দিয়েছিলো পুলিশ।
বিএনপির সাথে সরকার বিরোধী যুগপৎ আন্দোলনে আছে এমন কয়েকটি দলও ঢাকার বিভিন্ন স্থানে সমাবেশের কর্মসূচি পালন করবে।
এদিকে বৃহস্পতিবার ঢাকার বিভিন্ন প্রবেশমুখে যানবাহন থামিয়ে তল্লাশি ছাড়াও বিভিন্ন জায়গায় টহল দিতে দেখা গেছে র্যাবসহ আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে। এছাড়া নয়াপল্টন এলাকায় বসানো হয়েছে অতিরিক্ত সিসিটিভি ক্যামেরা।
প্রসঙ্গত, সরকারের পদত্যাগের দাবিতে শনিবারের এ মহাসমাবেশের ডাক দিয়েছে বিএনপি আর আওয়ামী লীগ করছে ‘শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশ’। তবে দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বিকেলে প্রেস ব্রিফিং এ বলেছেন কেউ সহিংসতা করলে তাদের প্রতিহত করা হবে।
পুলিশের অনুমতি ও দুই দলের প্রস্তুতি
আনুষ্ঠানিক অনুমতি পেতে বিলম্ব হওয়ায় সমাবেশের ভেন্যুতে মঞ্চ নির্মাণের কাজ শুরু করতে পারছিলো না বিএনপি ও আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগ কাজ শুরু করলেও বিকেলে পুলিশ গিয়ে তা বন্ধ করে দেয়।
আবার সন্ধ্যার পর থেকেই নয়াপল্টনে বিএনপি কর্মী সমর্থকরা জড়ো হতে শুরু করলে সেখানেও এক পর্যায়ে পুলিশ উপস্থিত হয় ও তাদের সরিয়ে দেয়। যদিও পরে রাতেই আবার তারা জড়ো হতে শুরু করে।
এর মধ্যে বিকেলে ঢাকা মহানগর পুলিশের সিনিয়র কর্মকর্তাদের এক বৈঠকে পরিস্থিতি পর্যালোচনার পর দুই প্রধান দলকে তাদের পছন্দমতো ভেন্যুতে সমাবেশের অনুমতি দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়।
পরে রাতে এক সংবাদ সম্মেলনে পুলিশের সিদ্ধান্ত সম্পর্কে জানিয়ে দেন অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার ডঃ খ মহিদ উদ্দিন।
“দুই দলই নিশ্চিত করেছে তাদের সমাবেশ হবে শান্তিপূর্ণ। আমরা নিরাপত্তা দিতে চাই যারা সমাবেশে আসবে তাদের এবং আমরা নিরাপত্তা দিতে চাই ঢাকাবাসীর। আশা করি রাজনৈতিক দলগুলো আমাদের সহযোগিতা করবে,” বলছিলেন তিনি।
পুলিশের অনুমতির পর উভয় দলই সমাবেশের মঞ্চ নির্মাণ সহ শেষ দিকের প্রস্তুতির কাজ শুরু করেছে এবং রাতেই তা শেষ করার কথা।
এর আগে উভয় দলকে পুলিশের পক্ষ থেকে বিকল্প ভেন্যুর নাম দিতে বললেও উভয় দলই তাদের নির্ধারিত জায়গার বাইরে সমাবেশ করা সম্ভব নয় বলে পুলিশকে জানিয়ে দেয়।
তখন পৃথক চিঠিতে বিএনপি জানায় যে তাদের সমাবেশে এক থেকে সোয়া লাখ মানুষ জড়ো হবে বলে তারা আশা করছে আর আওয়ামী লীগ জানায় তাদের সমাবেশে প্রায় দুই লাখ মানুষ যোগ দিবে।
ওদিকে শনিবারের কর্মসূচিকে সামনে রেখে শুক্রবার বিকেলে ঢাকা মহানগরীকে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন ইউনিট নিজ নিজ এলাকায় মিছিল করেছে।
জামায়াত অনুমতি পায়নি, তবুও সমাবেশের ডাক
জামায়াতে ইসলামি নিবন্ধিত দল নয়-এমন বক্তব্য দিয়ে পুলিশ আগেই জানিয়েছিলো যে তাদের সমাবেশের কোন অনুমতি দেয়া হবে না।
দলটি শনিবার ঢাকার শাপলা চত্বরে ‘মহাসমাবেশ’ করার জন্য পুলিশের কাছে অনুমতি চেয়েছিলো।
তবে শুক্রবার সন্ধ্যায় দলের পক্ষ থেকে পাঠানো এক বিবৃতিতে দলটি শনিবারে শাপলা চত্বরে তাদের মহাসমাবেশ সফল করার আহবান জানিয়েছে।
“আগামীকাল ২৮শে অক্টোবর শনিবার বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ঘোষিত মহাসমাবেশ সর্বাত্মকভাবে সফল করতে হবে এবং কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন দিতে সরকারকে বাধ্য করতে হবে,” বিবৃতিতে বলেন দলটির ভারপ্রাপ্ত আমির মুজিবুর রহমান।
ধরপাকড়ের অভিযোগ
বিএনপি অভিযোগ করেছে যে মহাসমাবেশকে সামনে রেখে বৃহস্পতিবার আরও দুশোর বেশি নেতাকর্মীকে বিভিন্ন জায়গা থেকে আটক করেছে পুলিশ। এরপর তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছে আদালত। এর আগে বৃহস্পতিবারও ১২৯ জনকে আদালতে উপস্থাপনের পর কারাগারে পাঠানো হয়েছিলো।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর শুক্রবার এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেছেন মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে গত চার দিনে মোট ১৩৫০জনকে আটক করেছে পুলিশ।
কিন্তু এসব সত্ত্বেও দলটির বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী শনিবারের সমাবেশে যোগ দিতে ঢাকায় এসে পৌঁছেছেন বলে দলটির নেতারা জানিয়েছেন।
বিএনপি ও আওয়ামী লীগের সংশ্লিষ্ট নেতারা জানিয়েছেন যে শনিবার সকাল দশটা থেকেই সমাবেশের কর্মসূচি শুরু করে দেবেন তারা। তবে মূল কর্মসূচি শুরু হবে বেলা দুইটায়।
বিএনপির পক্ষে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের এই সমাবেশ থেকেই তাদের সরকার পতন আন্দোলনের পরবর্তী ধাপের কর্মসূচি ঘোষণার কথা রয়েছে।
অন্যদিকে বিরোধী দলের আন্দোলনের জবাবের পাশাপাশি দলের পক্ষে নতুন করে কর্মসূচি ঘোষণা দিতে পারেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
মূলত দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিলকে সামনে রেখেই ধারাবাহিক আন্দোলনে যাচ্ছে বিএনপি এবং এর জবাবেই পাল্টা কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ।
বিএনপি বলেছে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের অধীনে নির্বাচন তারা মেনে নেবে না। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ বলছে আগামী নির্বাচন শেখ হাসিনার অধীনেই অনুষ্ঠিত হবে।
নির্বাচন কমিশন আগামী মাসের মাঝামাঝি সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করবে বলে আগেই জানিয়েছে এবং সে অনুযায়ী জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে ভোট গ্রহণের তারিখ নির্ধারণ করা হতে পারে।
বিএনপি ২০১৪ সালের নির্বাচন বর্জন করেছিলো আর ২০১৮ সালের নির্বাচনে অংশ নিলেও নির্বাচনটি ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ ওঠেছিলো।