নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে অনড় থাকলেও আগামী জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা না করা নিয়ে নানা বিশ্লেষণ চলছে বিএনপিতে। কখন কীভাবে কোন সরকারের অধীনে দল নির্বাচনে যাবে তা নিয়ে হচ্ছে ব্যাপক আলোচনা। তবে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবেন দলের শীর্ষ নেতা তারেক রহমান।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, দলের সর্বোচ্চ নীতি-নির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এতে কমিটির সব সদস্যই নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনেই নির্বাচনের পক্ষে মত দিয়েছেন। নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন জোরদার করার বিষয়েও দীর্ঘ আলোচনা হয়।
কথা বলে জনা গেছে, বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশ না নিয়ে চলমান এক দফা আন্দোলনকে এগিয়ে নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। মঙ্গলবার রাতে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে গণতন্ত্র মঞ্চের শীর্ষ নেতারা দেখতে গেলে তাদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এই পরামর্শ দেন। নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছেন, চলমান এক দফার আন্দোলনকে এগিয়ে নেওয়ার পাশাপাশি বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বেগম খালেদা জিয়া। মঙ্গলবার রাতে এভারকেয়ার হাসপাতালে তাঁকে দেখতে গিয়ে দেশের পরিস্থিতি নিয়ে আলাপকালে এই পরামর্শ দেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী। মান্না বলেন, বেগম খালেদা জিয়া অনেক অসুস্থ। রাজনৈতিক বিষয়ে কথা বলার মতো অবস্থায় নেই। আমরা তাঁর সঙ্গে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে অত্যন্ত সংক্ষেপে কিছু কথা বলেছি। তাঁকে জানিয়েছি, আমরা এক দফার আন্দোলন করছি এবং সামনের মাসে জোরদার আন্দোলন করব। জবাবে তিনি বলেছেন, আপনারা যারা বাইরে আছেন, তারা সবাই মিলে আন্দোলন করেন। আমি দেখতে চাই- আপনারা আন্দোলন করছেন, আন্দোলন করতে হবে। কোনো অবস্থায় এ সরকারের অধীনে নির্বাচনী ফাঁদে পা দেওয়া যাবে না। দেশকে বাঁচাতে হলে এ আন্দোলনটা করতে হবে, দেশকে রক্ষা করতে এ আন্দোলনে বিজয়ী হতে হবে। অর্থাৎ আমাদের এ আন্দোলনে তাঁর সমর্থন আছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও দলের আন্তর্জাতিক বিষয়ক কমিটির চেয়ারম্যান আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে নির্বাচনের বিষয়ে বলেন, এই সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাওয়া তো দূরের কথা, বাংলাদেশে আর কোনো নির্বাচন তাদের অধীনে হতেও দেওয়া হবে না। মানুষ জেগে উঠেছে। জনআন্দোলনের মাধ্যমে শিগগিরই এই সরকার বিদায় নেবে।
তারুণ্যের রোডমার্চ বিএনপির তিন সংগঠনের : সরকার পতনে এক দফার দাবিতে বিএনপির তিন অঙ্গ-সহযোগী সংগঠন দুই দিনের তারুণ্যের রোডমার্চ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। আগামী ১৬ সেপ্টেম্বর রংপুর থেকে সৈয়দপুর দশমাইল হয়ে দিনাজপুর। ১৭ সেপ্টেম্বর বগুড়া থেকে সান্তাহার-নওগাঁ হয়ে রাজশাহী পর্যন্ত রোডমার্চ করবে বিএনপির সহযোগী সংগঠন জাতীয়তাবাদী যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদল। যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন। গতকাল বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় নয়াপল্টনে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ ঘোষণা দেন। সুলতান সালাউদ্দিন টুকু বলেন, এ তারুণ্যের রোডমার্চে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও দলের সিনিয়র নেতারা উপস্থিত থাকবেন। তিনি বলেন, বিগত ১৫ বছর এ দেশের প্রায় ৪ কোটি তরুণ ভোটার ভোট দিতে পারেননি। ২০১৪ ও ২০১৮ সালে এ সরকার ভোট ডাকাতির মাধ্যমে তরুণদের ভোটাধিকার হরণ করেছে। ৫০ লাখ বিএনপি নেতা-কর্মীর নামে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করছে এ সরকার।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এস এম জিলানী, সাধারণ সম্পাদক রাজীব আহসান ও ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রাশেদ ইকবাল খান, যুবদলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম মিল্টন ও ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল প্রমুখ।
source: bd protidin