সবাইকে চমকে দিয়ে বিশ্বকাপে টানা তিন ম্যাচে রান তাড়ায় জয় পেল আফগানিস্তান। এবার নেদারল্যান্ডসকে ৭ উইকেটের বড় ব্যবধানে হারিয়েছে তারা।
এই জয়ে সেমিফাইনালে উঠার পথেও অনেকটা এগিয়ে গেল আফগানরা। কারণ পয়েন্টের হিসাবে তারা ধরে ফেলেছে দুই ফেভারিট অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডকে। সেই সঙ্গে আগামী চ্যাম্পিয়ন্স লিগেও জায়গা পাকা করে ফেললো আগানিস্তান।
লখনৌয়ে আজ আগে ব্যাট করে ১৭৯ রান তুলতেই সব উইকেট হারিয়ে ফেলে নেদারল্যান্ডস। জবাবে ৩ উইকেট হারিয়েই লক্ষ্যে পৌঁছে যায় আফগানরা। জয় পেতে তাদের অপেক্ষা করতে হয় মাত্র ৩১.৩ ওভার পর্যন্ত। বিশ্বকাপে এ নিয়ে ২২ ম্যাচে পঞ্চম ম্যাচ জিতলো আফগানরা। যার মধ্যে এ বিশ্বকাপেই এলো ৪টি, ৩টিই আবার লক্ষ্য তাড়ায়! শুধু কি তাই, এ বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত ভারতের (৫) পরেই রান তাড়ায় সবচেয়ে বেশি জয় পেল আফগানিস্তান (৩)।
ব্যাটিং-বান্ধব পিচে ১৮০ রানের লক্ষ্য তাড়া করা সহজ হওয়ারই কথা। আফগানরা পেরিয়েছেও সহজেই। যদিও দুই ওপেনার রহমানুল্লাহ গুরবাজ (১০) ও ইব্রাহীম জাদরান (২০) ভালো শুরু এনে দিতে পারেননি। কিন্তু এরপরের তিন ব্যাটারই দারুণ ব্যাটিং করেছেন। এর মধ্যে ফিফটি তুলে নিয়েছেন রহমত শাহ (৫২) ও অধিনায়ক হাশমতুল্লাহ শহীদি (৫৬*)। আর ২৮ বলে ৩১ রানের ইনিংস খেলে অপরাজিত থাকেন আজমতুল্লাহ ওমরজাই।
এর আগে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে প্রথম ওভারেই ওপেনার ওয়েসলি বারেসির উইকেট হারায় নেদারল্যান্ডস। ব্যক্তিগত ১ রানে আফগান স্পিনার মুজিব উর রহমানের বলে লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়েন বারেসি। এরপর ম্যাক্স ও’ডাউড এবং কলিন অ্যাকারম্যান সেই ধাক্কা কাটিয়ে উঠে ৫০ রানের জুটি গড়েন। ভালো কিছুর ইঙ্গিত দিলেও এরপর নাটকীয়ভাবে ঘুরে দাঁড়ায় আফগানিস্তান।
দলীয় ৭২ রানে ফেরেন ও’ডাউড (৪২) এবং কিছুক্ষণ পর অ্যাকারম্যানও (২৯) একই পথে ধরেন। দুজনেই রান আউটের শিকার। সবমিলিয়ে পরের ৪০ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে ফেলে নেদারল্যান্ডস। অবাক করা ব্যাপার হলো, এর মধ্যে ৩টিই রানআউট। এরপর দ্রুতই গুটিয়ে যেতে পারতো ডাচদের ইনিংস। কিন্তু সাইব্রান্ড এঙ্গেলব্রেখট পরপর দুই বলে জীবন পান। পরে তার ব্যাট থেকে আসে দলীয় সর্বোচ্চ ৫৮ রানের ইনিংস।
এঙ্গেলব্রেখটকে দুইবার জীবন উপহার দিলেও এর জন্য খুব বেশি মূল্য চোকাতে হয়নি আফগানদের। শেষ পর্যন্ত তিনিও ফিরেছেন রানআউট হয়েই। বিশ্বকাপের ইতিহাসে এক ম্যাচে চারটি রানআউটের এটি দ্বাদশ ঘটনা। সর্বশেষ দুটি ঘটনার শিকার নেদারল্যান্ডস। একটি ২০১১ সালে চট্টগ্রামে বাংলাদেশের বিপক্ষে এবং কলকাতায় আয়ারল্যন্ডের বিপক্ষে। সবচেয়ে বেশি চারবার এধরনের ঘটনা ঘটেছে অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে।
লোয়ার মিডল অর্ডার ও লোয়ার অর্ডার কোনো ভূমিকা রাখতে না পারায় শেষ পর্যন্ত ২০০ রান করাও সম্ভব হয়নি নেদারল্যান্ডসের পক্ষে। বিপরীতে আফগান স্পিনাররা দারুণ বোলিং করেছেন। বিশেষ করে মোহাম্মদ নবি ও নূর আহমেদ। দুজন মিলে তুলে নিয়েছেন ৫ উইকেট। একটি উইকেট গেছে আরেক স্পিনার মুজিব উর রহমানের ঝুলিতে।
এই জয়ে পয়েন্ট তালিকার পাঁচে উঠে এলো আফগানিস্তান। ৭ ম্যাচে তাদের জয় ৪টি। অন্যদিকে ২ জয় নিয়ে নেদারল্যান্ডস আছে অষ্টম স্থানে। তাদের নিচে অবস্থান বাংলাদেশের। ৭ ম্যাচে মাত্র ২ জয় নিয়ে এরইমধ্যে সেমিফাইনালে উঠার দৌড় থেকে ছিটকে পড়েছে সাকিববাহিনী। ৭ ম্যাচে ১৪ পয়েন্ট নিয়ে সবার আগে সেমি নিশ্চিত করেছে ভারত। এরপরের তিন স্থানে আছে যথাক্রমে- দক্ষিণ আফ্রিকা (১২), অস্ট্রেলিয়া (8) ও নিউজিল্যান্ড (৮)। নেট রানরেটে আফগানদের চেয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা ও নিউজিল্যান্ড কিছুটা এগিয়ে।