বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে ভারত ও নিউজিল্যান্ড মুখোমুখি হচ্ছে মুম্বাইয়ের ওয়াংখেডে স্টেডিয়ামে, বুধবার বাংলাদেশ সময় দুপুর আড়াইটায়।
ভারত নয় ম্যাচের সবকটিতে জয় নিয়ে সেমিফাইনালে এসেছে, অন্যদিকে নিউজিল্যান্ডের যাত্রা পথ ছিল অম্লমধুর।
কখনো টানা জয়, কখনো টানা ম্যাচ হারের ভেতর দিয়ে যাওয়া নিউজিল্যান্ড শেষ পর্যন্ত শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বড় ব্যবধানের জয় দিয়ে সেমিফাইনালে জায়গা পাকা করেছে।
তবে নিউজিল্যান্ড যখন প্রতিপক্ষ তখন ভারতের দলটার মনের কোণে একটা ভয়ের জায়গা থাকাই স্বাভাবিক।
ক্রিকেট ইতিহাসে ভারত নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে চারটি নকআউট ম্যাচে হেরেছে বিভিন্ন ফরম্যাটে।
আবার নিউজিল্যান্ড গত তিন বিশ্বকাপেই কোনও না কোনও স্বাগতিক দলের বিপক্ষে হেরেছে নকআউটে কিংবা ফাইনালে।
২০১৫ ও ২০১৯ টানা দুটি ওয়ানডে বিশ্বকাপের ফাইনালে স্বাগতিক দলের কাছে হেরে শিরোপা থেকে দূরে থাকতে হয়েছে নিউজিল্যান্ডকে।
এবারে ভারত ও নিউজিল্যান্ড তাই উভয়েই সতর্ক।
প্রথম ১৫ ওভারে ম্যাচ হারা যাবে না
মুম্বাইয়ের ওয়াংখেডে স্টেডিয়াম ব্যাটারদের জন্য স্বর্গ বলেই বিবেচিত।
কিন্তু এখানে মাঠে নেমেই আগ্রাসী হওয়া বিপজ্জনক হতে পারে দলগুলোর জন্য।
কারণ এই মাঠের বেশ কিছু ব্যাপার রয়েছে, যার প্রভাব পড়তে পারে দলের ফলাফলের ওপর।
যেমন ওয়াংখেডে স্টেডিয়ামে ২০২৩ বিশ্বকাপে শুরুতে ব্যাট করে গড় রান এসেছে ৬ উইকেটে ৩৫৭, কিন্তু পরে ব্যাট করে এসেছ ৯ উইকেটে ১৮৮।
এর মধ্যে আবার গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের সেই ডাবল সেঞ্চুরিও আছে, যা এখন ক্রিকেট ইতিহাসের একটা স্মরণীয় অধ্যায় হিসেবে থাকবে।
এর কারণ নতুন বল ফ্লাডলাইটের আলোর নিচে বেশি সুইং পাচ্ছে এবং দীর্ঘ সময় এর প্রভাব থাকছে।
যে কারণে আফগানিস্তানের বিপক্ষে অস্ট্রেলিয়া ৯১ রান তুলতে ৭ উইকেট হারিয়ে ফেলেছিল।
প্রথম ইনিংসে গড় পাওয়ারপ্লে স্কোর যেখানে ৫২/১, দ্বিতীয় ইনিংসে সেটা ৪২/৪।
পার্থক্যটা সুষ্পষ্ট।
ব্যাটাররা প্রথম ইনিংসে যে সুবিধা পান সেটা দ্বিতীয় ইনিংসে পাওয়াটা কঠিনই।
যেহেতু ম্যাক্সওয়েল প্রতিদিন এমন ইনিংস খেলবেন না এবং সব দলে ম্যাক্সওয়েল নেই।
দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করবেন যারা তাদের খেলতে হবে টেস্ট ম্যাচের মতো।
বিশেষত প্রথম ১৫টা ওভার, যখন বল সবচেয়ে বেশি সুইং পাবে।
এই সময়ের মধ্যে ২ উইকেটের বেশি না হারানোর চেষ্টা করবে রান তাড়া করতে নামা দল।
এক্ষেত্রে ভারত যদি টসে হেরে গিয়ে পরের ব্যাট করতে বাধ্য হয়, ভারতের অধিনায়ক রোহিত শর্মা এবারের বিশ্বকাপে যে কায়দায় ব্যাট চালাচ্ছেন সেটা হয়তো তিনি পারবেন না বা করবেন না।
স্যান্টনার কতোটা ভয়ংকর?
রোহিত শর্মা দ্রুত আউট হয়ে গেলে ভারতের জন্য কঠিন একটা পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।
কারণ ভারতের দলে ডান হাতি ব্যাটারদের ছড়াছড়ি এবং নিউজিল্যান্ডের অন্যতম সেরা অস্ত্র এই বিশ্বকাপে বাহাতি মিচেল স্যান্টনার।
মিচেল স্যান্টনারের বল আপাত দৃষ্টিতে নিরীহ মনে হতেই পারে, খুব রহস্যের কিছু নেই, খুব বড় টার্নও তিনি করাননা।
স্যান্টনারের মূল শক্তি লাইন লেন্থ ঠিক রাখা এবং ব্যাটারের মনে ঢুকে পড়া।
২০১৯ বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে স্যান্টনার ভারতের বিপক্ষে ৩৪ রান দিয়ে ২টি উইকেট নিয়েছিলেন, ১০ ওভারে দিয়েছিলেন ২টি মেইডেন ওভার।
এবারও গ্রুপ পর্বের দেখায় ১০ ওভারে ৩৭ রান দিয়ে ১ উইকেট নিয়েছেন এই বাহাতি স্পিনার।
এবারের বিশ্বকাপে ১৬ উইকেট নিয়েছেন স্যান্টনার যার মধ্যে ১৫জনই ডান হাতে ব্যাট করেন।
ভারতের এই ব্যাটিং লাইন আপে রাভিন্দ্রা জাদেজার আগে কোনও বাহাতি ব্যাটার নেই।
ভারতের ব্যাটাররা চেষ্টা করবেন স্যান্টনারের হাতে উইকেট না দিতে, তাকে দেখে শুনে খেলতে।
জাদেজার দিকে তাকিয়ে থাকবে ভারত
স্যান্টনার ও রাভিন্দ্রা জাদেজা ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের দল চেন্নাই সুপার কিংসের হয়ে খেলেছেন একসাথে।
শেষবার যখন দুজন একসাথে চেন্নাইয়ের জার্সি গায়ে মাঠে নেমেছিলেন রোহিত শর্মার মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সকে ধসিয়ে দিয়েছিলেন প্রায়, ৮ উইকেটের ৫টিই নিয়েছিলেন জাদেজা-স্যান্টনার জুটি।
স্যান্টনার ইএসপিএনক্রিকইনফোকে দেয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, “জাদেজা খুব সহজ কাজ করে ব্যাটারদের বোকা বানায় এটা অনেক সময়ই টেনশনের বিষয়। একই জায়গায় বলের পর বল করে যেতে পারেন, কিছুটা স্কিড করে বল, কিচুটা স্পিন, তাতেই কাজ হয়ে যায়”।
বিশ্বকাপে যারা ওভারপ্রতি চারের নিচে রান দিচ্ছেন তারা সবাই ভারতের।
জাদেজা তাদেরই একজন, তিনি এবারের বিশ্বকাপে ৩.৯৭ ইকোনমি রেটে বল করে ১৬ উইকেট নিয়েছেন।
বড় ম্যাচে বড় উইকেট নেয়ার ক্ষেত্রে জাদেজা পটু।
ইনিংসের বিভিন্ন পর্যায়ে ব্যাটারদের ওপর আধিপত্য ধরে রাখার ক্ষেত্রে ভারতের বোলাররাই এবারের বিশ্বকাপে সেরা।
ম্যাট হেনরিকে মিস করবে নিউজিল্যান্ড
২০১৯ বিশ্বকাপের সেমিফাইনালের স্মৃতি ভারতের ক্রিকেটারদের মনে এখনও দগদগে ক্ষত হিসেবেই রয়েছে।
সেদিন ২৪০ রান তাড়া করতে নেমে ভারত ৩ রানে ৩ উইকেট হারিয়েছিল।
খেলাটি দুই দিন ধরে হয়েছিল বৃষ্টির কারণে।
এই ম্যাচে ভারতের ব্যাটিংয়ের টপ অর্ডারে ভাঙ্গন ধরিয়েছিলেন ম্যাট হেনরি।
এবারের বিশ্বকাপেও ম্যাট হেনরি দারুণ শুরু করেছিলেন কিন্তু তিনি চোটের কারণে দল থেকে ছিটকে গেছেন।
তার জায়গায় খেলবেন টিম সাউদি।
চলতি বিশ্বকাপে টিম সাউদি বা ট্রেন্ট বোল্ট কেউই তাদের সেরাটা দিতে পারেননি।
টানা পঞ্চম ওয়ানডে বিশ্বকাপে সেমিফাইনাল খেলতে নামা নিউজিল্যান্ডের ফাস্ট বোলার লকি ফার্গুসন বলেন, ম্যাট হেনরির না থাকাটা হতাশাজনক। তবে সাউদির অভিজ্ঞতা আমাদের কাজে দেবে, তিনি টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি দলের অধিনায়ক ভারতে অনেক ম্যাচ খেলেছে”।
জসপ্রিত বুমরাহ- ভারতের এক্স-ফ্যাক্টর
জসপ্রিত বুমরাহকে খেলা এখন যে কোনও ব্যাটারের জন্য কঠিন, বিশ্বের যে কোনও ব্যাটারই তার বলের মুখোমুখি হওয়ার আগে খানিকটা বাড়তি সতর্ক থাকবেন।
২০২৩ বিশ্বকাপে ৯ ম্যাচ বল করেছেন তিনি ৩.৬৫ ইকোনমি রেটে।
এই যুগের ক্রিকেটের হিসেবে অবিশ্বাস্য একটা সংখ্যা এটা।
পাওয়ারপ্লে হিসাব করলে সংখ্যাটা আরও কমে আসে,২.৯৫ রান দিয়েছেন তিনি প্রথম দশ ওভারে।
ওয়ানডে ক্রিকেট দূরের কথা, এই সংখ্যাগুলো এখন টেস্ট ক্রিকেটেও অনেক সময় দেখা যায়না।
একই সাথে তিনি ৯ ম্যাচেই উইকেট পেয়েছেন।
প্রায় ৭৩ ওভার বল করে জসপ্রিত বুমরাহ ২৬৬ রান দিয়ে ১৭টি উইকেট নিয়েছেন।
বুমরাহ দীর্ঘ সময় চোটের সাথে লড়াই করে ফিরেছেন ২০২৩ সালের এশিয়া কাপের আগে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজে।
এরই মধ্যে তিনি প্রমাণ করেছেন কেন তিনি ভারতের এই দলটার জন্য এতো গুরুত্বপূর্ণ একজন ক্রিকেটার।