দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে আসন ভাগাভাগি নিয়ে জোট সঙ্গীদের আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে। আপাতত মহাজোটের নেতাদের মাঠে থাকতে বলেছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ।
সোমবার সন্ধ্যায় গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সাথে ১৪ দলের নেতাদের একটি বৈঠকে এই বার্তা দেয়া হয়েছে।
আওয়ামী লীগের ১৪ দলীয় জোটের অন্যতম ওয়ার্কার্স পার্টির নেতা রাশেদ খান মেনন বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, আসন কিভাবে আসন সমন্বয় করা হবে তা নিয়ে আমির হোসেন আমু এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। এছাড়া যেসব আসনে এরইমধ্যে প্রার্থী দেয়া হয়েছে তাদের সবাইকে মাঠে থাকার জন্যও বলা হয়েছে।
“আমাদের বলেছে যে সবাইকে মাঠে রাখেন। আর যেখানে অ্যাডজাস্টমেন্ট দরকার হবে, আমির হোসেন আমু এবং ওবায়দুল কাদেরের সাথে আলোচনা করে ঠিক করা হবে।”
তবে কবে নাগাদ এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানানো হবে সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোন তারিখ উল্লেখ না করা হলেও ‘শিগগিরই’ এই সিদ্ধান্ত আসবে বলে জোট নেতাদের জানিয়েছে আওয়ামী লীগ।
ওয়ার্কার্স পার্টি এই নির্বাচনে অংশ নিতে ৩৩টি আসনে প্রার্থী দিয়েছে।
এদিকে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এক বার্তায় জানানো হয়েছে, মঙ্গলবার বেলা ১২টা একটি সংবাদ সম্মেলনে এই বিষয়ে কথা বলবেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া সাংবাদিকদের কাছে পাঠানো এক ক্ষুদে বার্তায় এই তথ্য জানিয়েছেন।
আওয়ামী লীগের একজন নেতা আভাস দিয়েছেন, ওই সংবাদ সম্মেলনে আসন ভাগাভাগির বিষয়ে আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্তের ঘোষণা আসতে পারে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এরইমধ্যে আওয়ামী লীগ এককভাবে ২৯৮টি আসনে প্রার্থী দিয়েছে। কুষ্টিয়া-২ ও নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে প্রার্থী দেয়নি আওয়ামী লীগ। বাকি আসনগুলোতে নৌকা প্রতীকে দলীয় প্রার্থী ছাড়াও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতারা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন।
এর আগের তিনটি সংসদ নির্বাচনে জোট সঙ্গীদের সঙ্গে যৌথভাবে প্রার্থী দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। তখন জোট সঙ্গীদের জন্য বেশ কিছু আসন ছেড়ে দেয়া হয়েছিল। শরীক দলগুলো এবারও তেমনটাই আশা করছে।
এর আগে স্থানীয় বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে বলা হয়, এই নির্বাচন ১৪ দলীয় জোটের শরীক দলগুলোর পক্ষ থেকে ৬০টি আসন ছেড়ে দেয়ার একটি দাবি ছিল।
এই দাবির বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত হয়েছে কিনা প্রশ্ন করা হলে ওয়ার্কাস পার্টি নেতা রাশেদ খান মেনন বলেন, “ওই ধরনের কোন আলোচনা হয়নি।”
গণভবনের ওই বৈঠকে আওয়ামী লীগের জোট সঙ্গীদের মধ্যে জাতীয় পার্টি (জেপি), ওয়ার্কাস পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদ, সাম্যবাদী দল, তরিকত ফেডারেশনের নেতারা অংশ নিয়েছিলেন।
এর আগে গত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১৪ দলীয় জোটের জন্য ১৬টি আসনে ছাড় দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। এর বাইরে জাতীয় পার্টির জন্যও বেশ কিছু আসন ছেড়ে দেয়া হয়েছিল।
জোটবদ্ধ দলগুলোর মধ্যে ওয়ার্কার্স পার্টি, জাসদ, বিকল্প ধারা, তরিকত ফেডারেশন আওয়ামী লীগের জোটসঙ্গী হিসেবে নৌকা প্রতীকেই নির্বাচন করে আসছে। তবে এবার আওয়ামী লীগ বেশিরভাগ আসনে দলীয় প্রার্থী দেয়ায় এসব দল কীভাবে অংশ নেবে তা নিয়ে সংশয় ছিল।
আগামী সাতই জানুয়ারি বাংলাদেশে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
এরইমধ্যে মনোনয়নপত্র জমা দেয়া হয়েছে। মনোনয়নপত্র যাচাই বাছাই শেষে সারাদেশে ২৯৮৫টি মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। আর ঋণ খেলাপী, দ্বৈত নাগরিকত্ব, পর্যাপ্ত ভোটার সমর্থন না থাকাসহ নানা কারণে ৭৩১টি মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে।
আগামী ১৭ই ডিসেম্বর প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন। এখনো পর্যন্ত নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্তে অটল রয়েছে বিএনপি।
২০০৬ সালে তৎকালীন বিএনপি সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট গড়ে উঠে।
এর পর থেকে গত তিনটি সংসদ নির্বাচনে এই দলের নেতৃত্বেই নির্বাচনে অংশ নিয়ে আসছে ১৪ দল ও জাতীয় পার্টি। প্রতিটি নির্বাচনেই আসন সমঝোতা করে আসছে আওয়ামী লীগ।
তবে এরইমধ্যে হাসানুল হক ইনুসহ জাসদের ৯১ জন, রাশেদ খান মেননসহ ওয়ার্কার্স পার্টির ৩৩ জন, বিকল্প ধারার ১৪ জন, তরিকত ফেডারেশনের ৪৭ জন বিভিন্ন আসনে প্রার্থী হয়েছেন।
গত তিন নির্বাচনের তথ্য
২০০৮ সালের নির্বাচনে নিজেদের জন্য ২৬৪টি আসন রেখে বাকী আসনগুলোতে বাকি আসনগুলো জাতীয় পার্টি, জাসদ ও ওয়ার্কার্স পার্টির প্রার্থীদের সমর্থন দিয়েছিলো আওয়ামী লীগ।
কিছু আসন আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি উভয়ের জন্য উন্মুক্ত রাখা হয়েছিলো। সে কারণে জাতীয় পার্টি মোট ৪৯টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ২৭টিতে বিজয়ী হতে পেরেছিলো।
অন্যদিকে জাসদের তিনজন ও ওয়ার্কার্স পার্টির দুজন নৌকা প্রতীক নিয়েই বিজয়ী হয়েছিলো।
মূলত ২০০৬ সাল থেকে বিএনপি সরকার বিরোধী আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে যে মহাজোট গড়ে উঠেছিলো তার আলোকেই আসন সমঝোতা করে তখন নির্বাচনে গিয়েছিলো আওয়ামী লীগ।
নির্বাচনে একাই ২৩০ আসনে জিতে সরকার গঠন করেছিলো আওয়ামী লীগ। সেবার জাতীয় পার্টির জিএম কাদেরকে মন্ত্রীও করা হয়েছিলো আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারে।
২০১৪ সালের দশম সংসদ নির্বাচন বিএনপিসহ বিরোধীরা বর্জন করেছিলো। ওই নির্বাচনে ১৫৩ জন প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হয়েছিলো।
এ নির্বাচনেও সমঝোতার ভিত্তিতে নির্বাচন করে জাতীয় পার্টি বিরোধী দলে গেলেও পরে বিরোধী দল থেকেও কয়েকজন সরকারের মন্ত্রী হন। মন্ত্রী করা হয় রাশেদ খান মেনন ও হাসানুল হক ইনুকেও।
ওই সংসদে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করে ওয়ার্কার্স পার্টির ছয় জন, জাসদের পাঁচ, জেপির দুই জন এবং তরিকত ফেডারেশন ও বিএনএফ এর একজন করে সংসদ সদস্য হয়েছিলেন।
২০১৮ সালে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ তার মহাজোট শরিক দলগুলোকে দিয়েছে ৪৫টি আসন, যার মধ্যে জাতীয় পার্টিকে দেওয়া হয়েছিল ২৯টি আসন।
এর বাইরে আওয়ামী লীগের চিরাচরিত ‘নৌকা’ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করবেন ১৪ জন। তার মধ্যে আছেন ওয়ার্কার্স পার্টির ৫ জন, জাসদ (ইনু)-র ৩ জন, তরিকত ফেডারেশন ২ জন, যুক্তফ্রন্ট-বিকল্পধারার ৩ জন, এবং জাসদ (বাদল)-এর ১ জন।
ওই নির্বাচনে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট অংশ নিলেও এ নির্বাচনেও ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ ওঠে।
নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন জোট ২৬৬ আসনে, জাতীয় পার্টি ২২ আসনে এবং বিএনপি জোট ৭টি আসনে জয়ী হয়। আর চারটি আসনে স্বতন্ত্র পেয়েছিলো।
ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের জোট হিসেবে ১৪ দলীয় জোটের দলগুলোর মধ্যে নৌকা প্রতীক নিয়ে জাসদ ২টি, ওয়ার্কার্স পার্টি ৩টি, বিকল্প ধারা ২টি, তরীকত ফেডারেশন ১টি আসনে জিতেছিলো৷
এর বাইরে জেপি বাইসাইকেল প্রতীক নিয়ে একটি আসনে জিতেছিলো।