পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের ১০ বছরের জেল দিয়েছে দেশটির আদালত। দেশের গোপন তথ্য পাচার করার অভিযোগ এনে তার বিরুদ্ধে এই রায় দেওয়া হয়।
মি. খানকে ২০২২ সালে তার বিরোধীপক্ষ ক্ষমতাচ্যুত করেছিলেন। দুর্নীতির দায়ে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর ইতোমধ্যে তিন বছরের কারাদণ্ডও ভোগ করছেন তিনি।
তবে, সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী তার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগকেই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে দাবি করেছেন।
আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচন। এই নির্বাচনের মাত্র সপ্তাহ খানেক আগে ‘অফিসিয়াল গোপনীয়তা রক্ষা আইনের অধীনে মি. খানের বিরুদ্ধে এই রায় দেওয়া হলো।
মঙ্গলবার এই সংক্রান্ত মামলার শুনানি ছিল পাকিস্তানের বিশেষ আদালতে। সেখানেই ইমরান এবং তার দল পাকিস্তান তেহরিক ই ইনসাফের (পিটিআই) সহসভাপতি শাহ মেহমুদ কুরেশিকেও ১০ বছরের জেল দেয়া হয়।
ইমরান খান প্রধানমন্ত্রী থাকা অবস্থায় ওয়াশিংটনে নিযুক্ত পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূতের ইসলামাবাদে পাঠানো একটি গোপন কূটনীতিক বার্তার কারণেই কথিত এই সাইফার মামলাটি দায়ের করা হয়েছিলো।
পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান তাকে ক্ষমতা থেকে উৎখাতের প্রমাণ হিসেবে একটি তারবার্তা ফাঁস করতে চেয়েছিলেন বলে মামলায় অভিযোগ আনা হয়। কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা বলছে, ওই তারবার্তার মাধ্যমে ইমরান প্রমাণ করতে চেয়েছিলেন, পাকিস্তানের ক্ষমতাধর সেনাবাহিনী যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ষড়যন্ত্র করে তাকে ক্ষমতা থেকে সরিয়েছে।
গত ১৩ ডিসেম্বর ইমরান ও কুরেশিকে দ্বিতীয়বারের মতো অভিযুক্ত করা হয়। এরপর অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টের অধীনে গত মাসে আদিয়ালা কারাগারে নতুন করে মামলার কার্যক্রম শুরু করেন বিশেষ আদালত।
আদালতে প্রসিকিউশন বলছে, ইমরান খানের এই কর্মকাণ্ড একদিকে যেমন কূটনীতিক সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত করে অন্যদিকে গুরুত্বপূর্ণ নথি ফাঁসের অপরাধও। যে কারণে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড কিংবা মৃত্যুদণ্ড পর্যন্ত দেয়া যেতে পারে তাকে।
বর্তমানে আদিয়ালা কারাগারে রয়েছেন মি. খান। গত আগস্ট মাস থেকে সেখানেই বিশেষ আদালত বসিয়ে এই মামলার শুনানি চলছিলো।
স্থানীয় গণমাধ্যমের খবরে বলা হচ্ছে, এই মামলার বিচারককে বলা হয়েছে মামলা কার্যক্রম দ্রুত শেষ করতে।
মি. খানের দল পিটিআই বলছে, তারা আদালতের এই রায়কে চ্যালেঞ্জ করবে। এটিকে একটি উপহাসের রায় বলেও আখ্যা দেন তারা।
তোশাখানা মামলায় ইমরান খানকে আগেই গ্রেফতার করেছিল পাকিস্তান পুলিশ। তারপর থেকে জেলেই রয়েছেন তিনি। তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা চলছে পাকিস্তানের আদালতে।
এরই একটি ছিল এই মামলাটি যার রায়ে মঙ্গলবার ইমরানকে ১০ বছরের জেলের সাজা শোনাল আদালত।
আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচন। এই নির্বাচনে ইমরান খানের দল পিটি-আইকে প্রচারণায় বাধা দেয়ার অভিযোগও পাওয়া গেছে।
২০২২ সালের এপ্রিলে পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদে অনাস্থা ভোটে হেরে প্রধানমন্ত্রিত্ব ছাড়তে বাধ্য হন ইমরান খান। এরপর তার বিরুদ্ধে একে একে শতাধিক মামলা হয়। সেনাসদর দপ্তরে হামলাসহ ২০২৩ সালের ৯ মের সহিংসতার ঘটনায় তাকে কমপক্ষে ১২টি মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।
২০২৩ সালের মে মাসে ইমরান খানকে গ্রেফতারের পর, তিনি নাটকীয়ভাবে মুক্তিও পেয়ে যান, কিন্তু সেটা ছিল একেবারেই ভিন্ন এক রাজনৈতিক পরিবেশে। কিন্তু একই বছর ৫ই অগাস্টের তিনি গ্রেফতারের পর প্রতিক্রিয়া একেবারেই বিপরীতধর্মী ছিল।
ইমরান খানের প্রথমবার গ্রেফতার হওয়ার প্রতিবাদে পেশাওয়ার থেকে করাচি- পাকিস্তান জুড়ে ব্যাপক বিক্ষোভ ও সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছিল। অগ্নিসংযোগ করা হয়েছিল বিভিন্ন ভবনে ও গাড়িতে। এমনকি তার সমর্থকরা সামরিক বাহিনীর স্থাপনাতেও হামলা চালিয়ে ছিল।
কিন্তু সবশেষ যেদিন (৫ আগস্ট) গ্রেফতার হলেন সেই শনিবার রাত পাকিস্তানের অন্যান্য সাধারণ রাতের চেয়ে কোনোভাবেই আলাদা ছিল না।
ইমরান খানের মতো আরো অনেক পাকিস্তানি নেতাকে এর আগে কারাগারে যেতে হয়েছে। তাদের মধ্যে রয়েছেন নওয়াজ শরীফ, বেনজির ভুট্টো এবং সামরিক একনায়ক পারভেজ মুশাররফসহ আরো অনেকে।
ইমরান খান নিজেও প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে তারই বেশ কয়েকজন রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীকে কারাগারে পাঠিয়েছিলেন।
পাকিস্তানের রাজনীতিবিদরা প্রায়শই বলে থাকেন যে দেশটির বিচার ব্যবস্থাকে তাদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হয়।