বান্দরবানের থানচিতে পুলিশ ও বিজিবির সাথে একদল সশস্ত্র গোষ্ঠীর গোলাগুলির খবর পাওয়া গেছে। রাত আটটা ৫০ মিনিট থেকে এ গোলাগুলি শুরু হয় বলে জানা যায়। প্রায় ঘণ্টাব্যাপী এ গোলাগুলি চলে।
থানচির উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মামুন বিবিসি বাংলাকে বলেন, “ থানচি সদর বাজারে অবস্থিত থানার সামনে এ গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। তবে এখন থেমেছে। সেখানে বিজিবির একটি ক্যাম্পও রয়েছে। এছাড়া থানচির হাসপাতালের পেছনেও গোলাগুলি হয়েছে” ।
“ একদল সন্ত্রাসী গোষ্ঠী প্রথম গুলি চালায়। এখনও আহত বা নিহতের খবর পাওয়া যায় নি। বিস্তারিত পরে জানানো হবে” বলেন মি. মামুন।
এর আগে বান্দরবানের রুমা থেকে অপহৃত সোনালী ব্যাংকের কর্মকর্তা নেজাম উদ্দিনকে উদ্ধার করা হয়। রুমা বাজার থেকে র্যাব তাকে উদ্ধার করেছে বলে জানাচ্ছে।
র্যাব থেকে পাঠানো একটি খুদে বার্তায় জানানো হয়েছে, “ র্যাবের মধ্যস্থতায় সোনালী ব্যাংকের বান্দরবানের রুমা শাখার ম্যানেজার নেজাম উদ্দিনকে উদ্ধার করা হয়েছে”।
রুমার উপজেলা প্রশাসনের স্থানীয় একজন কর্মকর্তা বিবিসি বাংলাকে বলেন, “ ব্যাংক ম্যানেজার ভালো আছেন। তার সাথে কথা হয়েছে। শারীরিকভাবে সুস্থ আছেন তিনি ”।
প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার রাতে একদল বন্দুকধারী রুমা উপজেলা কমপ্লেক্সের মসজিদ ঘেরাও করে ব্যাংক কর্মকর্তা নেজাম উদ্দিনকে তুলে নেয় এবং এরপর ব্যাংকে তাণ্ডব চালায়।
পরদিন বুধবার বন্দুকধারীরা থানচি বাজার ঘেরাও করে সোনালী ও কৃষি ব্যাংকের দুটি শাখা তছনছ করে এবং ব্যাংকের কাউন্টার ও উপস্থিত ব্যক্তিদের কাছ থেকে ১৭ লাখ ৪৫ হাজার টাকা লুট করে নিয়ে যায় বলে জানান থানচি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মামুন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বুধবার দুপুরেই ঢাকায় প্রেস ব্রিফিংয়ে রুমা ও থানচিতে ব্যাংকে সশস্ত্র হামলার জন্য কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট বা কেএনএফকে দায়ী করলেও কেএনএফ এর তরফ থেকে এ বিষয়ে কোনো বার্তা আসেনি।
রুমা ও থানচির ঘটনার সাথে জড়িতদের কাউকে এখনো আটক করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
তবে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে কেএনএফ এর সঙ্গে পরবর্তী বৈঠক বাতিল করেছে বান্দরবান জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের নেতৃত্ব গঠিত শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটি।
অপহৃত কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ: ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ও পরিবার যা বলছে
এর আগে বৃহস্পতিবার দুপুরে সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আফজাল করিম বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছিলেন যে রুমা সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপক নেজাম উদ্দিন ভালো আছেন বলে খবর পেয়েছেন তারা।
কীভাবে এই তথ্য পেলেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমার সঙ্গে সরাসরি কথা হয়নি। তবে পরিবার বার্তা পেয়েছে বলে আমাকে জানিয়েছে। আমরাও বিভিন্ন মাধ্যমে জেনেছি যে তিনি ভালো আছেন”।
যদিও অপহৃত ব্যাংক কর্মকর্তা নেজাম উদ্দিনের স্ত্রী মাইসুরা ইসফাত বিবিসি বাংলাকে বলেছিলেন যে স্বামীর সাথে এখন পর্যন্ত সরাসরি কোনো কথা হয়নি।
“তবে আমরা খবর পেয়েছি যে তিনি ভালো আছেন। আমরা চাই দ্রুত ওনাকে উদ্ধার করা হোক। সময় দ্রুত পেরিয়ে যাচ্ছে,” বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন তিনি।
কিন্তু নেজাম উদ্দিন সম্পর্কে কারা তাকে বার্তা দিয়েছে বা তারা আর কিছু বলেছে কি না এসব বিষয়ে বিস্তারিত আর কিছু বলতে রাজি হননি তিনি।
রুমা ও থানচির পরিস্থিতি কেমন
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ মাহবুবুল হক বলছেন রুমার পরিস্থিতি থমথমে হলেও পরিবহন চলাচল শুরু হয়েছে এবং দোকানপাট খুলেছে।
তবে রুমা ও থানচির বাজারগুলোতে দোকানপাট খুললেও খুব একটা লোকজন নেই বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। যদিও ঘটনার পর থেকেই বিজিবি ও পুলিশ টহল দিচ্ছে।
এদিকে মঙ্গলবার রাতে রুমায় ও বুধবার থানচিতে ব্যাংকে সশস্ত্র হামলার পর বান্দরবান জেলার মোট তিনটি উপজেলায় সোনালী ব্যাংকের কার্যক্রম সাময়িক বন্ধ রাখা হয়েছে।
পর্যটনের জন্য এই শহরটি পরিচিত হলেও রোজার কারণে পর্যটক কম ছিল। তার মধ্যে এই ঘটনার জেরে এলাকাটি একেবারেই পর্যটক শূন্য হয়ে পড়েছে।
যা হয়েছিলো মঙ্গলবার রাতে ও বুধবার দুপুরে
স্থানীয় পুলিশ জানিয়েছে মঙ্গলবার রাতে রুমা উপজেলা প্রশাসন কমপ্লেক্স ভবনে সোনালী ব্যাংকে ডাকাতির আগে সেখানকার মসজিদ ঘিরে ফেলেছিলো ডাকাতরা।
তবে পরিষদ চত্বরে ঢোকার আগেই ডাকাতরা সেখানকার বিদ্যুতের সাব স্টেশন বন্ধ করে দেয় বলে বুধবারের ব্রিফিংয়ে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান।
স্থানীয়রা বলছেন এশার নামাজের সময় মসজিদ ঘেরাওয়ের পাশাপাশি সোনালী ব্যাংকেও অবস্থান নেয় তারা। ডাকাতদের বিশ জনের মতো মসজিদে প্রবেশ করে ব্যাংক ম্যানেজারকে খুঁজতে শুরু করে। এরপর অস্ত্রের মুখে মুসল্লিদের জিম্মি করে সেখানে থাকা ব্যাংক ম্যানেজার নিজাম উদ্দিনকে নিয়ে যায় ব্যাংকে।
ব্যাংকের ভেতরে ঢুকে ম্যানেজারের কাছে থাকা চাবি নিয়ে ভল্ট খুলার চেষ্টা করে তারা। তবে সোনালী ব্যাংক কর্তৃপক্ষ বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছে, শেষ পর্যন্ত ভল্ট ভাঙতে না পারায় কোনো টাকা লুট করতে পারেনি সন্ত্রাসীরা।
রুমার এ ঘটনা নিয়ে ব্যাপক তোলপাড়ের মধ্যে বুধবার দুপুরেই সেখানে যান পুলিশের আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন।
সে সময় থানচিতেও সোনালী ব্যাংক ও কৃষি ব্যাংকের দুটি শাখায় হামলার খবর পাওয়া যায়।
ওইদিন বেলা সাড়ে এগারটার পর সশস্ত্র ব্যক্তিরা থানচি বাজার ঘিরে ফেলে এবং এরপর অস্ত্রের মুখে লোকজনের ফোন কেড়ে নিয়ে ব্যাংকে ঢুকে পড়ে।
যদিও জানা গেছে ব্যাংকে প্রবেশ করে নিরাপত্তা কর্মীদের অস্ত্র কেড়ে নেয়ার পর কাউন্টার এবং গ্রাহকদের কাছ থেকেও টাকা নিয়ে যায় অস্ত্রধারীরা।
প্রসঙ্গত, থানচি বাজারের সাথেই থানা ও বিজিবির ক্যাম্প ছাড়াও কাছেই সেনাবাহিনীর একটি চেকপোস্ট আছে।
স্থানীয়রা অবশ্য বলছে অল্প সময়ের মধ্যেই ভীতিকর অবস্থা তৈরি করে দুই ব্যাংকে হামলা করে ডাকাতদল ওই এলাকা ছেড়ে যায়।
এর মধ্যে বুধবার ভোর থেকেই অপহৃত ব্যাংক কর্মকর্তা নেজাম উদ্দিন এবং লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধারে অভিযান শুরু করে যৌথ বাহিনী।