ভারতের লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল যে দিন ঘোষণা হচ্ছিল, সেদিন দেশের শেয়ার বাজারে সাম্প্রতিক কালের মধ্যে সবচেয়ে বড় ধস নেমেছিল। কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী এবং তৃণমূল কংগ্রেসের সংসদ সদস্য সাকেত গোখলে এই ধস নামার পিছনে বিজেপির হাত আছে কি না, তার তদন্ত দাবি করেছেন।
তারা বলছেন, গত শনিবার সপ্তম তথা শেষ দফার ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার পর যে বুথ-ফেরত সমীক্ষা বা এক্সিট পোল ঘোষণা করেছিল বিভিন্ন টিভি চ্যানেল, তাতে দেখা যায় যে নরেন্দ্র মোদী বিপুল ভোটে জিতে আবারও ক্ষমতায় আসবেন।
তার ভিত্তিতেই সোমবার সকালে শেয়ার বাজার খুলতেই সেনসেক্স, নিফটি সব সূচকই দ্রুত চড়তে থাকে।
অতি-উৎসাহী হয়ে কয়েক লক্ষ সাধারণ মানুষ শেয়ার বাজারে বাড়তি বিনিয়োগ করেছিলেন।
সংবাদ সংস্থা রয়টার্স জানাচ্ছে যে সেদিন ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জের নিফটি৫০ সূচক উঠেছিল ৩.৩% আর বম্বে স্টক এক্সচেঞ্জের বিএসই সেনসেক্স চড়েছিল ৩.৪%।
তবে চৌঠা জুন যখন ভোটগণনার প্রকৃত ফলাফল ঘোষণা শুরু হয়, তারপরেই মঙ্গলবার সকাল থেকেই শেয়ার বাজারে ধস নামতে থাকে।
রাহুল গান্ধী এবং তৃণমূলের সাকেত গোখলের অভিযোগ বুথ ফেরত সমীক্ষায় ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে বিজেপির পক্ষে আসনসংখ্যা দেখানোর ফলে প্রথমে শেয়ার বাজার চড়েছিল আর প্রকৃত ফল বের হওয়ার পরে বাজারে ধস নামে।
কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী যৌথ সংসদীয় কমিটির অধীনে তদন্তের দাবি করেছেন আর তৃণমূল কংগ্রেসের সাকেত গোখলে শেয়ার বাজার নিয়ন্ত্রক সিকিউরিটিস অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ বোর্ড অফ ইন্ডিয়া বা সেবির চেয়ারপার্সনের কাছে চিঠি দিয়ে তদন্ত দাবি করেছেন।
মোদী, অমিত শাহ’র শেয়ার কেনার পরামর্শ
নির্বাচন চলাকালীন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ দুজনেই টিভি সাক্ষাৎকারে পরামর্শ দিয়েছিলেন যে ভোটের ফল ঘোষণার দিন, অর্থাৎ চৌঠা জুনের আগে শেয়ার কিনে রাখতে, তারপরে শেয়ার বাজার চড়বে।
নিয়মিত শেয়ার কেনাবেচা করেন, কলকাতার এমন এক ব্যক্তি বলছিলেন যে প্রধানমন্ত্রী বা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শেয়ার বাজার নিয়ে পরামর্শ দিচ্ছেন, ভোটের ফল ঘোষণার আগে শেয়ার কিনে রাখতে বলেছেন, এমনটা আগে কখনও হয়নি।
রাহুল গান্ধী বলেন, “১৩ই মে অমিত শাহ বলেছিলেন ‘চৌঠা জুনের আগে শেয়ার কিনে রাখুন’। প্রধানমন্ত্রী ১৯শে মে বলেছিলেন ‘চৌঠা জুন শেয়ার বাজার সব রেকর্ড ভেঙ্গে দেবে। সংবাদমাধ্যম পয়লা জুন বুথ-ফেরত সমীক্ষার ফল প্রকাশ করল। তেসরা জুন শেয়ার বাজার সর্বকালীন রেকর্ড গড়ল। চৌঠা জুন বাজারে ধস নামল এবং বিনিয়োগকারীরা, বিশেষত ছোট বিনিয়োগকারীরা প্রায় ৩০ লক্ষ কোটি টাকা খোয়ালেন।”
তার কথায়, “বিজেপি, ভুয়া বুথ ফেরত সমীক্ষক আর সন্দেহজনক বিদেশি বিনিয়োগকারীদের মধ্যে কী যোগসূত্র আছে? বুথ ফেরত সমীক্ষার একদিন আগে কারা বিরাট অঙ্কের লাভ ঘরে তুলল? আমরা যৌথ সংসদীয় কমিটির তদন্ত দাবি করছি। আমরা নিশ্চিত যে এখানে একটা কেলেঙ্কারি হয়েছে।”
বুথ-ফেরত সমীক্ষার কারণেই বাজারে ধস?
তৃণমূল কংগ্রেসের সংসদ সদস্য সাকেত গোখলে শেয়ার বাজার নিয়ন্ত্রক ‘সেবি’কে যে চিঠি লিখেছেন, তাতে তিনি বলেছেন, “বুথ ফেরত সমীক্ষাগুলি স্পষ্টতই ম্যানিপুলেট করা হয়েছিল শেয়ার বাজার চড়ানোর উদ্দেশ্যে। কয়েক লক্ষ বিনিয়োগকারীর অর্থ পরের দিন (চৌঠা জুন) বাজারে ধস নামার ফলে সাফ হয়ে গেছে। একটা তদন্ত হওয়া উচিত যে বুথ ফেরত সমীক্ষাগুলিতে ইচ্ছা করে বিজেপির পক্ষে বেশি আসনের পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছিল কি না।”
শেয়ার বাজার বিশ্লেষক রজত বসু বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন, “বুথ ফেরত সমীক্ষা বাজারে একটা উৎসাহ তৈরি করেছিল, যারা শেয়ার বাজারে কেনাবেচা করেন, তারা ভাবতে শুরু করেছিলেন যে বিজেপি সরকার নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ফিরে আসবে। বুথ ফেরত সমীক্ষাগুলো তো বলেইছিল যে ৩৫০টি আসন নিয়ে বিজেপি সরকার গড়বে।”
“বুথ ফেরত সমীক্ষা বেরুনোর পরে যেদিন বাজার খুলল, সোমবার, সেদিন থেকেই আমি এবং আমার মতো আরও বিশ্লেষকরা পরামর্শ দিচ্ছিলাম যে তখনই শেয়ার কেনা সমীচীন নয়। কারণ প্রকৃত ফলাফল একটু এদিক-ওদিক হলে, সামান্যতম হতাশাব্যঞ্জক কোনও ফল যদি আসে, তাহলেই কিন্তু শেয়ার বাজার পড়ে যাবে,” বলছিলেন মি. বসু।
এই নিবন্ধে Google YouTubeএর কনটেন্ট রয়েছে। কোন কিছু লোড করার আগে আমরা আপনার অনুমতি চাইছি, কারণ তারা হয়ত কুকি এবং অন্যান্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে থাকতে পারে। আপনি সম্মতি দেবার আগে হয়ত Google YouTube কুকি সম্পর্কিত নীতি এবং ব্যক্তিগত বিষয়ক নীতি প়ড়ে নিতে চাইতে পারেন। এই কনটেন্ট দেখতে হলে ‘সম্মতি দিচ্ছি এবং এগোন’ বেছে নিন।
সতর্কবাণী: বিবিসির নয় এমন ওয়েবসাইটের কনটেন্টের জন্য বিবিসি দায়ী না YouTube কনটেন্টে বিজ্ঞাপন থাকতে পারে
End of YouTube post
ছবির কপিরাইট
YouTube -এ আরো দেখুনবিবিসি। বাইরের কোন সাইটের তথ্যের জন্য বিবিসি দায়বদ্ধ নয়।
তার কথায় শেয়ার বাজারে ওঠা নামা থাকেই, এটা স্বাভাবিক ঘটনা।
“কিন্তু আমার কাছে আশ্চর্যজনক ঘটনা হলো বুথ ফেরত সমীক্ষাগুলো। রাহুল গান্ধী যেভাবে শেয়ার বাজারে ধস নামাটাকে কেলেঙ্কারি বলছেন, সেটার তদন্ত করে দেখতে পারে একমাত্র সেবি। কিন্তু তদন্ত যদি করতেই হয়, তাহলে বুথ ফেরত সমীক্ষাগুলো নিয়ে তদন্ত হওয়া উচিত। তারা কেন ওইরকম ফলাফলের পূর্বাভাস দিয়েছিল, কতজনের ওপরে, কোন পদ্ধতিতে সমীক্ষা চালিয়েছিল, সেগুলো নিয়ে প্রশ্ন তোলা যেতে পারে,” বলছিলেন মি. বসু।
বিজেপির পাল্টা জবাব
বিরোধীদের তোলা ‘কেলেঙ্কারি’র অভিযোগের জবাবে বিজেপি পাল্টা বলছে রাহুল গান্ধীরা শেয়ার বাজারের বিনিয়োগকারীদের ভুল পথে চালিত করার ষড়যন্ত্র করছেন।
কেন্দ্রীয় বাণিজ্য মন্ত্রী পীযুষ গোয়েল বলেন যে বিরোধী দলগুলো সম্ভবত এখনও তাদের পরাজয় মেনে নিতে পারছে না।
“রাহুল গান্ধী লোকসভা নির্বাচনের পরাজয়ের হতাশা কাটিয়ে উঠতে পারেননি। এখন তিনি বিনিয়োগকারীদের ভুল বোঝানোর ষড়যন্ত্র করছেন। ভারত এখন বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম অর্থনীতি। তিনি দেশি ও বিদেশি বিনিয়োগকারীদের মনে একটা ভয় ধরাতে চাইছেন যাতে তারা এখানে বিনিয়োগ না করেন,” বলেছেন পীযুষ গোয়েল।