ফিলিপিন্স কর্তৃপক্ষ বলছে দেশটিতে পলাতক কিংবা কেলেঙ্কারিতে জড়িত প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মীদের গ্রেফতার এড়াতে প্লাস্টিক সার্জারি করে চেহারা বদলে দেয়ার প্রস্তাব দিচ্ছে গোপনে পরিচালিত দেশটির কিছু হাসপাতাল।
মে মাসে ম্যানিলার দক্ষিণাঞ্চলীয় শহরতলিতে একটি হাসপাতালে পুলিশ তল্লাশি চালানোর পর পুলিশের একজন মুখপাত্র বিবিসিকে বলেছেন যে, এ ধরনের দুটি অবৈধ হাসপাতাল আসন্ন সপ্তাহগুলোতে বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
দুই মাস আগে পাসে শহরের একটি হাসপাতালে অভিযান চালিয়ে চুল ও দাঁত প্রতিস্থাপন এবং গায়ের চামড়া উজ্জ্বল করার উপকরণ উদ্ধার করা হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
“এগুলো করে আপনি সম্পূর্ণ একজন নূতন মানুষ তৈরি করতে পারেন,” প্রেসিডেন্সিয়াল অ্যান্টি অর্গানাইজড ক্রাইম কমিশন (পিএওসিসি)র মুখপাত্র উইনস্টন জন ক্যাসিও বলেছেন।
কর্তৃপক্ষ বলছে এখন যে দুটি অবৈধ হাসপাতাল নজরদারিতে আছে সেগুলো পাসে শহরের হাসপাতালটির চেয়ে অন্তত চার গুণ বড় বলে মনে করা হচ্ছে।
মি.ক্যাসিও বলছেন এদের গ্রাহকদের অনলাইন ক্যাসিনো কার্যক্রমে জড়িত থাকার অভিযোগ আছে, যারা ফিলিপিন্সে অবৈধভাবে কাজ করছে।
অনলাইন ক্যাসিনো বা পোগোস (ফিলিপিন্স অনলাইন গেমিং অপারেশন) চীনের মূল ভূখণ্ডে খেলোয়াড়দের সহায়তা করে, যেখানে জুয়া সম্পূর্ণ অবৈধ।
তবে পুলিশ বলছে পোগোস এর আবরণে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড হয় যেমন মানব পাচার কিংবা টেলিফোন কেলেঙ্কারি।
তিনজন চিকিৎসক- এর মধ্যে দুজন ভিয়েতনামের আর একজন চীনের- একজন চীনা ফার্মাসিস্ট এবং একজন ভিয়েতনামি নার্সকে পাসে শহরের তল্লাশির সময় আটক করা হয়েছে। তাদের কারোরই ফিলিপিন্সে কাজের লাইসেন্স নেই।
কর্তৃপক্ষ সেখানে হেমোডায়ালাইসিস যন্ত্র পেয়েছে। প্রায় চারশো বর্গমিটার এলাকাজুড়ে তৈরি হওয়া ওই হাসপাতাল প্লাস্টিক সার্জারির পাশাপাশি বিভিন্ন চিকিৎসা সুবিধা অফার করে থাকে।
“বাইরে থেকে অন্য স্বাভাবিক ক্লিনিকগুলোর মতোই মনে হবে। কিন্তু একবার ভেতরে গেলে আপনি অবাক হবেন তারা কী ধরনের প্রযুক্তি ব্যবহার করছে তা দেখে,” মি. ক্যাসিও বলছিলেন।
“এসব পোগো হাসপাতাল সঠিক পরিচয়পত্র দেখতে চায় না…আপনি হতে পারে একজন পলাতক ব্যক্তি বা আপনি ফিলিপিন্সে আসা একজন অবৈধ এলিয়েনও হতে পারেন,” বলছিলেন তিনি।
কর্তৃপক্ষ এখন সাদা পোশাকে পাসে শহরের এ ধরনের অবৈধ হাসপাতালগুলোর দিকে নজর রাখছে।
সাবেক প্রেসিডেন্ট রদ্রিগো দুতের্তের সময়ে পোগোসের বিকাশ হয়। মি দুতের্তে তার ২০২২ সাল পর্যন্ত তার ছয় বছরের মেয়াদে চীনের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতে চেয়েছিলেন।
তবে তার উত্তরসূরি ফার্ডিন্যান্ড মার্কোস জুনিয়র অপরাধ যোগসূত্রের জন্য পোগোসের বিরুদ্ধে অভিযান চালাচ্ছেন।
“প্রেসিডেন্ট চান না ফিলিপিন্স ‘স্ক্যাম হাব বা কেলেঙ্কারির কেন্দ্র’ হিসেবে চিত্রিত হোক। সারা বিশ্বের মানুষকে তারা যেভাবে টার্গেট করছে, সেজন্য এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য তিনি আমাদের নির্দেশনা দিয়েছেন ” মি. ক্যাসিও বলছিলেন।
২০২২ সালের ডিসেম্বরে ইমিগ্রেশন কর্মকর্তারা একজন সন্দেহভাজন চীনা মাফিয়া সদস্যকে আটক করেন যিনি প্লাস্টিক সার্জারি করিয়েছিলেন বলে অভিযোগ আছে, যাতে তাকে কেউ যেন কেউ চিনতে না পারে। এ ধরনের ঘটনার সাথে আন্ডারগ্রাউন্ড হাসপাতালগুলোর যোগসূত্র থাকতে পারে বলে মনে করছেন মি. ক্যাসিও।
সম্প্রতি নিজের অফিসের কাছেই একটি পোগো স্ক্যাম সেন্টার আবিষ্কারের পর তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েন রাজধানীর উত্তরের একটি শহরের একজন মেয়র অ্যালিস গিও।
এমনকি তার বিরুদ্ধে চীনের পক্ষে গুপ্তচরবৃত্তিরও অভিযোগ ওঠে।