যুক্তরাষ্ট্রের জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, এখনই সময় নতুন প্রজন্মের কাছে নেতৃত্বের মশাল তুলে দেয়ার।
তিনি বলেন, “নতুন কণ্ঠের জন্য একটা স্থান ও সময় আছে, হ্যাঁ তরুণ কণ্ঠের জন্য”।
ওভাল অফিসে বুধবার রাতে এক ভাষণে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন দেশবাসীর প্রতি এ আহ্বান জানান।
রেকর্ড করা এ ১১ মিনিটের সাক্ষাৎকারটি টেলিভিশনে প্রচারিত হয়। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের পর ক্যামেরার সামনে এটিই তার প্রথম ভাষণ।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিপক্ষে বিতর্কে হতাশাজনক পারফরম্যান্সের পর কয়েক সপ্তাহ ধরে চাপে ছিলেন তিনি। পরে নভেম্বরের নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটিক দলের প্রার্থিতা থেকে সরে আসেন এবং রোববার তার ভাইস-প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসকে সমর্থন করেন মি. বাইডেন।
তিনি বলেছেন, কমালা হ্যারিস তার সমর্থক ডেমোক্রেট এবং দেশকে একত্রিত করবেন।
“ব্যক্তিগত উচ্চাকাঙ্ক্ষা আমাদের গণতন্ত্র রক্ষায় বাধা হতে পারে না,” বলেছেন মি. বাইডেন।
তিনি বলেছেন, “আমি এই অফিসকে সম্মান করি” “ কিন্তু আমি আমার দেশকে আরো বেশি ভালোবাসি ”
অর্ধ শতাব্দীরও বেশি সময় সরকারি পদে থাকা মি. বাইডেন বলেছেন, “আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি সামনে এগিয়ে যাওয়ার সর্বোত্তম উপায় হলো নতুন প্রজন্মকে নেতৃত্বের মশাল দেয়া।”।
“আমাদের দেশবাসীকে একত্রিত করার এটাই সবচেয়ে ভালো উপায়,” বলেন মি. বাইডেন।
আগামী বছরের জানুয়ারিতে মেয়াদ শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত আমেরিকার জনগণের জন্য কাজ করে যাওয়ার অঙ্গীকার করেছিলেন মি. বাইডেন।
এসময় ৫৯ বছর বয়সী ভাইস প্রেসিডেন্ট কমালা হ্যারিসকে “অভিজ্ঞ, কঠোর এবং সক্ষম” পার্টনার অভিহিত করেন তিনি।
তিনি বলেন, “সবচেয়ে বড় বিষয় হলো আমেরিকার জনগণ এখানে শাসন করে, রাজা এবং শোষকরা শাসন করে না। ইতিহাস গড়ার ক্ষমতা আপনাদের হাতে। ক্ষমতাও আছে আপনাদের হাতে। আমেরিকার ধারণা আপনাদের হাতেই ন্যস্ত।”
মি. বাইডেন গত মাসের শেষের দিকে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে তার বিতর্কে বিপর্যয়কর পারফরম্যান্সের প্রেক্ষাপটে প্রেসিডেন্ট প্রার্থিতা থেকে সরে যাওয়ার জন্য শীর্ষস্থানীয় ডেমোক্র্যাট এবং দাতাদের দিক থেকে চাপের মুখে ছিলেন। অবশ্য তিনি এ কথা উল্লেখ করেননি ভাষণে।
যদিও বাইডেনের মেয়াদের এখনও ছয় মাস বাকি আছে। কিন্তু এই বক্তৃতাটি আগাম বিদায়ের মতো শোনায়। আমেরিকার জনগণের উদ্দেশে তিনি বলেছেন, “৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে এই জাতিকে সেবা করা আমার জীবনের সৌভাগ্যের বিষয়।”
বাইডেনের এই বক্তৃতায় তার প্রশাসনের সফলতার কথা, যেমন- স্বাস্থ্য, জলবায়ু পরিবর্তন এবং অর্থনীতি নিয়ে তার পলিসিই বেশি প্রাধান্য পেয়েছে।
পেনসিলভানিয়ার স্ক্যান্টনের একটি ছোট শিশু থেকে দেশের প্রেসিডেন্ট হওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করে বলেন মি. বাইডেন বলেন, এটাই প্রমাণ করে যে সবার জন্য সমান সুযোগের যে স্বপ্ন সেটি আমেরিকায় বিরাজ করে।
৭৮ বছর বয়সী ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, ট্রুথ সোশ্যালে বুধবার রাতে পোস্ট করেছেন যে প্রেসিডেন্টকে “বোঝা দুর্বোধ্য এবং খুব খারাপ”।
ওই দিনের শুরুতেই নর্থ ক্যারোলিনার শার্লটে এক সমাবেশে রিপাবলিকান ট্রাম্প মিজ হ্যারিস এবং মি. বাইডেন দুইজনকেই আক্রমণ করেছিলেন।
“সাড়ে তিন বছর ধরে মিথ্যা কথা বলা কমালা হ্যারিস বাইডেনের প্রতিটি বিপর্যয়ের পিছনে অতি উদার চালিকা শক্তি হিসেবে কাজ করেছে,” বলেন তিনি।
“সে বামপন্থী একজন পাগল যে একবার প্রেসিডেন্ট অফিসে ঢোকার সুযোগ পেলে আমাদের দেশকে ধ্বংস করে দেবে,” বলেন মি. ট্রাম্প।
ওইদিন হোয়াইট হাউজে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রেস সেক্রেটারি কেরিন জিন পেরি মি. বাইডেনের প্রার্থিতা প্রত্যাহার ‘স্বাস্থ্যগত কারণে নয় ’ বলে জানান, তবে এর বেশি জানাতে অস্বীকার করেন তিনি।
ডেমোক্র্যাটদের মধ্যে শীর্ষস্থানীয় নেতারা ইতোমধ্যে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রার্থী হিসাবে কমালা হ্যারিসের প্রতি তাদের সমর্থন জানিয়েছেন। এদের মধ্যে রয়েছেন সংখ্যালঘু নেতা হাকিম জেফ্রিস এবং সিনেটের সংখ্যাগরিষ্ঠ নেতা চাক শুমারও।
বিনোদন জগতের একাধিক ব্যক্তিত্বও সমর্থন করেছেন ভাইস প্রেসিডেন্টকে। যাদের মধ্যে রয়েছেন জর্জ ক্লুনি, বারবারা স্ট্রাইস্যান্ড, জেমি লি কার্টিস এবং অন্যান্য হলিউড তারকারাও।
এর ফলে তার প্রচারের জন্য আরও অনুদান পাওয়ার সম্ভাব্য রাস্তা খুলে যেতে পারে। এদিকে, কমালা হ্যারিসের ‘রানিং মেট’ কে হবেন সে সংক্রান্ত চিন্তা ভাবনা চলছে ডেমোক্র্যাট শিবিরে।