দ্রুত ও দৃঢ় সিদ্ধান্ত গ্রহণে ব্যর্থতা অন্তর্বর্তী সরকারের সাফল্য নিয়ে জনমনে হতাশার জন্ম দিচ্ছে বলে মনে করেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা। তারা বলেছেন, প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণে সরকারের দ্বিধা ও ধীরগতি জনগণের আশাভঙ্গের কারণ হতে পারে। ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের এক মাস: কেমন গেল, কেমন যেতে পারত’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা এ কথা বলেন। রোববার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে এ সভার আয়োজন করে আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টি।
সভায় নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, এক মাসে অনেকেই নানা প্রস্তাব নিয়ে হাজির হচ্ছে। শত শত প্রস্তাব আসছে, আসবে। কিন্তু সরকারকে ঠিক করতে হবে এই সময়ে দেশ ও দেশের জনগণের মৌলিক প্রয়োজন কী। সেটা নির্ধারণ না করলে সঠিকভাবে এই সরকার এগোতে পারবে না। কোনো বিতর্কিত বিষয় নিয়ে আলোচনা অন্তর্বর্তী সরকারের কাজ নয় বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, শেখ হাসিনা পালানোর পর একটি নতুন বাংলাদেশ পাওয়া গেছে। এখন মানুষ মুক্তভাবে বাঁচতে চায়, চলতে চায়। দেশের প্রায় ৬৫ শতাংশ মানুষ তরুণ-যুবক উল্লেখ করে তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারকে মানুষের ভাবনাকে অগ্রাধিকার দিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে সমস্যার সমাধান করতে হবে।
পুলিশ এখনও সক্রিয় হয়নি উল্লেখ করে রাষ্ট্রবিজ্ঞানী দিলারা চৌধুরী বলেন, অনেকে বলছেন এটা একটা বিপ্লবী সরকার। আসলে এটা একটা গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সরকার। যেহেতু এই সরকার বর্তমান সংবিধানকে মেনে চলছে। তিনি বলেন, পুলিশ এখনো সক্রিয় হয়নি। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় পুলিশকে সক্রিয় করার কোন বিকল্প নেই। আমরা একটা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র চাই, মানবিক দেশ চাই যেখানে নাগরিকের অধিকার কখনও বিঘ্নিত হবে না।
আওয়ামী লীগ সরকারের পরাজয় ভারতের নরেন্দ্র মোদি সরকার মেনে নিতে পারেনি বলে মন্তব্য করেন বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক। তিনি বলেন, শ্রমিকদের ন্যায্য দাবি সরকারকে আন্তরিকতার সঙ্গে শুনে ব্যবস্থা নিতে হবে।
গণসংহতি আন্দোলনের সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, এক মাস একটি সরকারের মূল্যায়নের জন্য যথেষ্ট নয়। তবে এ সরকারকে বুঝতে হবে জাতির জন্য যেসব ছাত্র-জনতা অকাতরে জীবন দিয়েছেন, তাদের ভূমিকা অনন্য। বুঝতে হবে, সেই শহীদদের প্রতি কর্তব্য পালন করা হচ্ছে কি না। এখনো আহত ব্যক্তিদের কান্না হতবিহ্বল করে। এই সরকারকে অবশ্যই গণহত্যাকারীদের সঠিক বিচারের আওতায় আনতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে এবি পার্টির আহ্বায়ক এ এফ এম সোলায়মান চৌধুরী বলেন, রাষ্ট্রকে মেরামত করা লম্বা সময়ের কাজ, তারপরও অতি দ্রুত এগুলো করতে হবে। পতিত স্বৈরাচার মিথ্যা মামলা দিয়ে বিরোধী রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের হয়রানিমূলক মামলায় যারা কারাগারে আটকে ছিলেন, তাদের মুক্তি দেওয়ার মাধ্যমে এই সরকার গুরুত্বপূর্ণ গণতান্ত্রিক ভূমিকা পালন করেছেন। এই সরকার ক্ষমতায় আসার পর বন্যা সহ নানাবিধ সমস্যা মোকাবিলা করতে হচ্ছে। আমরা তাদের সর্বাত্মক সহোযোগিতা করছি এবং করবো। আশা করি, তারা দেশের মানুষের আশা আকাঙ্ক্ষার কথা বিবেচনায় নিয়ে দ্রুততম সময়ের মধ্যে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করবেন, জনগণের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দিবেন। এবং একটি গণতান্ত্রিক সরকারের নিকট ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন।
এবি পার্টির আহ্বায়ক এএফএম সোলায়মান চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও সদস্যসচিব মজিবুর রহমান মঞ্জুর সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য দেন- ১২ দলীয় জোটের প্রধান মোস্তফা জামাল হায়দার, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট হাসনাত কাইয়ুম, গণঅধিকার পরিষদের একাংশের আহ্বায়ক কর্ণেল অব: মিয়া মোহাম্মদ মশিউজ্জামান, ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশের প্রেসিডিয়াম সদস্য আশরাফ আলী আকন, গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, খেলাফত মজলিসের সেক্রেটারি অধ্যাপক ড. আহমদ আব্দুল কাদের, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, এবি পার্টির যুগ্ম আহবায়ক অধ্যাপক ডা: মেজর (অব.) আব্দুল ওহাব মিনার ও বিএম নাজমুল হক, এবি যুব পার্টির আহ্বায়ক শাহাদাত উল্লাহ টুটুল, এবি পার্টি উইমেন ইনচার্য ব্যারিস্টার নাসরীন সুলতানা মিলি, বাংলাদেশ ছাত্রপক্ষের আহ্বায়ক মোহাম্মদ প্রিন্স প্রমুখ।
সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন- এবি পার্টির যুগ্ম সদস্যসচিব ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ, প্রচার সম্পাদক আনোয়ার সাদাত টুটুল, সিনিয়র সহকারী সদস্যসচিব এবিএম খালিদ হাসান, মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আলতাফ হোসাইন, সহকারী সদস্যসচিব ব্যারিস্টার সানী আব্দুল হক, ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ লোকমান, শাহ আব্দুর রহমান সহ কেন্দ্রীয় ও মহানগরীর বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ।