মোট দুই লক্ষ চব্বিশ হাজার নবী-রাসুল এ পৃথিবীতে এসেছেন বলে বর্ণনা পাওয়া যায়। এর মধ্যে মাত্র পঁচিশ জন নবী-রাসুলের নাম পবিত্র কোরআনে উল্লেখ রয়েছে। আসুন সংক্ষেপে জেনে নেই কোরআনে বলা নবীদের কথা।
১. হযরত আদম (আ.): পৃথিবীর প্রথম মানুষ এবং প্রথম নবী। পবিত্র কোরআনের মোট ২৫ জায়গায় তার নাম উল্লেখ করা হয়েছে। আদম (আ.) এর তাওবার ঘটনা বেশ উল্লেখযোগ্য ঘটনা। শুরুতে তিনি এবং মা হাওয়া জান্নাতে ছিলেন। পরবর্তীতে দুনিয়ায় বসবাস শুরু করেন।
২. হযরত ইদরিস (আ.): কোরআনের দুটি আয়াতে এ নবী প্রসঙ্গে বলা হয়েছে। ইতিহাস থেকে জানা যায়, হযরত ইদ্রিস (আ.)ই প্রথম কলম আবিষ্কার করে লিখিত জ্ঞানের সূচনা করেন। এ ছাড়াও পোশাক সেলাইয়ের পদ্ধতিও তিনি আবিষ্কার করেছেন বলে জানা যায়।
৩. হযরত নুহ (আ.): কোরআনে ৪৩ বার উল্লেখ করা হয়েছে এই নবীর নাম। তিনি সাড়ে নয় শত বছর দাওয়াতি কাজ করে মাত্র আশি জন নারী পুরুষকে হেদায়াতের পথে আনতে পেরেছেন। তার সময়ের পৃথিবীতে আজাব হিসেবে মহা প্লাবন দেয়া হয়।
৪. হযরত হুদ (আ.): মোট সাতটি আয়াতে এ নবীর আলোচনা করা হয়েছে কোরআনে। তিনি আদ জাতির কাছে প্রেরিত হয়েছিলেন। আদ জাতি খুবই উন্নত প্রযুক্তিসমৃদ্ধ জাতি ছিলো। আল্লাহ তাদের ধ্বংস করে দেন।
৫. হযরত সালেহ (আ.): কোরআনের মোট ৯ জায়গায় এ নবীর প্রসঙ্গ এসেছে। তিনি সামুদ জাতির কাছে প্রেরিত হয়েছেন। সামুদ জাতিও উন্নত প্রযুক্তির অধিকারী ছিলো। আল্লাহকে অমান্য করার কারণে তারা ধ্বংস হয়ে যায়।
৬. হযরত ইবরাহিম (আ.): এর নাম পবিত্র কোরআনে ৬৯ বার উল্লেখ হয়েছে। তিনি ইরাকে জন্মগ্রহণ করেন ও ফিলিস্তিনে বসতি স্থাপন করেন। তাকে মুসলিম মিল্লাতের পিতা বলে কোরআনে উল্লেখ করা হয়েছে। তিনি কাবা ঘরের নির্মাতা ছিলেন।
৭. হযরত লুত (আ.): তার কথা ২৭ বার উল্লেখ করা হয়েছে কোরআনে। তার সম্প্রদায়ের লোকেরা সমকামিতার মতো জঘন্য পাপে লিপ্ত ছিলো। ফলে আল্লাহতায়ালা তাদের কঠোর শাস্তি দিয়ে দুনিয়া থেকে নিশ্চিহ্ন করে দেন।
৮. হযরত ইসমাঈল (আ.): হযরত ইবারাহিম (আ.) এর ছেলে তিনি। পবিত্র কোরআনে মোট ১২টি আয়াতে তার সম্পর্কে বলা হয়েছে। তিনি ছিলেন পরম ধৈর্যের প্রতীক। কোরবানি ও হজের সঙ্গে ইসমাইল (আ.) এর স্মৃতি জড়িত।
৯. হযরত ইসহাক (আ.): কোরআনের মোট ১৭ বার আলোচিত হয়েছে তার নাম। তিনি ও ইসমাঈল (আ.) সম্পর্কে ভাই ছিলেন। হযরত ইসহাক (আ.) অন্যতম মর্যাদাবান নবী ছিলেন।
১০. হযরত ইয়াকুব (আ.): মোট ১৬টি আয়াতে আলোচিত হয়েছে তার নাম। তার আরেক নাম হলো- ইসরাইল। তিনি ইউসুফ (আ.) এ পিতা।
১১. হযরত ইউসুফ (আ.): ২৭টি আয়াতে উল্লেখ হয়েছে তার নাম। তার পিতা ইয়াকুব (আ.), তার দাদা ইসহাক (আ.) ও পরদাদা ইবরাহীম (আ)ও নবী ছিলেন।
১২. হযরত শোয়াইব (আ.): ১১টি আয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে তার নাম। তার সম্প্রদায় ওজনে কম দেওয়ার অপরাধে খোদায়ি গজবে ধ্বংস হয়ে যায়।
১৩. হযরত আইয়ুব (আ.): কোরআনের ৪ জায়গায় আলোচিত হয়েছে তার নাম। আল্লাহতায়ালা তাকে দীর্ঘকাল কঠিন অসুখ দিয়ে পরীক্ষা করেছিলেন। কিন্তু তিনি ধৈর্যধারণ করে সে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন।
১৪. হযরত যুলকিফল (আ.): পবিত্র কোরআনে দুই জায়গায় তার নাম এসেছে। তিনি পুরো পৃথিবীর বাদশাহ ছিলেন।
১৫. হযরত মুসা (আ.): পবিত্র কোরআনে সবচেয়ে বেশি বার তার নাম উল্লেখ করা হয়েছে। মোট ১৩৭ বার এসেছে তার নাম।
১৬. হযরত হারুন (আ.): ২০টি আয়াতে তার প্রসঙ্গ এসেছে। তিনি মূসা (আ.)-এর ভাই ছিলেন। চমৎকার কথা বলার স্টাইল ছিলো এ নবীর।
১৭. হযরত দাউদ (আ.): ১৬টি আয়াতে উল্লেখ হয়েছে তার নাম। তাকে যাবুর কিতাব প্রদান করা হয়েছিল। তিনি একদিন রোজা রাখতেন, আরেকদিন রাখতেন না। তিনি মনোমুগ্ধকর সুরের অধিকারী ছিলেন।
১৮. হযরত সোলায়মান (আ.): মোট ১৭ বার উল্লেখ হয়েছে তার নাম। তিনি হযরত দাউদ (আ.) এর ছেলে। তিনিও সারা পৃথিবীর বাদশাহ ছিলেন।
১৯. হযরত ইলিয়াস (আ.): পবিত্র কোরআনে মোট ৩ বার উল্লেখ করা হয়েছে তার নাম।
২০. হযরত ইয়াসা (আ.): কোরআনে কারিমে ২ বার আলোচনা করা হয়েছে তার প্রসঙ্গ।
২১. হযরত ইউনুস (আ.): মোট ২টি আয়াতে উল্লেখ হয়েছে তার নাম। তাকে মাছে গিলে ফেলেছিল। পরে একটি দোয়া করার পর আল্লাহতায়ালা তাকে মুক্তি দেন। যা দুআ ইউনুস নামে পরিচিত।
২২. হযরত জাকারিয়া (আ.): মোট ৭ বার উল্লেখ হয়েছে তার নাম। পেশায় তিনি ছিলেন কাঠুরে।
২৩. হযরত ইয়াহইয়া (আ.): ৫টি আয়াতে উল্লেখ হয়েছে তার নাম। হযরত জাকারিয়া (আ.) এর ছেলে তিনি।
২৪. হযরত ঈসা (আ.): মোট ২৫ বার উল্লেখ হয়েছে ঈসা (আ.) এর প্রসঙ্গ। তিনি বনী ইসরাইল সম্প্রদায়ের সর্বশেষ নবী। ওনার আরেক নাম মসিহ।
২৫. হযরত মুহাম্মাদ (স.): পবিত্র কোরআনের চার জায়গায় নাম উল্লেখ করা হয়েছে। তবে নবীজি (স.) কে সম্বোধন করা হয়েছে ৪৫০টি আয়াতে।