ছবির উৎস, Getty Images
রাজধানীর তিতুমীর কলেজ শিক্ষার্থীদের স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবি ঘিরে রেল যোগাযোগে বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। অন্তত বিশটি ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয়ের কারণে যাত্রীরা চরম ভোগান্তিতে পড়ে। কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন ম্যানেজারকে অবরুদ্ধ করার ঘটনাও ঘটে। তবে রাতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আশ্বাসের ভিত্তিতে অবরোধ তুলে নেয় শিক্ষার্থীরা।
সোমবার বেলা চারটার দিকে আন্দোলনকারীরা উপকূল এক্সপ্রেস নামের একটি ট্রেন আটকে দেয়। আটকা পড়া ট্রেনটি পরে কর্তৃপক্ষের নির্দেশে উল্টোপথেই ফিরিয়ে নেয়া হয়।
এরপর থেকে রাজধানীমুখী ও রাজধানী থেকে বিভিন্ন রুটের ট্রেনগুলোর চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে।
তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীদের ব্যানারে গত কয়েকদিন ধরে নানা ধরনের কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে।
এ কয়দিনে গুলশান ও মহাখালী এলাকা বারবার অবরোধের কারণে শহরজুড়ে তীব্র যানজটে নাকাল হতে হয়েছে মানুষকে। সোমবার সেটি তীব্র আকার ধারণ করে; বিকল হয়ে যায় রেল যোগাযোগ।
পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিজিবি মোতায়েন করে সরকার।
যাত্রী ভোগান্তি, স্টেশন ম্যানেজার ‘অবরুদ্ধ’
তিতুমীর কলেজের আন্দোলনকারীরা মহাখালীতে রেলপথ অবরোধ করে রাখায় বিকেলে বন্ধ হয়ে যাওয়া রেল যোগাযোগ রাত সাড়ে নয়টা পর্যন্ত বন্ধ থাকে, ফলে দেশজুড়ে তীব্র ভোগান্তিতে পড়ে রেল যাত্রীরা।
রেলওয়ের ঢাকা বিভাগীয় রেলওয়ে ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ মহিউদ্দিন আরিফ বিবিসি বাংলাকে রাত সাড়ে নয়টার দিকে জানিয়েছেন ‘রেলপথ ক্লিয়ার না হওয়ার কারণে’ ট্রেন চলাচল এখনো শুরু করা যায়নি।
ওদিকে ঢাকার কমলাপুরে রাতে স্টেশন ম্যানেজারকে ঘিরে ধরে টিকিটের টাকা ফেরত চাইতে দেখা গেছে যাত্রীদের। এ সময় বেশ কিছুক্ষণ যাত্রীরা স্টেশন ম্যানেজারকে অবরুদ্ধ করে রাখে।
মহিউদ্দিন আরিফ অবশ্য বলেছেন ট্রেন না চললে যাত্রীদের টাকা ফেরত দেয়া হয়।
“আজও অনেকে ফেরত নিয়েছেন। বাকিরাও পাবেন,” বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন তিনি।
ঢাকায় কমলাপুর স্টেশনের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন তখন পর্যন্ত ঢাকার উত্তরা ও বনানীর কাছে তিনটি করে মোট ছয়টি ট্রেন আটকা পড়ে ছিল। শিডিউল বিপর্যয় ঘটে অন্তত বিশটি ট্রেনের।
ফলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে রাস্তায় আটকে চরম ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীরা।
‘এরা লোকজনকে অতিষ্ঠ করে ফেলতেছে’
তিতুমীর শিক্ষার্থীদের রেলপথ অবরোধ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, জনগণই তাদের উঠিয়ে দিবে রেললাইন থেকে।
“এরা লোকজনকে অতিষ্ঠ করে ফেলতেছে। দিনের পর দিনের দাবি দাওয়া বেড়েই চলেছে। তারা রাস্তা ছেড়ে দিক। জনগণের কোনো দুর্ভোগ যেন তারা সৃষ্টি না করে,” মন্ত্রণালয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের বলছিলেন মি. চৌধুরী।
“তারা ক্যাম্পাসে গিয়ে তাদের দাবি দাওয়া তাদের কর্তৃপক্ষের কাছে পেশ করুক। তারা যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে যাক,” যোগ করেন তিনি।
সাংবাদিকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “এটার পেছনে কারা জড়িত সেটা আপনারা জানেন। আপনার ডিটেইলস জানেন।”
ছবির উৎস, Home Min
আশ্বাসের ভিত্তিতে আন্দোলন প্রত্যাহার
সাত দিনের মধ্যে তাদের দাবির বিষয়ে সরকার পদক্ষেপ নিবে- শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিদের এই আশ্বাসের ভিত্তিতে আন্দোলন স্থগিত করেছে রাজধানীর তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা।
আন্দোলনকারীদের মধ্যে যারা অনশন করছিলেন তারা তাদের অনশন ভেঙেছেন। সোমবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব নুরুজ্জামান ও তিতুমীর কলেজের অধ্যক্ষ শিপ্রা রাণী মণ্ডলের উপস্থিতিতে তারা অনশন ভাঙেন।
রাত সাড়ে নয়টার পর মহাখালী রেলক্রসিংয়ে অনশন ভাঙার ঘোষণা দেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের প্ল্যাটফর্ম ‘তিতুমীর ঐক্যের’ নেতা ও অনশনরত শিক্ষার্থী আমিনুল ইসলাম।
আন্দোলনের কর্মসূচি স্থগিতের পর ট্রেন ও যান চলাচল শুরু হয়েছে।
গত বুধবার থেকে কলেজটিকে বিশ্ববিদ্যালয় করাসহ সাত দফা দাবিতে অনশনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছিলেন তারা।
তবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরা রাতে আন্দোলনকারীদের কাছে এসে বিশ্ববিদ্যালয় ইস্যু বাদ রেখে বাকিগুলোর বিষয়ে আগামী সাত দিনের মধ্যে পদক্ষেপ নেয়ার আশ্বাস দেন।
বেশ কিছু দিন ধরেই স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবিতে বিভিন্ন সময়ে আন্দোলন করতে দেখা গেছে তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীদের।
গত ২৬শে জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও তিতুমীর কলেজসহ সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। পরদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অধিভুক্তি থেকে সাত কলেজকে বাদ দেয়ার সিদ্ধান্ত জানান।
পরে সরকারের দিক থেকে জানানো হয় যে এই সাত কলেজকে নিয়ে একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিষয়টি চিন্তা করা হচ্ছে।
এরপর নতুন করে তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা প্রতিষ্ঠানটিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন।