আগামী ২৭ ফেব্রুয়ারি বর্ধিত সভা করবে বাংলাদেশে জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি। এতে দলের কেন্দ্র থেকে তৃণমূলের বিভিন্ন পর্যায়ের শীর্ষ নেতাদের পাশাপাশি ২০১৮ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণকারীরাও অংশ নেবেন।
দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বর্ধিত সভায় তৃণমূল নেতাদের কথা শুনবেন। একইসঙ্গে তিনি আগামী দিনে দলের সাংগঠনিক তত্পরতা ইসু্যতে মতামত তুলে ধরবেন। রোববার বিকালে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী একথা জানান।
রিজভী বলেন, ২৭ ফেব্রুয়ারি বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হবে। দলের নেতাকর্মীদের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা ছিল, তৃণমূল থেকে জাতীয় পর্যায়ে একসঙ্গে এক জায়গায় বসে এ সভা করার। সেই প্রত্যাশা পূরণে এবং একটি মহাআন্দোলন শেষে আমরা এই বর্ধিত সভা করতে যাচ্ছি।
এ সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য, ভাইস চেয়ারম্যান, উপদষ্টোমণ্ডলী, জেলা, মহানগর, থানা, উপজেলার সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, ২০১৮ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী সদস্য এবং অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক অংশ নেবেন। বর্ধিত সভার স্থান ঠিক হলে, পরে তা জানিয়ে দেওয়া হবে। দীর্ঘদিন বিএনপির জাতীয় কাউন্সিল হচ্ছে না, বর্ধিত সভাটি কাউন্সিলের বিকল্প কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, না, বর্ধিত সভা কাউন্সিলের বিকল্প নয়। বর্ধিত সভা সব সময় হয়ে থাকে, ইতঃপূর্বেও হয়েছে।
দলের নেতারা জানিয়েছেন, ২৭ ফেব্রুয়ারির বর্ধিত সভা উপলক্ষ্যে ব্যাপক প্রস্তুতি চলছে। বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের পাশাপাশি সারা দেশের মূল দলসহ বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর শীর্ষনেতা এই সভায় মতামত তুলে ধরতে পারবেন।
দলীয় সূত্র জানায়, বিগত দেড় দশকের বেশি সময় বিএনপি নেতাকর্মীরা নানাভাবে আওয়ামী লীগের হাতে নির্যাতিত, নিপীড়িত হয়েছেন। কেন্দ্রীয় নেতাদের পাশাপাশি তৃণমূল পর্যায়ে অসংখ্য নেতাকর্মীকে হত্যা, গুম ও খুন করা হয়েছে। অনেকেই পঙ্গুত্ববরণ করেছেন। মামলা-হামলায় জর্জরিত হয়েও দলের নেতাকর্মীরা মনোবল হারাননি। যে কারণে বিগত সময়ে সরকারবিরোধী আন্দোলন অব্যাহত রেখেছিলেন। ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে রাজপথে থেকে নেতাকর্মীরা স্বৈরাচার শেখ হাসিনার পতন ঘটিয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে দলের বির্ধিত সভায় তৃণমূল নেতাদের সুখ, দুঃখের পাশাপাশি প্রত্যাশার কথা শুনতে চান ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। একইভাবে সাংগঠনিক পরিধিসহ সার্বিক বিষয়ে মতামত নেবেন তিনি।
বর্ধিত সভা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্য বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীকে আহ্বায়ক করে ২৭ সদস্য বিশষ্টি বাস্তবায়ন কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটিতে সদস্য হিসাবে রয়েছেন, কেন্দ্রীয় নেতা খায়রুল কবির খোকন, হাবিব উন-নবী খান সোহেল, শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি, আব্দুস সালাম আজাদ, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, এম রশিদুজ্জামান মিল্লাত, ডা. মওদুদ হোসেন আলমগীর পাভেল, কাজী ছাইয়েদুল আলম বাবুল, মাহবুবের রহমান শামীম, অ্যাডভোকেট সৈয়দ শাহীন শওকত, আসাদুল হাবিব দুলু, জিকে গউছ, অধ্যক্ষ সেলিম ভূঁইয়া, শরিফুল আলম, শামা ওবায়েদ, অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, ব্যারিস্টার নাসির উদ্দিন অসীম, আজিজুল বারী হেলাল, এবিএম মোশাররফ হোসেন, রকিবুল ইসলাম বকুল, মীর সরাফত আলী সপু, প্রফেসর ড. মোর্শেদ হাসান খান, ডা. রফিকুল ইসলাম, রফিকুল আলম মজনু ও আমিনুল হক।
এছাড়াও ব্যবস্থাপনা কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে শহীদ উদ্দীন চেৌধুরী এ্যানিকে, অভ্যর্থনা কমিটির আহ্বায়ক হাবিব-উন-নবী খান সোহেল ও মো. আবদুস সাত্তার পাটোয়ারী, আপ্যায়ন কমিটির আহ্বায়ক এম রশিদুজ্জামান মিল্লাত, শৃঙ্খলা কমিটির আহ্বায়ক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, মিডিয়া কমিটির আহ্বায়ক ডা. মওদুদ হোসেন আলমগীর পাভেল, চিকিত্সা সেবা কমিটির আহ্বায়ক হিসাবে ডা. রফিকুল ইসলামকে রাখা হয়েছে।
নয়াপল্টনে সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেল, এমরান সালেহ প্রিন্স, অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফত আলী সপু, সাংগঠনিক সম্পাদক সাইয়েদুল আলম বাবুল।
দীর্ঘ সাত বছর পর বিএনপির এই বর্ধিত সভা হচ্ছে। এর আগে ২০১৮ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর একটি হোটেলে নির্বাহী কমিটির বর্ধিত সভা করেছিল বিএনপি। তখন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ওই সভায় সভাপতিত্ব করেছিলেন।