যেসব সাহাবি নবীর প্রহরী ছিলেন

হিজরত করার পর রাসুলুল্লাহ (সা.) মদিনায় ইসলামী রাষ্ট্রের গোড়াপত্তন করলে তাঁর একাধিক শ্রেণিশত্রু তৈরি হয় এবং তাঁর ব্যক্তিগত জীবনে নিরাপত্তাঝুঁকি তৈরি হয়। সাহাবায়ে কিরাম (রা.) তাঁর ঝুঁকি দূর করতে এগিয়ে আসেন। কেননা তাঁরা ছিলেন আল্লাহ, তাঁর নবী ও দ্বিন ইসলামের জন্য নিবেদিতপ্রাণ। ঠিক যেমনটি পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘বলুন! তোমাদের কাছে যদি আল্লাহ, তাঁর রাসুল ও আল্লাহর পথে জিহাদ করার চেয়ে প্রিয় হয় তোমাদের পিতা, তোমাদের সন্তান, তোমাদের ভাই, তোমাদের স্ত্রী, তোমাদের স্বগোষ্ঠী, তোমাদের অর্জিত সম্পদ, তোমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য—যাতে মন্দা পড়ার ভয় করো, তোমাদের বাসস্থান—যা তোমরা ভালোবাসো, তাহলে অপেক্ষা করো আল্লাহর বিধান আসা পর্যন্ত। আল্লাহ সত্যত্যাগী সম্প্রদায়কে সৎপথ দেখান না।’ (সুরা : তাওবা, আয়াত : ২৪)

বিভিন্ন সময় মহানবী (সা.)-এর নিরাপত্তাকর্মী বা প্রহরী হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী উল্লেখযোগ্য কয়েকজন সাহাবির পরিচয় তুলে ধরা হলো—

আবু বকর সিদ্দিক (রা.) : পুরুষের মধ্যে তিনি সর্বপ্রথম ইসলাম গ্রহণ করেন। যেকোনো সংকটে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর জন্য তাঁর নিবেদন ছিল অন্য সবার তুলনায় অনন্য। পৃথিবীতে জান্নাতের সুসংবাদ পাওয়া ১০ সাহাবির অন্যতম আবু বকর (রা.) বদরের যুদ্ধে মহানবী (সা.)-এর প্রহরী নিযুক্ত হন। যুদ্ধের আগে ও যুদ্ধের ময়দানে তিনি মহানবী (সা.)-এর সঙ্গে ছিলেন। এ ছাড়া হিজরতের সময় পথে রাসুল (সা.) যখন বিশ্রাম করতেন, তখন তিনি জেগে থেকে পাহারা দিয়েছেন এবং এ সময় পাহাড়ের গুহায় সাপের কামড় সহ্য করেছেন। (আর রাহিখুল মাখতুম, পৃষ্ঠা ১৭৫, ২১৬ ও ২২১)

সাদ বিন আবি ওয়াক্কাস (রা.) : তিনি ছিলেন বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী এবং পৃথিবীতে জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত সাহাবিদের একজন। ইসলামের জন্য প্রথম তীর নিক্ষেপকারী। তাঁর উপাধি ছিল ‘ফারিসুল ইসলাম’ বা ইসলামের ঘোড়সওয়ার।  তিনি স্বেচ্ছায় মহানবী (সা.)-এর প্রহরী নিযুক্ত হয়েছিলেন। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, এক রাতে নবী (সা.) জেগে রইলেন। পরে তিনি বলেন, যদি আমার সাহাবিদের কোনো নেককার লোক আজ রাতে আমার পাহারা দিত। হঠাৎ আমরা অস্ত্রের শব্দ শুনলাম। তখন তিনি বলেন, এ কে? বলা হলো, এ হচ্ছে সাদ, হে আল্লাহর রাসুল! আপনাকে পাহারা দিতে এসেছি। তখন নবী (সা.) ঘুমালেন, এমনকি আমরা তাঁর নাক ডাকার আওয়াজ শুনতে পেলাম।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৭২৩১)

জুবায়ের ইবনুল আউয়াম (রা.) : প্রথম ইসলাম গ্রহণকারী সাতজনের একজন ছিলেন তিনি। হাবশা ও মদিনা উভয় স্থানে তিনি হিজরত করেন। সম্পর্কে তিনি ছিলেন মহানবী (সা.)-এর ফুফাতো ভাই। মহানবী (সা.)-এর সঙ্গে সব যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। খন্দকের যুদ্ধে তিনি মহানবী (সা.)-এর প্রহরী নিযুক্ত হন। (বাহজাতুন নুফুসি ওয়াল আসরারি ফি তারিখি দারিল হিজরাতিন নাবি আল মুখতার, পৃষ্ঠা ৫১)

সাদ ইবনে মুয়াজ (রা.) : মদিনার আউস গোত্রের সর্দার ছিলেন এই মহান সাহাবি। মহানবী (সা.) মদিনায় হিজরত করার আগেই তিনি মুসআব ইবনে উমায়ের (রা.)-এর হাতে ইসলাম গ্রহণ করেন। বদর যুদ্ধে রাসুল (সা.) যখন রাতে বিশ্রাম করতেন তিনি তাঁকে পাহারা দিতেন। (প্রাগুক্ত)

আবু আবদুল্লাহ মুহাম্মদ ইবনে মাসলামা (রা.) : তিনি মুসআব ইবনে উমায়ের (রা.)-এর হাতে ইসলাম গ্রহণ করেন। তিনি মহানবী (সা.)-এর সঙ্গে বদরসহ অন্যান্য যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। উহুদের যুদ্ধে তিনি মহানবী (সা.)-এর প্রহরী ছিলেন। একাধিক যুদ্ধের সময় মহানবী (সা.) মদিনায় তাঁকে নিজের স্থলাভিষিক্ত করেন এবং ৫১ সারিয়ায় (ছোট যুদ্ধ বা নিরাপত্তা অভিযান) তাঁকে আমির নিযুক্ত করেন। (প্রাগুক্ত)

মুগিরা ইবনে শোবা (রা.) : তিনি খন্দকের যুদ্ধের সময় ইসলাম গ্রহণ করেন। তিনি বাইআতে রিদওয়ানে অংশ নেন। ইসলাম গ্রহণের পর রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর নেতৃত্বে সংঘটিত সব যুদ্ধে অংশ নেন। হুদাইবিয়ার চুক্তির সময় তিনি মহানবী (সা.)-এর প্রহরী হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ২৭৩১)

আবু আবদুল্লাহ বিলাল ইবনে রাবাহ (রা.) : কুরাইশের দাস থাকা অবস্থায় তিনি ইসলাম গ্রহণের ঘোষণা দেন এবং তাদের অকথ্য নির্যাতন সহ্য করেন। আবু বকর সিদ্দিক (রা.) তাঁকে কিনে মুক্ত করে দেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁকে আজানের দায়িত্ব অর্পণ করেন। রাসুল (সা.)-এর নেতৃত্বে সংঘটিত সব যুদ্ধে তিনি অংশ নেন। তিনি ওয়াদিউল কুরাতে মহানবী (সা.)-এর প্রহরী ছিলেন। (বাহজাতুন নুফুসি ওয়াল আসরারি ফি তারিখি দারিল হিজরাতিন নাবি আল মুখতার, পৃষ্ঠা ৫১)

আনাস ইবনে আবি মারসাদ (রা.) : তিনি ও তাঁর বাবা দুজনই রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সাহাবি ছিলেন। হুনাইনের যুদ্ধের সময় মহানবী (সা.) যখন বলেন, রাতের বেলা আমাদের কে পাহারা দেবে? তখন তিনি বলেন, আমি হে আল্লাহর রাসুল! তিনি বলেন, তাহলে ঘোড়ায় চড়ো। তিনি তাঁর একটি ঘোড়ায় চড়ে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে গেলেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁকে বললেন, তুমি এই গিরিপথের দিকে খেয়াল করবে এবং এর শেষ চূড়ায় গিয়ে পাহারা দেবে। সাবধান! আমরা যেন তোমার অসতর্কতার কারণে ধোঁকায় না পড়ি।…’ (সুনানে আবি দাউদ, হাদিস : ২৫০১)

আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) : তিনি ষষ্ঠ ব্যক্তি হিসেবে ইসলাম গ্রহণ করেন এবং হাবশা ও মদিনায় হিজরত করেন। বদরসহ মহানবী (সা.)-এর নেতৃত্বে সংঘটিত সব যুদ্ধে অংশ নেন। হুদাইবিয়ার দিন তিনি মহানবী (সা.)-কে পাহারা দেন।

 

সূত্র: কালের কন্ঠ

এই পোস্টটি যদি ভালো লেগে থাকে তাহলে ফেইসবুক পেজটি লাইক দিন এবং এই রকম আরো খবরের এলার্ট পেতে থাকুন

 আরো পড়তে পারেন:  

Loading...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *