ছবির উৎস, BANGLADESH POLICE
বাংলাদেশ পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদের সম্পত্তি জব্দের নির্দেশ দিয়েছে দেশটির একটি আদালত।
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা এক আবেদনের প্রেক্ষিতে মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ আস-শামস জগলুল হোসেন এ আদেশ দেন।
বিবিসি বাংলাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন কমিশনের আইনজীবী খুরশিদ আলম।
মি. আলম জানান, আদালতে অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তার পক্ষ থেকে লিখিত আবেদন করা হয়েছিল। আদালত আইন-কানুন দেখে নথি দেখে জব্দের নির্দেশ দিয়েছেন।
তার সমগ্র সম্পদ জব্দের আওতায় আসছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে দুদক আইনজীবী বলেন, মামলাটি এখন অনুসন্ধান পর্যায়ে রয়েছে। অনুসন্ধান পুরোপুরি শেষ হওয়ার আগে বলা যাবে না সব সম্পত্তি এর মধ্যে রয়েছে কি না।
“মোট ৮৩ টি দলিলের প্রোপার্টি, বিভিন্ন ব্যাংক অ্যাকাউন্ট রয়েছে এই তালিকায়। কক্সবাজারের একটি প্রোপার্টি রয়েছে”।
এটিকে বিশেষ কোনো অগ্রগতি হিসেবে না দেখে তদন্ত কাজের একটা অংশ হিসেবে দেখতেই আগ্রহী মি. আলম।
ছবির উৎস, Getty Images
সম্প্রতি বাংলাদেশ পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদ ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে অস্বাভাবিক সম্পদ অর্জনের অভিযোগ ওঠে।
বাংলাদেশের কয়েকটি পত্রিকায় এ সম্পর্কে প্রতিবেদনও প্রকাশ করা হয়।
তারই ধারাবাহিকতায় গত মাসে মি. আহমেদের সম্পদ অনুসন্ধানে কাজ শুরু করে দুদকের তিন সদস্যের একটি কমিটি।
সাবেক আইজিপি দুর্নীতি নিয়ে স্থানীয় পত্রিকায় করা প্রথম প্রতিবেদনটির শিরোনাম ছিল, ‘বেনজীরের ঘরে আলাদীনের চেরাগ’।
প্রতিবেদনে রাষ্ট্রীয় শুদ্ধাচার পুরস্কারপ্রাপ্ত পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ও র্যাবের সাবেক মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদের নানা অর্থ সম্পদের বিবরণ তুলে ধরা হয়েছিল।
এর মধ্যে রয়েছে, গোপালগঞ্জের সাহাপুর ইউনিয়নে সাভানা ইকো রিসোর্ট নামের এক অভিজাত ও দৃষ্টিনন্দন পর্যটনকেন্দ্র। প্রতিবেদনে বলা হয়, ঐ রিসোর্টে এক রাত থাকতে গেলে গুনতে হয় অন্তত ১৫ হাজার টাকা।
পুলিশের সাবেক এই প্রভাবশালী শীর্ষ কর্মকর্তা, তাঁর স্ত্রী ও দুই মেয়ের নামে দেশের বিভিন্ন এলাকায় তাঁদের নামে অন্তত ছয়টি কম্পানির খোঁজ পাওয়া গেছে। পাঁচটি প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগের পরিমাণ ৫০০ কোটি টাকার বেশি বলে ধারণা পাওয়া গেছে।
এছাড়া ঢাকার অভিজাত এলাকাগুলোতে রয়েছে বেনজীর আহমেদের দামি ফ্ল্যাট, বাড়ি আর ঢাকার কাছেই দামি এলাকায় বিঘার পর বিঘা জমি। দুই মেয়ের নামে বেস্ট হোল্ডিংস ও পাঁচতারা হোটেল লা মেরিডিয়ানের রয়েছে লক্ষাধিক শেয়ার রয়েছে বলেও ঐ প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
সেখানে বলা হয়, অথচ ৩৪ বছর সাত মাসের দীর্ঘ চাকরিজীবনে বেনজীর আহমেদ বেতন-ভাতা বাবদ মোট আয় করেছেন এক কোটি ৮৪ লাখ ৮৯ হাজার ২০০ টাকা। এর বাইরে পদবি অনুযায়ী পেয়েছেন আনুষঙ্গিক সুযোগ-সুবিধা।
পরবর্তীতে বেনজীর আহমেদ তার ফেসবুক পাতায় এসব অভিযোগ অস্বীকার করে একটি ভিডিওবার্তা প্রকাশ করেন।
সেই ভিডিওবার্তার শিরোনাম দেন ‘আমার কিছু কথা’।
সেখানে মি. আহমেদ বলেন, “সম্প্রতি পত্রিকান্তরে আমার এবং পরিবারের বিরুদ্ধে কিছু খুবই আপত্তিজনক, মানহানিকর, অসত্য এবং বিকৃত সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে।”
অবসর গ্রহণের দুই বছর পরে “আকস্মিক” এমন “একটি মানহানিকর, অসম্মানজনক, অসত্য সংবাদ” পরিবেশনের কারণ নিয়ে অবশ্য আলোচনা করতে চাননি তিনি।
সাবেক পুলিশ প্রধানের দাবি, তার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে, “তার মধ্যে ২৪টি তথ্য বা অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা বা কল্পনাপ্রসূত। দুইটি বিষয়কে সাতবার পুনরাবৃত্তি করা হয়েছে। এবং দুইটি তথ্যকে ভুল প্রেক্ষাপটে বিকৃতভাবে পরিবেশন করা হয়েছে। বাকি ১০টি অভিযোগ বা তথ্যকে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে শুধু তিলকে তাল নয়, তালগাছের ঝাঁড়সমেত ভুলভাবে উপস্থান করা হয়েছে।”
২০২২ সালের ৩০শে সেপ্টেম্বর অবসরে যান বেনজীর আহমেদ।
চাকরিজীবন থেকেই মি. আহমেদ নানা কারণে আলোচিত-সমালোচিত।
২০২১ সালে র্যাব ও তার ছয় কর্মকর্তার ওপর মানবাধিকার লংঘনের দায়ে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র।
যার অন্যতম বাহিনীটির সাবেক মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ।
তখন মার্কিন বিবৃতিতে বলা হয়, গুরুতর মানবাধিকার লংঘনে জড়িত থাকার জন্য বেনজির আহমেদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করার কথা ঘোষণা করেছে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর – যার ফলে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের অযোগ্য হবেন।