দুর্ভিক্ষের একেবারে দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছে যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজা। অবরুদ্ধ এ অঞ্চলের প্রতিটি মানুষ আগামী ৬ সপ্তাহের মধ্যে উচ্চমাত্রার খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার মুখোমুখি হবে। বৃহস্পতিবার জাতিসংঘের ক্ষুধা পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থার একটি প্রতিবেদনে ভয়াবহ এ শঙ্কার কথা বলা হয়েছে।
জাতিসংঘের মানবিক প্রধান মার্টিন গ্রিফিথস এক্সের একটি পোস্টে বলেন, ‘গাজায় প্রতিদিনের এসব ধ্বংসযজ্ঞ আর বঞ্চনায় জনগণের জন্য আরও ক্ষুধা, রোগ ও হতাশা নিয়ে আসবে।’ এএফপি।
গাজায় পঞ্চম স্কেলে খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার আশঙ্কা করে জাতিসংঘের খাদ্য নিরাপত্তা বিষয়ক সংস্থা আইপিসি জানিয়েছে, নতুন বছরের ৭ ফেব্রুয়ারির মধ্যে গাজা উপত্যকার সমগ্র জনসংখ্যা অর্থাৎ প্রায় ২২ লাখ মানুষ আরও খারাপ পর্যায়ে পৌঁছাবেন। উচ্চমাত্রার তীব্র অপুষ্টি ও অতিরিক্ত মৃত্যুহারের মুখোমুখি হয়ে ‘জরুরি’ অবস্থায় থাকবেন গাজার প্রায় ৫০ শতাংশ মানুষ। গাজায় চার পরিবারের মধ্যে একটি অর্থাৎ পাঁচ লাখেরও বেশি মানুষ পঞ্চম স্তরের বিপর্যয়কর পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেছে সংস্থাটি।
গাজার এমন ভয়ংকর পরিস্থিতিতেও হামলা অব্যাহত রেখেছে ইসরাইল। এ পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা ২০ হাজার ৫৭ জনে দাঁড়িয়েছে। অঞ্চলটিতে আহতের সংখ্যা ৫৩ হাজার ৩২০ জন। দক্ষিণ গাজার খান ইউনুসের পূর্বাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চলে বৃহস্পতিবার রাতভর হামলা চালিয়েছে ইসরাইলি বাহিনী। এ ছাড়া গাজার বুরেজি, মাঘরাজি ও নুসেইরাতের শরণার্থী শিবিরে হামলার ঘটনা ঘটেছে। গাজার উত্তরাঞ্চল ও জাবালিয়া শহর ও সেখানকার শরণার্থী শিবিরেও হামলা চালিয়েছে ইসরাইল। গাজায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক মুনির আল-বুরশ ইসরাইলি বাহিনীর হামলায় গুরুতর আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। দক্ষিণ গাজার রাফাহর উত্তরাঞ্চলে বৃহস্পতিবার রাতের হামলায় আহত হয়েছেন তিনি।
আলজাজিরার প্রতিবেদন অনুযায়ী, হামলার আগে ওই এলাকায় বোনের বাড়িতে ছিলেন মুনির। ইসরাইলের এদিনের হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন তার মেয়ে। পরিবারের অন্যান্য সদস্যরাও আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। এ ছাড়া আবাসিক ভবনে রাতের হামলায় অন্তত ছয়জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এখনও ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আছেন অনেকে।
গাজায় সংঘাত বন্ধ করাসহ আরও বেশি মানবিক সহায়তা পৌঁছানোর লক্ষ্যে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে জাতিসংঘ। অঞ্চলটিতে যুদ্ধবিরতির লক্ষ্যে ইতোমধ্যে একটি খসড়া প্রস্তুত করা হয়েছে। খসড়ায় বলা হয়েছে, ‘গাজায় শিগগির নিরাপদে ও বাধাহীনভাবে মানবিক ত্রাণ পৌঁছানোর উদ্যোগ নিতে হবে এবং এমন একটি পরিস্থিতি তৈরি করতে হবে, যাতে সব ধরনের আগ্রাসনের টেকসই অবসান ঘটে।’
জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে এ প্রস্তাবটি উত্থাপন করা হয়েছিল ৮ ডিসেম্বর। সে সময় যুক্তরাষ্ট্রের ভেটোতে প্রস্তাবটি পাশ করা সম্ভব হয়নি। পরবর্তী সময়ে এ প্রস্তাবের পক্ষে ভোট গ্রহণের তারিখ ৩ বার পেছানো হয়েছে। নিরাপত্তা পরিষদে শুক্রবার আবারও গাজায় যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবের পক্ষে-বিপক্ষে ভোট নেওয়ার কথা রয়েছে। এবার গাজায় যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে সমর্থন দিতে পারে যুক্তরাষ্ট্র। বৃহস্পতিবার জাতিসংঘে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত লিন্ডা টমাস-গ্রিনফিল্ড ওয়াশিংটনে সাংবাদিকদের বলেন, ‘খসড়া অনুযায়ী প্রস্তাবটি উত্থাপন করা হলে যুক্তরাষ্ট্র এতে সমর্থন করতে পারে।